গাজীপুরে যেন খুলনার পুনরাবৃত্তি না হয়: সুজন

0

সিটিনিউজ ডেস্ক:: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সর্বশক্তি নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে ‘সুশাসন’ ও নির্বাচন নিয়ে কাজ করা এনজিও সুশাসনের জন্য নাগরিক। সংস্থাটির সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, এই সিটি নির্বাচনগুলোই নির্ধারণ করবে জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সুজন সম্পাদক এসব কথা বলেন।

‘প্রস্তাবিত বাজেট ২০১৮-২০১৯: নাগরিক ভাবনা’শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সংস্থাটি।

এপ্রিলের শেষ দিকে প্রচার শুরু হওয়া গাজীপুরে ভোটের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। রাত পোহালেই শুরু হতে যাওয়া নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন। এজন্য নেয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা। সার্বিক নিরাপত্তায় র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, এপিবিএন, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১২ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবেন।

সিটি করপোরেশন পরিচালনায় প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রস্তুত এলাকাবাসীও। সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত কেন্দ্রে এসে প্রার্থী নির্বাচন করবেন সাড়ে ১১ লাখ ভোটার। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে একজন মেয়র ছাড়াও ৫৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ১৯ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরকে ভোট দেবেন গাজীপুরবাসী।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘রংপুর নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন নিজেদের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে পারলেও খুলনা সিটি নির্বাচনে মানুষের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেনি। এটা নিঃসন্দেহে তাদের জন্য ইতিবাচক নয়।’

‘আমি সকলের কাছে আশা করবো গাজীপুরে যেন খুলনার পুনরাবৃত্তি না হয়।’

‘আমরা আশা করি গাজীপুর সিটিতে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ও বলিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। একইসাথে সরকার ও প্রশাসনের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও যথাযথ ভূমিকা পালন করবে।’

সুজন সম্পাদক বলেন, ‘সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যদি না হয়, তাহলে তার মাশুল জাতিকে দিতে হবে। আশা করি সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন।’

‘সিটি নির্বাচনেই বুঝা যাবে জাতীয় নির্বাচনটা কেমন হবে। কেননা সকাল দেখলেই বুঝা যায়, দিনটা কেমন যাবে। তাদের উপর মানুষের আস্থা থাকবে কি না।’

প্রস্তাবিত বাজেটের মূল্যায়ন

গোলটেবিল বৈঠকে আগামী বাজেট নিয়েও কথা বলেন আলোচকরা। তারা বলেন, বাজেট প্রতিটি সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল। যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সবাইকে প্রভাবিত করে। কিন্তু ২০১৮-১৯ সালের প্রস্তাবিত বাজেট সমতাভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সহায়ক নয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত বছরের বাজেট কিন্তু রিভাইস ও সংশোধন করা হয়েছে। এডিপি সংশোধন করা হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে এতো বড় বাজেট এবারও যে বাস্তবায়িত হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। যেহেতু এটা নির্বাচনের বছর তাই সাধারণ মানুষ বুঝবে না, কী রিভাইস ও ইমপ্লিমেন্ট হয়েছে।’

‘এতে মানুষকে খুশি করার জন্য কর তেমন বেশি আরোপ করা হয়নি। অতএব সরকারের একটা বিরাট ভাবমূর্তি দাঁড়ালো যে তারা বিরাট বাজেট দিয়েছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য ও অন্যান্য কর্মসংস্থানের জন্য বাজেটে বিশেষ বার্তা থাকবে বলে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে বাজেটে কিছুই বলা নেই। এমনকি বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারেও কিছু বলা নেই।’

‘শিক্ষাখাতে বাজেট সেই ১২ শতাংশই রয়ে গেছে। এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়নি। যেটা করা হয়েছে তাতে শিক্ষকের বেতন-ভাতাতেই সব চলে যাবে। স্বাস্থ্য খাতে বাজেটের বিষয়টি আরও দুঃখজনক। মনে হচ্ছে স্বাস্থ্যখাতে সাধারণ মানুষের প্রচুর সুযোগ সুবিধা চলে এসেছে।’

‘প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু হয়তো আছে তাতে দরিদ্র মানুষরা উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু আজকাল দরিদ্র মানুষরা তো শুধুমাত্র ডায়রিয়া ও পেটের অসুখে ভোগেন না। তাদেরও ব্যয়বহুল রোগ হচ্ছে। হাসপাতাল ভবন হলেও স্বাস্থ্য উপকরণ, যন্ত্রপাতি, রোগীদের পথ্য  এগুলাতে বাজেটে আরো বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন ছিল। কেননা স্বাস্থ্যসেবা প্রাইভেট সেক্টরের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

বাংলাদেশে ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে তেমন নজর না দিয়ে মেগা প্রকল্পের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। মেগা প্রজেক্টগুলো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। কিন্তু বর্তমান সমস্যা ভুল না করে মেগা প্রজেক্টে হাত দিলে তা কোনোভাবেই জনকল্যাণমুখী বাজেটের অন্তর্ভুক্ত বলা যায় না।’

সালেহ উদ্দিন বলেন, বলা হচ্ছে এনবিআরকে শক্তিশালী করা হয়েছে। কিন্তু তা হয়েছে শুধুমাত্র এনবিআরের লোকবল বাড়ানোর প্রক্রিয়া। তারাতো গতবারের টার্গেট পূরণ করতে পারেনি। তাহলে এবার কি অবস্থা হবে?’

‘এছাড়া বেসরকারি অনেক বড় একটি আয়ের খাত হিসেবে ব্যাংকিং সেক্টর ও সঞ্চয়পত্রকে দেখানো হয়েছে। এমনিতেই ব্যাংকিং সেক্টর চাপের মুখে, তার উপর আবার এই চাপে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগের উপর চাপ পড়বে। যার কারণে আমানত কমে যাচ্ছে ও সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে।’

গোলটেবিল আলোচনায় গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কোনো সমন্বয় নেই, তাও আমরা মেনে নিচ্ছি। আর সরকার এই সুযোগেই বলছে দেশ উন্নত হয়েছে।

কলামিস্ট আলী ইমাম মজুমদার বলেন, গত ১১ মাসে ৬৩ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। আর এক মাসে বাকিটা বাস্তবায়ন করা কি সম্ভব? অর্থাৎ বাস্তবায়নের হার খুবই নিম্ন। যে কারণে আমরা তুলনামূলকভাবে দরিদ্র হয়ে যাচ্ছি। কেননা ধনী ও গরিবের দূরত্ব অনেক বেড়ে গেছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.