আনোয়ারায় বন্দুকযুদ্ধে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নাছির নিহত

0

আনোয়ারা প্রতিনিধি:: আনোয়ারায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মো.নাছির উদ্দিন ওরফে মামুন (৩৮) নামে এক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার মধ্যরাতে উপজেলার বারশত ইউনিয়নের দুধকুমড়া জৈদ্দ্যারহাট সড়কের পাশে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় দুটি দেশীয় তৈরি এলজি,৫ রাউন্ড কার্তুজ ও দুটি চোরা উদ্ধার করা হয়। নাছির চট্টগ্রামের জেলার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিনি উপজেলার বারশত ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের হাজী কালা মিয়ার পুত্র।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার দুপুরে উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের হলিদেরপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নাছিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্য মতে বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ওই দিন রাত দুইটার সময় উপজেলার দুধকুমড়া গ্রামের জৈদ্দ্যারহাট সড়কের পাশে বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছলে আগে থেকে ওতপেতে থাকা নাছিরের ১০/১২ জন সহযোগী পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশও তাদের ওপর গুলি ছুঁড়েন। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিতে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নাছিরসহ দুই পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। দ্রুত তাদেরকে উদ্ধার করে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নাছিরকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে নিহত নাছিরের মৃতদেহ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আহত দুই পুলিশ সদস্য এএসআই পলাশ ও কনস্টেবল আকিবুর রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দামপাড়া পুলিশ লাইন হাসপাতালে রেফার করা হয়।
জানা যায়,দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নাছির দীর্ঘদিন ধরে আনোয়ারাসহ নগরের বিভিন্ন এলাকায় নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। তার বিরুদ্ধে খুন,ছিনতাই,অস্ত্র,চাঁদাবাজি,চুরি,ডাকাতি,গণধর্ষণ ও অপহরণসহ সবমিলিয়ে বিভিন্ন থানায় ১৯টি মামলা রয়েছে। তারমধ্যে আনোয়ারা থানায় ৪টি,কর্ণফুলীতে ১টি,কোতোয়ালীতে ২টি,হালিশহরে ৩টি,খুলশীতে ৩টি,ডবলমুরিংয়ে ২টি,বাকলিয়ায় ২টি,পাঁচলাইশে ১টি ও কক্সবাজার থানায় ১টি মামলা রয়েছে। নয় মাস আগে সে জেল থেকে পালিয়ে আসে। এ ঘটনায় তিন পুলিশকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এরপর থেকে পুলিশ তাকে হণ্যে হয়ে খুঁজলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল দুর্ধর্ষ নাছির। অবশেষে গত শুক্রবার দুপুরে সন্ত্রাসী নাছির আনোয়ারা থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়লে এলাকায় স্বস্তি ফিরে আসে। এলাকায় নাছির গাড়ি চোর হিসেবে পরিচিত।
পতেঙ্গার খেজুরতলা বেড়িবাঁধ এলাকার ব্যবসায়ী মো.ইউনুছ বলেন,২০১৬ সালের ৪ আগষ্ট শাহ আমানত সেতুর টোলপ্লাজার কাছেই আমাকে গুলি করে মোটর সাইকেলসহ একলক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেয় নাছির। এভাবে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী নাছির বিভিন্ন এলাকার অনেক গাড়ি ছিনতাই করে নিয়েছে বলেও তিনি জানান।
বোয়ালিয়া গ্রামের জাকিরপাড়ার বাসিন্দা মো.এরফান (২৮) বলেন,২০১৩ সালে আমি বিদেশ থেকে আসার পর একদিন নাছির আমাকে মাছ ধরার কথা বলে বিলে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে মাছ ধরা শেষে হঠাৎ আমার কাছে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় আমাকে জোর করে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে বেঁধে রেখে দিনভর মারধর করে এবং কারো মাধ্যমে টাকা আনতে বলে। পরে আমাকে গহিরার চরে একটি ট্রলারে আটকিয়ে রাখে। তিন দিন পর পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি করে খবর পেয়ে তারা আমাকে ট্রলারের কেবিন থেকে উদ্ধার করে আনে। এ ঘটনায় আনোয়ারা থানায় মামলা করলে পরে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় নাছির। বিষয়টি পরে ভূমি প্রতিমন্ত্রী পর্যন্ত গড়ায়। তার নিহতের খবরে শুধু আমি নয়,পুরো এলাকাবাসীর স্বস্তি ফিরেছে।
নিহতের বড়ভাই ও বারশত ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ছাবের আহমদ এ প্রতিবেদককে জানান,নাছিরের সাথে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল না। তার অপকর্মে অতীষ্ঠ হয়ে কয়েক বছর আগে আমার বাবা আদালতের মাধ্যমে নাছিরকে ত্যাজ্য ঘোষণা করেন। আমরা জানতে পারি সে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তার পাপের প্রায়শ্চিত ভোগ করেছে তাতে আমাদের কিছু বলার নেই। তারপরও ভাই হিসেবে তার লাশ গ্রহণ করে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করবো।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান,বন্দুকযুদ্ধে নিহত নাছির উদ্দিন ওরফে মামুন একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানাসহ বিভিন্ন থানায় ১৯টি মামলা রয়েছে। শুক্রবার রাতে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে সে নিহত হলে তাকে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.