লাগামহীন পেঁয়াজের দাম

0

সিটিনিউজ ডেস্ক :: রাজধানীর প্রায় সব খুচরা ও পাইকারি বাজারে বেড়েই চলছে পেঁয়াজের দাম।

আমদানি মূল্য বেশি ও বন্যায় সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে মাসের ব্যবধানে নিত্যদিনের পণ্যটির দাম বেড়েছে দুই থেকে আড়াই গুণ।

৩০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়।

রাজধানীর কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সোমবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৫০-৫৫ টাকা।

গত মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

ক্রেতাদের অভিযোগ, কিছু মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা কৌশলে দেশীয় পেঁয়াজ মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছেন।

এক মাস আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল মাত্র ৩০ টাকা। সেই পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়।

অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

খুচরা বিক্রেতা মিজান জানান, আমরা শ্যামবাজার থেকে পাইকারি দরে পেঁয়াজ এনে খুচরায় বিক্রি করি। গত সপ্তাহে শ্যামবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়।

গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। সব খরচ ধরে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম দাঁড়িয়েছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। আজ দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা করে।

আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৫৫ টাকায়।

এ দিকে সরকারি বিপণনকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রোববার বাজারদরের যে তথ্য দিয়েছে, তাতে দেখা যায় প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের দর ৬০ থেকে ৬৫ টাকা।

এ দিকে বিভিন্ন অজুহাতে কৃত্রিমভাবে পেঁয়াজের সংকট তৈরি করে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়েছে বলে দাবি করেছে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি।

সংকট দূর করতে অতিদ্রুত ভারতের বিকল্প রফতানিকারক দেশ নেপাল, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানির পরামর্শ দিয়েছে সংগঠনটি।

ক্যাব জানায়, পেঁয়াজের সংকট ব্যবসায়ীদের একটি টালবাহানা। এটা মানুষের পকেট কাটার একটি পাঁয়তারা। আর এ সংকট সমাধানে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই।

পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে দ্রুত আমদানির ব্যবস্থা করা, রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবিকে কাজে লাগানো কোনোটাই করা হচ্ছে না। বরং টিসিবিকে একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে রেখে দেয়া হয়েছে।

এতে করে রমজান, ঈদ ও পূজাকে সামনে রেখে এক শ্রেণির মৌসুমি ব্যবসায়ীর আবির্ভাব ঘটে। তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বৃদ্ধিতে তৎপর থাকেন।

সংগঠনটির মতে, পেঁয়াজ মজুদ করে সংকট তৈরি করা হয়েছে। ১০০-১৫০ শতাংশ পর্যন্ত লাভে বিক্রি করা হচ্ছে।

ভারতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির অজুহাত তুললেও বর্তমানে মজুদ পেঁয়াজগুলো ৩-৬ মাস আগে আমদানি করা।

পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কাটলেও সরকার আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের যথাযথ নজরদারি করেনি।

অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীদের দেখানো পথ অনুসরণ করে খুচরা ব্যবসায়ীরাও বেপরোয়াভাবে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। দেখার জন্য বাজারেও কেউ নেই।

তবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ইতোমধ্যে বেশকিছু ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানি করেছেন। সেগুলো অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে চলে আসবে। তখন পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এবার চাহিদার তুলনায় ৪ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে। এসব পেঁয়াজের অধিকাংশ আমদানি করা হয় ভারত থেকে।

কিন্তু এবার ভারতে অতি বন্যার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন কমেছে। ফলে ভারতেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তাই হঠাৎ করে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের ব্যবসায়ীরা মিশরসহ অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যে বাজারে পেঁয়াজ চলে আসবে তখন দামও কমে যাবে।

আল-আমিন নামের এক ক্রেতা বলেন, একটি পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে তা আর সহজে কমে না। সরবরাহ কম বলে দাম বাড়ায় কিন্তু বাজারে কোনো পণ্যের সংকট থাকে না।

সব দোকানে পেঁয়াজ রয়েছে। তাহলে সংকট কই। এটি কিছু ব্যবসায়ীর কারসাজি। তারা প্রতিবছরই এভাবে সাধারণ ক্রেতার পকেট কেটে অনেকে মুনাফা করেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.