চট্টগ্রামের মানুষ নরক যন্ত্রনায় বসবাস করছেঃ নোমান

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ  চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতি এখন ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফরও দলকে চাঙ্গা করছে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে আব্দুল্লাহ আল নোমানের একটি শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। যদিও তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান।

গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের বাসায় সিটি নিউজকে আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন,’ বর্তমান সরকার অবৈধ সরকার। জোরপুর্বক ক্ষমতা দখল করে আছে। যেহেতু অবৈধ, নির্বাচিত নয় সেহেতু তাদের কর্মকান্ডগুলো স্বৈরাচারী। তারা সংসদীয় গনতন্ত্রের কথা বললেও তাদের কাজকর্ম সেরকম নেই। এই সরকার একটি পেশীশক্তির সরকার। জনগনকে এরা নির্যাতন করছে। দেশের মুক্তিযুদ্ধের যে ঐতিহ্য, চেতণা সেটা বাস্তবে নেই।

মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। জনগনের সেই কাঙ্খিত অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি। জনগনের যে গণতান্ত্রিক অধিকার, লডাইয়ের মাধ্যমে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্টা হয়েছিল সেই অধিকার তারা হারিয়েছে। সর্বোপরি এক কথায় বলা যায়, এই সরকার জনগনের সরকার নয়। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার যে, স্বাভাবিক রুটিন ওয়ার্ক সেটাও তারা করছেন না।

দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারা পরাজিত হবে। পরাজিত হলে আজকে যে ব্যাংক লুট, অর্থ লুট, খুন হয়েছে, মানুষের অধিকার জোরপুর্বক হরন করা হয়েছে। এগুলোর একদিন বিচার হরে। ক্ষমতা থেকে তারা যাচ্ছে না, ছাড়তে চাইছে না। একটি জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্টার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে গনতন্ত্র উদ্ধার ও ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াতে বুলেটের চেয়ে শক্তিশালী ব্যালটের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে।

বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও প্রবীণ নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন,’ চট্টগ্রামের মানুষ এখন অসহ্য যন্ত্রনায় যেন ছটফট করছে। জনগন কি যে, কষ্টে আছে তা বর্ননা করা যাবে না। এই চট্টগ্রামের বন্দরের অর্থ দিয়ে, চট্টগ্রামের ব্যবসা থেকে যে অর্থ যোগান দিচ্ছে জাতীয় বাজেটে, সেটা চট্টগ্রামের জন্য খরচ করা হচ্ছে না। সব সরকারই চট্টগ্রামকে তার মর্যাদা প্রদান করেনি। এখানে তখন জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানি ছিল প্রধান সমস্যা। নির্বাচনের সময় তখন সকলে বলেছে,’ এ সমস্যা থাকবে না’। এ

ই সমস্যা নিরসনের কোন লক্ষন আর দেখছি না। শহরে অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মান ও সাগরের তলদেশ ভরাট হলেও কোনভাবে সরকার সেই সমাধানে যাচ্ছে না। সিডিএ তার কাজ ভালভাবে মনিটরিং না করার কারনে এখন জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানি সমুদ্রের আশপাশের এলাকায় নয়, সমস্ত শহরে চলে এসেছে।

এটা একটা বিশাল সমস্যা চট্টগ্রামের জনগনের জন্য। এখানে রাজনীতি প্রধান নয়, জনগনের সমস্যা দুরিকরণে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার। চট্টগ্রামের মন্ত্রী ও এমপিদের মধ্যে অনেক বিরোধ। সিডিএ ও চসিকের মধ্যে কোন রকম সমন্বয় নেই। মানুষ তাদের আচরণে হতাশ। চট্টগ্রামে যে, মাষ্টারপ্ল্যান ছিল, তা আরও ভালভাবে পরীক্ষা নীরিক্ষা করে বর্তমান উপযোগী একটা মাষ্টারপ্ল্যান করে তার ভিত্ত্বিতে জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসন খুবই জরুরী। এই ক্ষেত্রে চসিকের মানুষকে এক দফা কর্মসুচী গ্রহন করা উচিত।

সরকারকে চাপ দেওয়া উচিত। সরকারী দলকে এই চাপের মধ্যে রাখতে হবে। বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বলে, তাদের মেয়াদ শেষ হবে। চট্টগ্রামের পরিস্থিতি যে রকম, সে রকমই থেকে যাবে। আমাদের সময় আমরা চাক্তাই খাল খনন ও দুই পাশে দেয়াল দিয়ে খালটাকে চিহ্নিত করেছিলাম। কিন্তু এটাও যথেষ্ট ছিল না। কারন কর্নফুলী নদী থেকে চাক্তাই খালের মুখে পর্যন্ত যে পরিস্থিতি পানি নিস্কাশনে কর্নফুলী নদী থেকে পানি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার যে কাজ তা করা হয়নি।

জলাবদ্ধতা ও জোয়ারের পানি শহরকে গ্রাস করছে। জনগনের দুর্গতি বাড়ছে। বহদ্দারহাট, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ, হালিশহর, পতেঙ্গা, বাকলিয়া ও চকবাজার সহ নগরীর অধিকাংশ এলাকার চিত্র ভয়াবহ। হালিশহর ও আগ্রাবাদে খুব একটা জলাবদ্ধতা ছিল না। এখন জোয়ারের পানিতে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি ঠেকাতে একটা বিশেষ অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।

একটা থোক বরাদ্দ বাজেটে চট্টগ্রামের জন্য রাখতে হবে। সিটি কর্পোরেশন এই থোক বরাদ্দ দিয়ে যে কোন কাজ করবে। সেটা হচ্ছে না। আমার আহবানে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী গড়তে ১৬ পয়েন্টের একটি বক্তব্য কেবিনেট মিটিং এ পাশ হয়েছিল। এই ১৬ পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে যদি কাজ করা যায়, তাহলে জলাবদ্ধতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ নানা উদ্যোগ কার্যকর হবে। কেবিনেট থেকে যখন কোন প্রপোজল পাশ হয়, সেটা প্রতিমাসে মনিটরিং হয়। কিন্তু অনেক বছর চলে গেল, চট্টগ্রামের ওই ১৬ পয়েন্ট নিয়ে কোন মনিটরিং হয়নি। এ ব্যাপারে কেন কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না জানি না।

সরকার আসবে আবার সরকার যাবে। তবে তার কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলবে। আমরা করে এসেছি। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে মন্ত্রী-এমপিদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। যেহেতু এটা পাশ করা একটি প্রকল্প। এটা আরও পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন,’ বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে কোন টানাপোড়ন আছে আমি বলবো না।

বিএনপি একটি দল। জামায়াত একটি দল। একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগও তাদের সাথে ঐক্য করেছিল। যেখানে কর্মসুচী ভিত্ত্বিক ঐক্য, সেখানে সমস্যা ও চাহিদা থাকবে। জামায়াতের সাথে যেমন সম্পর্ক আছে তেমন সমস্যাও আছে। জামায়াতের সাথে মৌলিক কিছু বিরোধও আছে। বিএনপি সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে ও প্রতিষ্টাও করেছে। বিএনপির গনতান্ত্রিক ধারায় জামাত এক হবে বলে কোন কথা নেই।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.