সৎ পথে থাকলে সাফল্য আসবেই

0
আব্দুল মাতলুব আহমাদ, ব্যবসা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে এক পরিচিত নাম। ১৯৫২ সালে ঢাকাতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। অর্জন করেন বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মান ও মাস্টার্স ডিগ্রি। পড়াশোনা শেষ করে দেশ সেবার ব্রত নিয়ে ১৯৮১ সালে প্রথমেই মনোনিবেশ করেন পরিবহন ব্যবসায়। এরপরেই ভারতের টাটা কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আরো বড় পরিসরে শুরু এ ব্যবসা। এরপর শুধু সামনের দিকে এগিয়ে চলা। গঠন করেন নিটল-নিলয় গ্রুপ, দায়িত্ব পালন করছেন এর চেয়ারম্যান হিসেবে। বর্তমানে আদি ব্যবসা নিটল মটরস লিমিটেডের সঙ্গে গড়ে তুলেছেন হাতে গনা ১৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। নিজেকে সম্পৃক্ত করেন দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এফবিসিসিআইএর সঙ্গে। স্বপ্ন দেখেন দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের কাছে নিজেকে তুলে ধরার। নিজ উদ্যোগে গঠন করেন ইন্দো-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ। এ ছাড়া বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বারও গঠন করেন তিনি। বিশ্বের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কাজ করার জন্য আরো প্রস্তুত হওয়ার পরিকল্পনা করেন। এরই অংশ বিশেষ তিনি ২০১৫ সালের ১ জুনে এফবিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রায় চার কোটি ব্যবসায়ীর স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন।  জীবনে সাফল্যের ব্যাপারে মহাখালীতে নিটল নিলয় সেন্টারে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে যে কোনো মানুষ যদি কাজের মধ্যে প্রচুর সচেতন হয়, সৎ পথে থাকে, তবে সাফল্য আসবেই। আমার জীবনেও সেটা হয়েছে। আমার নীতি ছিল যেভাবে হোক, সৎ পথে থেকে টাকা রোজগার করা। তাতে কষ্ট হয়েছে। কারণ বিভিন্ন সময়ে লোভ হয় তাড়াতাড়ি আয় করার। কিন্তু তা সংবরণ করতে হয়েছে। এতে আনন্দও পাওয়া যায়। এ সময় তিনি ব্যবসায়ীদের জন্য করণীয় ও নিজে আরো নতুন কিছু করার পরিকল্পনা, নতুন প্রজন্মকে নতুন ব্যবসা ও দেশের উন্নয়নেরও কথা জানান। আরো বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন রূপ দিয়েছেন এ দেশকে। তাই উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবেন তিনি। এতে সবাই শিল্প গড়তে পারবেন।
কর দিয়েই ব্যবসা: দেড় বছর আগে ফেডারেশনের দায়িত্ব নিয়েই তিনি দেশের তথা সরকারের রাজস্ববান্ধব কাজে সহযোগিতার হাত বাড়ান। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকারের নতুন স্লোগান হচ্ছে-পে-ট্যাক্স অ্যান্ড রিলাক্স। মানে মানুষ আগে কর দিত না। বা কম দেয়ার জন্য অনেক কায়দা করত। সরকার এখন তা মানবে না। আমরা যারা দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত আমাদের চিন্তাধারা বদলাতে হবে। আমাদের দেশকে আমাদেরই গড়তে হবে। অন্যরা গড়ে দিয়ে যাবে না। আমরা ভ্যাট, কর না দিলে উড়াল সেতু, পাতাল সেতু হবে কোথা থেকে। তাই সরকারের মতো ব্যবসায়ীদেরও অনেক দায়িত্বশীল হতে হবে।
নতুন প্রজন্মকে নতুন উদ্ভাবনের আহ্বান: একটা মানুষ যখন ব্যবসা শুরু করে তখন নানা টানাপড়েনে পড়তে হয়। তাই ব্যবসায়ীদের সব অপশন ঠিক রেখে আসতে হবে। অর্থাৎ কখন কি কাজ করতে একান্ত সাক্ষাৎকারে নিটল-নিলয় গ্রুপ চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ : সৎ পথে থাকলে সাফল্য আসবেইহবে সেটা দাতের জানতে হবে। যত রাইট চয়েস তত সাকসেস। ভালো শিক্ষা নিয়ে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ করতে হবে। নতুন নতুন উদ্ভাবন ও পরিকল্পনা আনতে হবে। এটার ওপরই সাকসেস রেট নির্ভর করবে। তাই নতুন প্রজন্মকে বলব সনাতনের পথ থেকে বের হয়ে নতুন কিছু করার দিকে খেয়াল আহ্বান জানান তিনি।
