চট্টগ্রামে কানাডা প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ের নামে প্রতারণা!

0
নিজস্ব প্রতিবেদক:: চট্টগ্রামে এক তরুণী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে এক কানাডা প্রবাসী থেকে বিয়ের ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, কানাডা প্রবাসীর কাছে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে কৌশলে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়ে মেয়েকে চলতি মাসে আবারও অন্যত্র বিয়ে দিয়েছে প্রতারণার ফাদে ফেলা পরিবারটি।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, বর্তমানে কানাডা প্রবাসী শিব ঠাকুর মজুমদারের সঙ্গে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানাধীন কধুরখীল এলাকার বর্তমানে নাইট সারাহ-ফ্ল্যাট-২ বাসিন্দা সুভাষ ক্লান্তি পারিয়ালের মেয়ে ছন্দা পারিয়ালের সঙ্গে ২০০৯ সালে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। এর পর থেকে দুজনের মধ্যে মেলামেশা বাড়তে থাকলে ছন্দা পারিয়ালের মা-পূর্ণিমা পারিয়াল বর্তমানে কানাডা প্রবাসী শিব ঠাকুরকে ডেকে বলেন , তার চাওয়া শিব ঠাকুর যেন ইংল্যান্ড থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। তা হলে তিনি রাজী আছেন । এরপর ছন্দার মার কথা মতো শিব ঠাকুর ইংল্যান্ডে চলে যান পড়াশোনার জন্য। এর পর থেকে দুজনের মধ্যে ইন্টারনেট ও ভাইভার , হোয়াট্সআপের মাধ্যমে যোগাযোগ করিয়ে দেন ছন্দার মা নিজে। এরপর শিব ঠাকুর বেশ কয়েকবার দেশে এসে ছন্দাদের বাসায় যায় এবং ছন্দাও তাদের বাসায় আসা যাওয়া করে। এভাবে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। এর মধ্যে শিব ঠাকুরও বেশ কয়েকবার লন্ডন থেকে ছন্দার পরিবারের সবার জন্য বিপুল পরিমাণ গিফট নিয়ে আসে।
এক পর্যায়ে ২০১১ সালে শিব ঠাকুর স্কলারশিপ নিয়ে লন্ডন থেকে কানাডায় চলে যান । সেই সময় ছন্দার পারিয়ালের বাবা-মা দুজনই ছন্দাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তাদের কথা মতো শিব ঠাকুর বলেন , আমি আগে গিয়ে তারপর ছন্দাকে নিয়ে যাবো। এর মধ্যে ছন্দার বাবা-মা নানান সময় ছন্দাকে দিয়ে তার কাছ থেকে পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে টাকা চাইলে শিব ঠাকুর কানাডা থেকে ও ইর্স্টান ব্যংকের মাধ্যমে ছন্দার ব্যংক হিসেবে টাকা পাঠায়। যার ডকুটমেন্ট শিব ঠাকুরের কাছে আছে। শুধু তাই নয়, দেশেও বিভিন্ন মানুষের মাধ্যমে ছন্দার মার হাতে শিব ঠাকুর বিভিন্ন সময় কয়েক লাখ টাকা তুলে দেয়। এতেই তিনি ক্ষান্ত হননি। এক পর্যায়ে মেয়েকে বিয়ে করতে হলে তিনি আগে একটা ফ্ল্যাট কিনে দিতে শিব ঠাকুরকে অনুরোধ করেন ছন্দার মা পূর্নিমা রানী পারিয়াল। পরে বাধ্য হয়ে শিব ঠাকুর বিভিন্ন লোক মারফত নগদে কয়েক লাখ ছন্দা পারিযালের মায়ের কাছে পাঠান । তিনি ফ্ল্যাট বুকিং করা হয়েছে বলে কানাডায় শিব ঠাকুরকে জানান । শুধু তাই নয়, তিনি জানান ফ্ল্যাট বুকিং করা হয়েছে , রেজিষ্টেশন করতে আরো ৫০ লাখ টাকা লাগবে। এক পর্যায়ে শিব ঠাকুরের সন্দেহ হয়। তিনি ২০১৪ সালে দেশে এসে ছন্দা পারিয়ালের সঙ্গে তাদের বাসায় যান । এবং তার মায়ের কাছে জানতে চান কোথায় ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে , সেটা নিজে দেখতে চান । তবেই তিনি বাকী টাকা দিবেন । তার আগে না।
