এএসআই ফারুকের বিরুদ্ধে ইয়াবা দিয়ে গাড়ি আটকের অভিযোগ

0

নেজাম উদ্দিন রানা,রাউজান : পুলিশের সহকারি উপ পরিদর্শক (এএসআই) ফারুকের সোর্স হিসেবে কাজ করতো রাউজান ইউনিয়নের কাজী পাড়া এলাকার আব্দুল শুক্কুরেরর পুত্র নাঈম (২৩), হরিষখান পাড়া এলাকার মো. আলীর পুত্র মো. মাসুদ (১৯) ও পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের আঁধার মানিক এলাকার ঠান্ডা মিয়া চৌকিদার বাড়ির মাহবুবুল আলমের পুত্র সাইমন (২০)। তিনজন ঐ এএসআইয়ের সরবরাহকৃত ইয়াবা সিএনজি গাড়ীতে ঢুকিয়ে গাড়ীর নাম্বার এএসআইকে দিয়ে গাড়ীটি আটক করতেন। তারপর গাড়ীর মালিক ও চালকের সাথে চলতো দর-কষাকষি। ৫০ হাজার থেকে শুরু করে একলাখ টাকা পর্যন্ত উঠতো দর। বনিবনা হলেই গাড়ীটি ছাড়া পেতো।

ভুক্তভোগি অনেক সিএনজি চালক আর মালিক গত ৩ জুন স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এমনটাই স্বীকার করেছেন। সম্প্রতি এমন বেশ কিছু ঘটনার পর পুলিশের ঐ তিন সোর্সের বিরুদ্ধে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে চালকরা। পশ্চিম গুজরা মীরধার পাড়ার সিএনজি চালক সোহেলসহ অনেকে অভিযোগ করেন, পুলিশের তিন সোর্স সায়মন, মাসুদ ও নাঈম বেশ কিছুদিন ধরে গাড়ীতে ইয়াবা ডুকিয়ে পুলিশকে খবর দিতো। গত ২ জুন শনিবার রাত আনুমানিক বারটার দিকে তিন সোর্সের একজন সাইমনকে নোয়াপাড়া পথেরহাটে দেখতে পেয়ে সোহেলসহ কয়েকজন চালক তাকে আটক করে।

পরে তার কথার বিত্তিতে অপর দুই সোর্স মাসুদ আর নাঈমকে নতুন রঘুনন্দন চৌধুরী হাট ও নুনা পুকুর পাড়া এলাকা থেকে আটক করে রবিবার সকালে পশ্চিম গুজরা ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন সাহাব উদ্দিনের কাছে নিয়ে যায় চালকসহ বিক্ষুদ্ধ জনতা। সেখানে চেয়ারম্যান আটক তিন সোর্সকে থানায় সোপর্দ করার কথা বললে বিক্ষুদ্ধ চালকরা তাদের উপজেলার রমজান আলী হাটে নিয়ে গিয়ে একটি দোকানে আটকে রেখে স্থানীয় চেয়ারম্যান বি এম জসিম উদ্দিনকে খবর দেওয়া হলে তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

খবর পেয়ে রাউজান থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই নুরুন্নবী ও এসআই সাইমুল চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হিরুর সাথে ইউপি কার্যালয়ে বৈঠক করেন। পরে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেরাউজান থানার ওসি কেফায়েত উল্ল্যাহ চালকদের সাথে বৈঠক করে ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। বৈঠক চলাকালে দোকানে আটক অবস্থায় থাকা পুৃলিশের তিন সোর্স কৌশলে দোকান থেকে পালিয়ে যায়।

রবিবার রাত আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম। বিষয়টি জেলা পুলিশ সুপারকে অবহিত করার পর জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে রাউজান থানার এ এস আই ফারুককে জেলা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়।

রাউজানের পাহাড়তলী ইউনিয়নের সিএনজি চালক দিদারুল আলম সাংবাদিকদের কাছে বলেন, তার চট্টগ্রাম ১১-৯৫৪৪ নম্বরের সিএনজি টেক্সীতে ইয়াবা দিয়ে সোর্সরা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ গাড়িটি আটক করে একলাখ টাকা দাবী করে। পরে দরকষাকষির এক পর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির অলংকার বন্ধক রেখে থানার এএসআইকে ৫০ হাজার টাকা দিলে গাড়িটি ছাড়া পান। একই ধরনের অভিযোগ করে ৭ নং মঙ্গলখালি গ্রামের সিএনজি মালিক মো: জাগের বলেন, এলাকার পানিচতরি থেকে আমার সিএনজিতে ইয়াবা দিয়ে আটক করে। পরে এএসআই ফারুককে ৩৬ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ী ও চালককে ছাড়িয়ে আনি।

উপজেলার বিনাজুরি ইউনিয়নের লেলাংগারা এলাকার সিএনজি মালিক এয়াছিন বলেন, তার গাড়ীর ভেতর পুলিশের সোর্সের মাধ্যমে ৮টি ইয়াবা ডুকিয়ে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা আদায় করে এএসআই ফারুক। সিএনজি চালক ও বিক্ষুদ্ধ জনতার হাতে আটকাবস্থায় পুলিশের তিন সোর্স সায়মন,নাঈম ও মাসুদ স্বীকার করে, এএসআই ফারুকের কাছ থেকে ইয়াবাগুলো নিয়ে তিন সোর্সের হাতঘুরে ইয়াবাগুলো কৌশলে বিভিন্ন সিএনজি অটোরিক্সাতে ডুকিয়ে দিয়ে এএসআই ফারুককে খবর দেওয়া হলে সে সোর্সের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গাড়ীগুলো আটক করে মোটা অংকের টাকা আদায় করে ছেড়ে দিতো।

এএসআই ফারুকের মোটরসাইকেলটিও চালাতো তিন সোর্সের একজন নাঈম। বিনিময়ে তিন সোর্স পেতেন নগদ কিছু অর্থ। এমন ঘটনা আলোড়ন তুলে পুরো উপজেলায়। বিষয়টি সম্প্রতি ‘টক অব দ্যা রাউজান’ এ পরিণত হয়। বিষয়টি অস্বীকার করে এএসআই ফারুক স্থানীয় সাংবাকিদের বলেছেন, এই ধরনের ঘটনার সাথে আমি জড়িত নই। আটক তিন যুবককে চেনেনা বলেও দাবী করেন তিনি।

রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কেফায়েত উল্ল্যাহ স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, মাদক বিরোধী অভিযানকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কোনো একটি মহল পুলিশের বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ তুলছে। তবে ঘটনায় এএসআই ফারুক জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। ঘটানার বিষয়ে জানতে চাইলে রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম আজকের সূর্যোদয়কে বলেন, ‘ঘটনার বিষয়টা জানার পর রাত আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে আমি রমজান আলী হাটে ছুটে যাই। ঐ সময় কোনো মানুষজন ছিলনা।

আটক তিন সোর্সদের কাউকে পাইনি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে আমি কথা বলেছি। এবং কয়েকজনের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ জেনেছি। এএসআই ফারুককে জেলা পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয় তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’ এই ঘটনার পর এলাকায় তোলপাড় চলছে। ঘটনার সুষ্টু তদন্তপূর্বক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানিয়েছেন বিক্ষুদ্ধ চালক ও মালিকরা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.