টাটা গাড়ির ব্যবসাই অন্যতম: মাতলুব আহমাদ বলেন, আমার প্রধান কোম্পানি হচ্ছে টাটা গাড়ির সঙ্গে যৌথ ব্যবসা। এটাকে কেন্দ্র করে গাড়ি আমদানি, অ্যাসেম্বিলিং, সার্ভিস, এমনকি রোডে চলার যে সিস্টেম সবই যুক্ত। সিস্টেম ও  নিয়ম মেনেই তা করা হচ্ছে। টাটা গাড়ির ব্যবসাই আমার অন্যতম। বাকি অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে সাইজে ছোট, আয়ও কম। বর্তমানে নিটল নিলয় গ্রুপে প্রায় চার হাজার লোক কর্মরত আছেন।
তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। দেখভাল করার জন্য হিউম্যান রিসোর্স টিম রয়েছে। সবার বেতন যাতে সময় মতো পায়, ইনক্রিমেন্ট পায় তা দেখা হয়। এতে সবার মধ্যে জব স্যাটিসফেকশন থাকে।
হাহাকার কমাতে বাড়ির ব্যবস্থা: গাড়ির সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ার পরও তিনি এবার মাথার গোঁজার ঠাঁইয়ের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। বলেন, অনেকের টাকা আছে কাজে লাগাতে পারছেন না। বাংলাদেশে প্রায় ২৫ হাজার আবাসস্থলের প্রয়োজন। তাদের হাহাকার কমাতেই তাই গাড়ির মতো বাড়ি দেয়ার জন্য নতুন কোম্পানি গঠন করা হচ্ছে।
মানুষের বাসস্থান করা হবে। নিটল আয়াত প্রপার্টিজ লিমিটেড নামে এ কোম্পানির মাধ্যমে যে কেউ চাইলেই পাবেন বাড়ি। বছরের পর বছর ঘুরতে হবে না। রেডি ফ্লাট থাকবে। সকালে চাইলেই বিকেলে পাওয়া যাবে বাড়ি। ২০ থেকে ২৫ ভাগ আমরা জনগণের কাছে তুলে দিব বাড়ি। ছোট বড়, লাক্সারি সব ধরনের বাড়ি থাকবে। যা যে ডিমান্ড তাই দেয়া হবে। অতি শিগগিরই এ কোম্পানির উদ্বোধন করা হবে। তাতে সব কিছু প্রকাশ করা হবে।
সিল্ক শিল্পে বিনিয়োগের পরিকল্পনা: বিভিন্ন জায়গায় গুরুত্ব বুঝে তিনি গড়ে তোলেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তাই তো উত্তরবঙ্গের খেটে খাওয়া কৃষকের কথা বিবেচনা করে তিনি রাজশাহীতে গড়ে তুলেছেন হিউম্যান হলার কোম্পানি। সেটা ভালোই চলছে। উৎপাদন ক্যাপাসিটির চেয়েও ভালো। রাজশাহী হচ্ছে শিল্পের জন্য খুবই সুইটেবল। তাই সিল্কভিত্তিক শিল্প গড়ারও পরিকল্পনা আছে। এখানে শিল্প করলে মানুষ লাভবান হবে। বলেন, ফেডারেশন থেকে সিল্ক শিল্পের উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। ৫টা স্টেজে করা করা হচ্ছে। আমিও শিল্ক শিল্পে বিনিয়োগ করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহী।
ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা: ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগে তিনি বলেছিলেন অনেক কথা। তাই তো দায়িত্ব নেয়ার শুরুতেই তা রক্ষা করার চেষ্টা করেন। পেরেছেন তিনি। বলেন, আগে ব্যাংকের সুদ বেশি নেয়া হলেও দায়িত্ব নেয়ার পর বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে তা সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে পেরেছি। তবে এসএমই খাতে এখনো ১২ থেকে ১৪ শতাংশ সুদ নেয়া হচ্ছে। তাই বাকি সময়ে ওই খাতেও ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার জন্য কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া আগে থেকে চলে আসা এফবিসিসিআইএর নেতা নির্বাচনে অর্থাৎ সভাপতি হওয়ার রেওয়াজের পরিবর্তন করতেও চেয়েছিলেন তিনি। তা বাস্তবায়নে কাজও করছেন তিনি। জানান অলরেডি কমিটি গঠন করেছে সরকার।
দায়িত্ব নেয়ার পর এ পর্যন্ত যে সব কাজ করা হয়েছে তাতে ফেডারেশন সবার কাছে তুলে ধরার মতো পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে। এর কারণ হিসেবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর পরই কখনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা কখনো অন্য শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন দেশ ঘুরে ঘুরে এদেশে যে শিল্প ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজমান সে বার্তা পৌছে দেয়া হচ্ছে।
ভ্যাট, ট্যাক্স ও ডিউটি অনলাইনে আনা: ব্যবসায়ীদের শীর্ষ নেতা আরো বলেন, ফেডারেশনে আরো হয়তো ৬ মাস কাজ করার সুযোগ পাব। বাকি সময়ে আমার প্রধান কাজ হবে ভ্যাট অনলাইন, ট্যাক্স অনলাইন ও ডিউটি (শুল্ক) অনলাইনে আনা। এ জন্য কাজও করা হচ্ছে। এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের যাতে সরাসরি দেখা না হয় সে জন্যই এ উদ্যোগ। এতে কমবে হয়রানি, কাজে ফিরে আসবে স্বচ্ছতা।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.