একথা বলার পর শিব ঠাকুরের সঙ্গে ছন্দা পারিয়ালের মা দুর্র্ব্যবহার করেন । এবং বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। পরে শিব ঠাকুর তার টাকা ফেরত দিতে বললে তিনি মেয়ে বিয়ে দিবেন না বলে হুমকি দেন ।

এ ঘটনার পর শিব ঠাকুর আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিলে ছন্দার পরিবার আবারো তার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করেন মেয়েকে তিনি তার হাতে তুলে দিবেন , তবে শর্ত হলো ছন্দার কানাডার ভিসা আসার পর । এরপর শিব ঠাকুর ছন্দা পারিয়ালকে বলেন, আগে বিয়ে দিতে হবে। আর না হলে তিনি অন্য ব্যবস্থা নিবেন । পরে তার পরিবারের সম্মতিতে ২০১৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তারা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে ছন্দার পরিবারের উপস্থিতিতে বিয়ে করেন । যার নোটারী নম্বর ২১৫৮৮/১৪। এরপর ছন্দার মা হিন্দু শাস্ত্র মতে বৈদিক বিয়ের আয়োজন করেন্ যেখানে হাতে গুনো কযেকজন উপস্থিত ছিলেন। কারণ ছন্দার পরিবার শিব ঠাকুরকে জানিয়েছে , তারা পরে বড় করে অনুষ্ঠান করবেন । এরপর তাদের বিয়ের এফিডেভিট দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। শুধু তাই নয়, বিয়ের পর ছন্দা পারিয়াল বিভিন্ন কাগজ পত্রে শিব ঠাকুরকে স্বামী বলে স্বীকার করে বিভিন্ন ডকুমেন্ট কানাডায় পাঠায়।
এর মধ্যে প্রতি মাসে ছন্দার ভরণপোষনসহ যাবতীয় খরচ শিব ঠাকুর বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে, আন্তজার্তিক মানিগ্রামের মাধ্যমে ও লোক মারফতে পাঠাতে থাকে। এভাবে সব ভালোই চলছিল। কিন্তু গত ১লা মার্চ কাউকে কিছু না বলে ছন্দাকে তার পরিবার অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। ঘটনা শুনে কানাডা থেকে শিব ঠাকুর ছন্দার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তারা চিনে না বলে জানায়। যা শুধু প্রতারনা ছাড়া কিছু নয়।
এ বিষয়ে শিব ঠাকুরের স্ত্রী ছন্দা পারিয়ালের ০১৭৭৭২২২৬৬৭ নম্বরে বার বার যোগাযোগ করলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, ছন্দা পারিয়ালের পারিবারের০৩১-২৮৬৩৮৬০ টিএন্ডটি ফোনে যোগাযোগ করলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে, এ বিষয়ে কানাডা প্রবাসী শিবঠাকুরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ছন্দা পারিয়াল আমার বৈধ স্ত্রী। বিগত ১০ বছরে তার জন্য আমি সব করেছি। এখন তারা বলছে আমাকে চিনে না এটা অন্যায়। আমি নির্মম প্রতারণার শিকার। আমি ন্যায় বিচার চাই। আর কোন শিব ঠাকুর যেন, এমন প্রতারণার শিকার না হয় এজন্য আমি আইনী পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল । আশা করি ন্যায় বিচার পাব।
এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.