সীতাকুণ্ডে তৃণমূলের পছন্দ বাকের ভূঁইয়া

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃঃ সীতাকুণ্ড উপজেলার গোলাবাড়িয়া গ্রামের সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান আব্দুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়া। ১৯৬২ সালের জুলাই মাসে তাঁর জন্ম। পিতা-মরহুম ফররুখ আহমেদ ভুঁইয়া ও মাতা মরহুমা সৈয়দা বদরুন নেছা বেগম। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষে সীতাকুণ্ড আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করেন।

সীতাকুণ্ড ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি ও রাঙ্গুনিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাশ করে ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি তিন পুত্র সন্তানের জনক। তাদের মধ্যে ভুঁইয়া সামী আল মুজতবা শুভ সীতাকুন্ড উপজেলা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে ইতালী প্রবাসী। ভুঁইয়া সামী আল সামাদ সীমান্তও সীতাকুন্ড উপজেলা ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক। তিনি আমেরিকা প্রবাসী। ছোট ছেলে ভুঁইয়া সামী আল আহাদ প্রান্ত সীতাকুণ্ড সরকারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শেনীতে অধ্যায়নরত।

আব্দুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়া পেশাগত ভাবে একজন ব্যবসায়ী। সীতাকুণ্ড সদরে অবস্থিত সীতাকুন্ড শপিং সেন্টার এর স্বত্বাধীকারী, এ.কে.এম ট্রান্সপোর্ট, এ.পি ট্রেডার্স, নিজামপুর ডেইরী এন্ড এগ্রিকালচারাল ফার্ম লি: এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও মিউচ্যুয়াল সেভিংস কো-অপারেটিভ লি: এর চেয়ারম্যান।

১৯৭৮ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ১৯৭৯ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সমাজকল্যান সম্পাদক হন। ১৯৮০ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর সীতাকুন্ড ডিগ্রী কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নাট্য সম্পাদক পদে তৎকালীন জাসদ ছাত্রলীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

১৯৮১ সালে উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালের ১১ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয়বার, ২০০৩ইং সালে তৃতীয়বার ও ২০১২ইং সালে চতুর্থবার একই পদে নির্বাচিত হন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অত্যন্ত প্রিয় নেতা আব্দুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়া বিগত ২৫ বছর যাবত অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

২০০৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে অবাধ সুষ্ঠ ও নিবপেক্ষ এ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থীকে ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন তিনি। তিনি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সফল ভাবে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ১৯৮৩-৮৪ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও ১৯৯৫-৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আন্দোলনে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেন। জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসুচী পালন করেছেন অত্যন্ত আন্তরিকভাবে। আন্দোলন- সংগ্রাম পরিচালনা করতে গিয়ে অসংখ্য মামলার আসামী ও পুলিশী হয়রানীর শিকার হন। ওয়ান ইলেভেনের সময় যৌথ বাহিনীর হয়রানীর শিকার হন।

২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার শিকারও হন তিনি। তার ব্যক্তিগত গাড়ি ও তার মার্কেট সীতাকুণ্ড শপিং সেন্টারে ভাংচুর ও তান্ডব চালানো হয়। তিনি বিবাহ করেন সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্টাতা সভাপতি ও ভাষা সৈনিক মরহুম মোদাচ্ছের আহম্মদ এম এন এর মেয়েকে। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কাণ্ডারী আব্দুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়ার স্ত্রী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও সীতাকুন্ড উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী। তিনি পেশায় শিক্ষিকা।

মনে প্রানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক তিনি। জেল-জুলুম হুলিয়া কোন কিছুতেই আদর্শচ্যুত হননি। পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আব্দুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়ার দাদা মরহুম মোখলেছুর রহমান ভুঁইয়া অভিভক্ত ভারতে পশ্চিম বঙ্গের দার্জেলিং এর বন বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। পিতা মরহুম ফররুখ আহমেদ ভুঁইয়া চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের একজন প্রভাবশালী জমিদার।

এলাকার শিক্ষা বিস্তারে রয়েছে তাঁর উজ্জ্বল ভুমিকা। সীতাকুণ্ড ডিগ্রী কলেজ, সীতাকুণ্ড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গোলাবাড়িয়া ফোরকানীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় অন্যতম ভুমিকা রাখেন তিনি। তার মামা মরহুম সৈয়দ শামসুদ্দোহা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রবীণ অধ্যাপক। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুসদের ডীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তার ফুফা অধ্যাপক নাজের আহম্মেদ কলিকাতা ইসলামিয়া কলেজের শিক্ষক ছিলেন। তিনি জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন প্রিয় শিক্ষক ছিলেন, যা বঙ্গবন্ধুর আত্বজীবনি গ্রন্থের ৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়া শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে সীতাকুন্ড উপজেলাধীন ভাটেরখীল এলাকায় স্ব-উদ্যোগে জমি দান করে ভাটেরখীল উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৮ সাল হইতে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে আসছেন। নিজ গ্রাম গোলাবাড়ি নিজস্ব ভূমিতে একটি ফোরকানিয়া মাদ্রাসাও পরিচালনা করে আসছেন তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গরীব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করে আসছেন।

অনেক গরীব ছাত্র-ছাত্রীর পড়ালেখার খরচ প্রদান করে আসছেন তিনি। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত তিনি। এর মধ্যে সীতাকুণ্ড সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সধারন সম্পাদক, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের আজীবন সদস্য, গোলাবাড়িয়া ক্লাব, বর্ণালী ক্লাব, ভাতৃসংঘসহ অসংখ্য ক্লাব ও সংগঠনের সাথে জড়িত।

দু:স্থ রোগীদের বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ১৯৯৮ সালের ১ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা করেন ’গোলাবাড়িয়া পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র’। গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণে সহযোগিতা, আগুনে পুড়ে গেলে গৃহ নির্মাণ ও বাসযোগ্য ঘর মেরামতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে পবিত্র রমজানে ইফতার সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম এবং ঈদে দরিদ্রদের মাঝে শাড়ি-লুঙ্গী বিতরণ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে অসংখ্য উন্নয়ন সীতাকুণ্ডে করেছেন তিনি। এমন কোন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড নেই যেখানে তিনি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেননি।

আজন্মকাল বঙ্গবন্ধু’র আদর্শের অনুসারী ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়া আগামী নির্বাচনে এমপি পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,’ দলের সভানেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা ও দলের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন। মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে এবং যে সব শর্ত উল্লেখ করেছেন সেগুলো যদি সঠিক থাকে, সে মানদন্ডে মনোনয়ন দেওয়া হয় তবে আমি মনে করি সীতাকুণ্ড আসনে আমার বিকল্প নেই।

সীতাকুণ্ডে ১টি পৌরসভা, ৯টি ইউনিয়ন ও ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। এ আসনে ভোটার প্রায় ৩ লক্ষ। তৃণমূলে আমার অবস্থান খুব ভাল। উপজেলা আওয়ামী লীগের ভীত অনেক শক্তিশালী। দলকে এ পর্যায়ে আনতে আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। তিনি বলেন,’ মনোনয়নের প্রশ্নে, পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকতে পারে। তবে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় নেতাকর্মীরা কাজ করবে।

মাঠপর্যায়ে ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আন্তরিক থাকেন তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়বে। তিনি বলেন,’ নির্বাচনের পুর্বে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে যে কোন্দল ও মেরুকরন হয় তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ভোটের সময় সবাই নৌকার পক্ষে এক হয়ে যায়। এবারও মনোনয়ন চুড়ান্ত হওয়ার পর সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবেন। এ বিশ্বাস আমার আছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.