চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগে বিভক্তি !!

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে হাল ধরেন দলের প্রবীন নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন সমন্বিতভাবে নগরীতে তৃনমুলে দলকে সুসংগঠিত করতে প্রচেষ্টা চালান। একাধিক বর্ধিত সভা ও দলের বিভিন্ন সভা অনুষ্ঠিত হয় দুজনের নেতৃত্বে।

বিগত জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নগরীর ৪ টি নির্বাচনি এলাকায় ব্যাপক ভাবে গনসংযোগ, পথসভা ও সমাবেশ করে দলের ঐক্যের জাানান দেন তারা। দলের নেতাদের মধ্যে বিরোধ ও দুরত্ব গুছিয়ে দলের প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান গ্রহন করেন দুই নেতা। ফলশ্রুতিতে নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা আসনে এম.এ লতিফ, ডবলমুরিং-পাহাড়তলী আসনে ডা. আফসারুল আমীন ও চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসনে মহাজোটের প্রার্থী মাঈনুদ্দিন খান বাদল টানা জয়লাভ করতে সক্ষম হন। সবচেয়ে আলোচিত বিজয়টি ছিল নগরীর গুরুত্বপুর্ন আসন কোতোয়ালী। এ আসনে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে জয়লাভ করতে নগর আওয়ামী লীগ একযোগে কাজ করেন।

যে কারনে চট্টগ্রাম মহানগর থেকে মহিউদ্দিন পুত্র নওফেলকে সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। নির্বাচন উত্তর বিভিন্ন দলীয় কর্মসুচীতেও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা গেলেও ভেতরে ভেতরে চলছে ফের বিভাজনের রাজনীতি। শুরুতে বিষয়টি কেউ আমলে না নিলেও সম্প্রতি বেরিয়ে এসেছে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী ও নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মহিউদ্দিনের মুখে।

আগামী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করে বোম ফাঁটিয়েছেন তিনি। সেই লক্ষ্যে তিনি নিজের সংগঠনকে গোছানোর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে রাজনৈতিক যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে জানান। গত ১ মার্চ অনুসারী নেতাকর্মীদের একটি বহর নিয়ে তিনি টুঙ্গিপাড়া যান। এ সময় টুঙ্গিপাড়া যাওয়া প্রসঙ্গে হাসিনা মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন,’ স্বাধীনতার মাসের প্রথম বিদসে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কবরের ধুলিকণা ছুঁয়ে এই মাতৃভুমিকে সেবা দেয়ার অঙ্গীকার করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের স্বপ্ন পুরণের বাতিঘর। এর আগেও একবার নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি টুঙ্গিপাড়ায় গেছেন বলে উল্লেখ করেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করার আগ্রহ আছে বলে জানান। তিনি বলেন,’ যে কোন রাজনীতিকের ইচ্ছা, আকাঙ্খা থকে। একজন রাজনীতিক হিসেবে তারও ইচ্ছা আছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর। যদি তিনি মনোনয়ন দেন, তবে নির্বাচন করার জন্য সব ধরনের সাংগঠনিক এবং মানসিক প্রস্তুতি রয়েছে।

তার মতে,’ জনগনের সাথে আপনার ভাইয়ের (মহিউদ্দিন চৌধুরী) সেই হৃদ্যতা, সম্পৃক্ততা, জনসেবা ধরে রাখতে চাই। আজীবন জনগনের পাশে থাকতে চাই। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর আগেও রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলাম মৃত্যুর পর আরও বেশি সক্রিয় হয়েছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটি আছে। তারা সক্রিয় আছে। তাছাড়া প্রয়াত জননেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরাও তার সাথে আছেন বলে উল্লেখ করেন’।

উল্লেখ্য ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বর্তমান সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন নির্বাচিত হন। ৬ মে মেয়র হিসেবে শপথ নেন। ২৬ জুলাই দায়িত্ব গ্রহন করেন। একদিকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ব্যরিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের শিক্ষা উপমন্ত্রীর পদ প্রাপ্তী ও অন্যদিকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনের মেয়র নির্বাচনের আকঙ্খাকে সামনে রেখে নগরীর ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে বিভাজন সৃষ্ঠি হচ্ছে। স্পষ্ট দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে গেছে নগর আওয়ামী লীগ।

এর মধ্যে একধারা আছে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারন সম্পাদক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে। অপর ধারার নেতৃত্বে আছেন মহিউদ্দিন পুত্র ব্যারিষ্টার নওফেল ও হাসিনা মহিউদ্দিন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বাকী বছর খানেক থাকলেও ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই ধারা। এ প্রসঙ্গে দলের দায়িত্বশীল একজন প্রবীন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,’ আওয়ামী লীগ বড় দল। এখানে নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব অতীতে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।

কিন্তু দল থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেন সবাই তার পক্ষে মাঠে নামতে বাধ্য হয়’। দলের বিভাজন নগরীর উন্নয়নে কোন প্রভাব ফেলবে কি না জানতে চাইলে এই নেতা বলেন,’ মোটেও না। উন্নয়ন তার নিজস্ব গতিতে চলছে, চলবে। কারন উন্নয়ন কর্মকান্ড তদারকি করা হচ্ছে কেন্দ্র থেকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই উন্নয়ন ও অগ্রগতির খবর রাখেন’।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.