একুশের প্রথম প্রহরে চট্টগ্রাম শহীদ মিনারে জনমানুষের ঢল

0

দিলীপ তালুকদারঃঃ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি- আমি কি ভূলিতে পারি….. মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা বাজতে আরো ২০ মিনিট বাকী। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে ঘিরে জনমানুষের ঢল।

বিভিন্ন শ্লোগানে মুখর চারদিক। বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ, সবাই শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে নত মস্তকে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানানোর প্রত্যাশায় । কারও হাতে ব্যানার, কারও হাতে প্ল্যাকার্ড, কেউ নিয়েছেন পুষ্পস্তবক, কেউ বুকের কাছে ধরে রাখা একটি মাত্র গোলাপ।

আবার কেউ নিয়েছেন স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা। নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষের স্রোত মিশে গেছে একই মোহনায়। এসময় শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর হয়ে উঠে পুরো শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। কারো কারো মুখে একটাই গান, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি- আমি কি ভূলিতে পারি…..

মহান একুশের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে থেকেই লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে নগরীর লাভ লেইন থেকে নন্দনকানন হয়ে টিএন্ডটি অফিসের সামনে দিয়ে সিনেমা প্যলেস পর্যন্ত এলাকা। নন্দনকানন বোস ব্রাদার্সের সামনে দিয়ে রাইফেল ক্লাবের পাশ হয়ে নিউমার্কেট পর্যন্ত এলাকায়ও ছিল মানুষের ঢল।

ঘড়ির কাটা যখন ১২টা ১ মিনিট তখনই বেজে উঠে নন্দনকানন ফায়ার স্টেশন থেকে সময়ের ঘণ্টা। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সঞ্চালনায় শুরু হয় শ্রদ্ধা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা। নগর পুলিশের একটি চৌকস দল সশস্ত্র অভিবাদন জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর পালা। এরপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন কাউন্সিলর এবং সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দেন।
রাঙামাটি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য জনসংহতি সমিতির নেতা উষাতন তালুকদারও ফুল নিয়ে এসেছিলেন শহীদ মিনারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ নাগরিক গোলাপ নিয়ে আসেন শহীদ মিনারে। শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তারা।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ সালাম নির্বাচিত সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দেন।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো.আব্দুল মান্নান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মনিরুজ্জামান, সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূর ই আলম মিনা, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরীও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চট্টগ্রাম জেলা কমান্ড, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) এবং চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের নেতারাও শহীদ মিনারে এসে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান, বিএফইউজে’র সহ-সভাপতি শহীদ উল আলম ও সদস্য আসিফ সিরাজ, সিইউজে’র সভাপতি নাজিমউদ্দিন শ্যামল ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস এবং প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ উপস্থিত ছিলেন।

নগর কমিটির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুর নেতৃত্বে নগর যুবলীগ, সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রণির নেতৃত্বে নগর ছাত্রলীগ, নগর শ্রমিক লীগ, ওমরগণি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ, সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ, হকার্স লীগের নেতারাও শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছেন। একুশের রাতকে ঘিরে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে শহীদ মিনার ঘিরে নেয়া হয় তিনস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.