সাতকানিয়ায় আওয়ামীলীগ সাতপাকে

0

দিলীপ তালুকদার/গোলাম সরওয়ার:: জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকী আরো প্রায় বছর দেড়েক বাকী। এরই মধ্যে দেশের সর্বত্র নির্বাচনী হাওয়া বইছে। ইতিমধ্যে নেতা, পাতি নেতা, হাফনেতা, চামচা নেতারা মাথাচড়া দিয়ে উঠেছে। চট্টগ্রামের সর্বত্র ব্যানার, ফ্যাষ্টুন, ব্যানারে ছেয়ে গেছে।

এলাকাবাসীকে বিভিন্ন দিবসের শুভেচ্ছা জানানোর উছিলায় আগাম নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন। আজকের সূর্যোদয় বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১৬টি নির্বাচনী আসনের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহন করেছে। ধারাবাহিক প্রতিবেদনে এবার চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের নির্বাচনী চালচিত্র তুলে ধরা হলো। এলাকার সাধারণ মানুষ ও দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে একাধিক প্রার্থীর মধ্যে কার গ্রহনযোগ্যতা বেশী তা তুলে ধরা হলো।

সাতকানিয়ার ১১টি ও লোহাগাড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১৫ আসনটি জামায়াত-শিবিরের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীই জয়ী হয়েছে বারবার। এমনকি ৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলায় যে ২টি আসন আওয়ামীলীগ পায়নি তার মধ্যে সাতকানিয়া আসন একটি। গতবার অনেকটা ফাঁকা মাঠে আসনটি নিজেদের দখলে নেয় আওয়ামী লীগ। কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি আওয়ামীলীগ হাতছাড়া করতে চায় না।

২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী জয়ী হন। এর আগে প্রতিটি নির্বাচনে হয় বিএনপি না হয় জামায়াতের প্রার্থী জয়লাভ করেন। আওয়ামী লীগের সামনে এখন আসনটি ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। আর বিএনপি ও জামাত চাচ্ছে আসনটি পুনরুদ্ধারের। অতীতে বিভিন্ন সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় জামায়াত-শিবির চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক অবরোধ করে দিনের পর দিন কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল।

আওয়ামী লীগ কৌশলগত কারণে আসনটিতে জয় চাওয়ার পাশাপাশি চায় না জামাত আবার মাথাচড়া দিয়ে উঠুক। অন্যদিকে জামাতের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা জানান, জোট হোক আর না হোক জামাত যে কোন নাম দিয়ে বা স্বতন্ত্রভাবে হলেও নির্বাচন করবে। এবং এ আসনটি পুনরুদ্ধার করার জন্য অনেক আগে থেকেই জামাত এখানে কাজ করছে। সেটা প্রকাশ্যে হোক আর অপ্রকাশ্যে হক।

নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ‘আমি এমপি হওয়ার পর এলাকায় ১৬শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। এ ছাড়া আল্লামা ফজলুল্লুাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেও এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেছি। নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে রয়েছে। আশা করছি, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাব।’

একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের একাধিক প্রার্থী মাঠে সক্রিয়। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন অন্তত ৫ জন, বিএনপিতে ২ জন। জামায়াতের দুই নেতা মনোনয়ন চান। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন : বর্তমান এমপি নেজামুদ্দিন নদভী, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, স্বাচিপের কেন্দ্রীয় নেতা ডাঃ আমম মিনহাজুর রহমান, ব্যবসায়ী আবদুল মোতালেব চৌধুরী ।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরা হচ্ছেন : দক্ষিণ জেলা বিএনপির অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, প্রচার সম্পাদক নাজমুল মোস্তফা আমিন, যুগ্ম সম্পাদক ও সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল গাফফার চৌধুরী। জামায়াত প্রাকাশ্যে না থাকলেও গোপনে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছে।

তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক দুই এমপি আনম সামশুল ইসলাম ও শাহজাহান চৌধুরী আলোচনায় রয়েছেন। জামায়াত নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দল না হলেও যে কোনো ফর্মে নির্বাচন করতে চায়। এরা প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও গোপনে সক্রিয় রয়েছে এলাকায়। সে ক্ষেত্রে বিএনপির সাথে অপ্রকাশ্য জোটগত বা স্বতন্ত্রভাবে জামাত এ আসনে নির্বাচন করতে মরিয়া। বিএনপির নেতা কর্মীরা এমনটিই মনে করেন। বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও এলডিপির প্রভাব বলয়ের মধ্যে এ আসনে বিএনপি শক্ত ভিত গড়তে পারেনি। জামায়াত যদি বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন করে তাহলে জামায়াত আসনটি দাবি করবে বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে।

যুদ্ধাপরাধ মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা হওয়ার পর ব্যাপক ভাংচুর হয় সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও বাঁশখালী এলাকায়। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক লম্বা সময়ের জন্য বন্ধ থাকে। ১৯৯১ সালে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচন করেন তৎকালীন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। তিনি জামায়াতের শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে হেরে যান। ১৯৯৬ সালে আবার শাহজাহান চৌধুরীকে হারিয়ে জয়লাভ করেন বিএনপির কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ।

আওয়ামী লীগের মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী তৃতীয় হন। ২০০১ সালে কর্নেল অলি ও শাহজাহান চৌধুরী দু’জনই চারদলীয় জোটের মনোনয়ন চেয়ে বসেন। শেষ পর্যন্ত দু’জনই ভোটের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। কর্নেল অলি ও আওয়ামী লীগের জাফর আহমদ চৌধুরীকে হারিয়ে শেষ হাসি হাসেন শাহজাহান চৌধুরী। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কর্নেল অলিকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নেন জামায়াতের আনম সামশুল ইসলাম।

রাজপথের রাজনীতিক হিসেবে খ্যাত, তৃণমূলের রাজনীতি থেকে উঠে আসা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, রাজপথ কাপানো মুজিব আদর্শের লড়াকু সৈনিক আমিনুল ইসলাম আমীন নিজ যোগ্যতাবলে আজ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা। যখনই সুযোগ এসেছে এলাকার জনমানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। এলাকার লোকজনের ধারনা এবার তাদের এ প্রিয় নেতাই দলীয় মনোনয়ন পাবেন। সাতকানিয়ার এই জামাত অধ্যুষিত এলাকায় আওয়ামী রাজনীতি ধরে রাখতে হলে আমীনের বিকল্প নাই।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, গত দুটি নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে আওয়ামীলীগ যে ভুল করেছে তা আর করবে না। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দলের নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকব। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা প্রার্থী হিসেবে আমাকেই দেখতে চান। প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূলের আশা-আখাংকার প্রতিফলন ঘটলে আশা করি আমিই মনোনয়ন পাব।’

স্বাচিপের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. আমম মিনহাজুর রহমানও আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য উৎগ্রীব হয়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘এলাকার নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে আছি। ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে আছি। আমি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেন, ‘এর আগে দু’বার বিএনপির নমিনেশন চেয়েছিলাম। কিন্তু নানা কারণে পাইনি। আশা করি এবার পাব।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.