সুস্থ ভাবে কাজ করার নিশ্চয়তা চাই : শ্রমজীবি মানুষ

0

বিশেষ প্রতিনিধি ::  পহেলা মে, বিশ্বের শ্রমজীবি মানুষের দিবস। বাংলাদেশে মে দিবস পালিত হয় প্রতি বছর । এবারের মে দিবসের অঙ্গীকার সুস্থ ভাবে কাজ করার নিশ্চয়তা চাই। কেউ খালি গায়ে মাঠে ‍কাজ করেন আবার কেউ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে কাজ করেন। কিন্তু যেভাবেই কাজ করুন না প্রতিষ্ঠানের মালিক না হলে তিনি শ্রমিক হিসেবে গণ্য হন। প্রতি বছর মে মাসের প্রথম দিনটি পালন করা হয় শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিবস হিসেবে।

যা শ্রমিক দিবস বা মে দিবস নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। বছরের এ দিন শ্রমিকরা শ্রেণি বৈষম্যের অবসানের লক্ষ্যে সংকল্পবদ্ধ হন। অধিকার আদায়ে শ্রমিকরা রাজপথে নেমে আসেন। তুলে ধরেন নিজেদের বৈষম্য ও চাহিদার কথা। কিন্তু কারখানায় নিয়োজিত ব্যাপক শ্রমিক প্রাণহানীর ঘটনায় আমাদের শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বার বার দূর্ঘটনা ঘটছে, শ্রমিকের প্রাণ যাচ্ছে। শোক প্রকাশ, শোক সভা, আর তদন্ত কমিটি বক্তব্য, বিবৃতি আর সেই সাথে রাজনীতি সমান তালেই চলছে। অপরাধী আড়ালে থেকে যাচ্ছে।

মে দিবসের সূত্রপাত হয় ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের পহেলা মে। সেদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের সামনে দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে হাজারো শ্রমিক জড়ো হয়েছিলেন। পুলিশ হে মার্কেটের শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে প্রায় ১০-১২ জন নিরীহ শ্রমিক প্রাণ হারান।

                       শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের দিবস । ফাইল ছবি

তিন বছর পর ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগো ট্র্যাজেডিকে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করার ঘোষণা দেয়া হয়। সেই থেকে আজ অবধি শ্রমিকের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের সংগ্রামী চেতনার অমিত তেজ সঞ্চারের দিন হিসেবে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও দিনটি সরকারি ছুটি ও বিশেষভাবে পালন করে থাকে। এবার ১৩১তম দিবস হিসেবে বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসী পালন করবে। এ বছর মে দিবসে বাংলাদেশের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক গড়ব দেশ; এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন।
দিবসটি উপলক্ষে বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
সকাল সাড়ে ৭ টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হবে। এতে সরকার, মালিক, শ্রমিকসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেবেন। শোভাযাত্রাটি দৈনিক বাংলার মোড়ের শ্রম ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর পাশ দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হবে।
ঐতিহাসিক ঘটনাসমৃদ্ধ মহান মে দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ১ মে এবং ১১ মে কর্মসূচি গ্রহণ করছে।
মে দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে এবছর সরকার প্রথমবারের মতো শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের শিক্ষা সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের তহবিল থেকে আসছে ১১ মে শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের মধ্যে আর্থিক সহায়তা দেবেন।

দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে শ্রম ভবন, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক দ্বীপ ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লা-কার্ড দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবস উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, জাতীয় শ্রমিক জোট, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টি, সিপিবি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, জাসদ, গণফোরামসহ পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন আলাদা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.