চট্টগ্রামে টেনশনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা
জুবায়ের সিদ্দিকীঃ চট্টগ্রামে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কোন কোন বর্তমান সংসদ সদস্য ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিদেশী কুটনৈতিকদের দ্ধারস্থ হচ্ছেন। ধর্ণা দিচ্ছেন কিভাবে মনোনয়ন পাওয়া যায়। এমপি বা মনোনয়ণ প্রত্যাশীদের কাছে এখন মনোনয়ন যেন “সোনার হরিণ”। কেউ পোষ্টার, লিফলেট, ব্যানার ছেড়েছেন এলাকায়।
মেজবান, গায়ে লূদ, বার্থ ডে, বিয়ে, আকদ, জানাযা কোন কিছু তাদের বাদ যাচ্ছেনা। আমন্ত্রণ বা নেমন্ত্রণ কোন কিছু তাদের প্রয়োজন পড়ছেনা। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকে মনোনয়ন নিশ্চিত না হলেও গণসংযোগ চালিযে যাচ্ছেন। চট্টগ্রামে আওয়ামীলীগের অনেক নেতা, যুবলীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
গত রমজানে ইফতার, ঈদে ঈদ উপহার বন্টন করেছেন এলাকায় এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। কে কত প্রচারে এগিয়ে তা নিয়ে চলছে প্রতিযোগীতা। আওয়ামলীগের হাই কমান্ডের দৃষ্টিতে যাওয়ার জন্য সরকারের উন্নয়নচিত্রের পোষ্টার ও লিফলেটও কেন্দ্রীয় কর্মসুচী প্রচার এবং দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশও পালন করছেন এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকে বিদেশে গিয়ে বিদেশীদের ধর্ণা দেওয়াসহ মন্ত্রী পাড়ায় ও উপদেষ্টাদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করেছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে বাদ পড়তে পারেন অনেক হেভিয়েট এমপি। যাদের ইতিমধ্যে ছিল এবং আছে দাপট ও ক্ষমতা। এসব এমপি মনে করছেন, তারা আবার মনোনয়ন পাবেন তবে এবার হিসেব নিকেশ পাল্টে যেতে পারে। চট্টগ্রামে কোন কোন আসনে এবার সরকারী এমপি পদে নারী প্রার্থীও মনোনয়ন প্রাপ্ত হতে পারেন। দক্ষিণ জেলায় এমন একটি আসনে একজন নারী নেত্রিও মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে গণসংযোগের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আওয়ামীলীগের হাইকমান্ড থেকে তিনি এ ব্যাপারে গ্রীণ সিগন্যাল পেয়েছেন বলে দলীয় সুত্রে জানা গেছে। চট্টগ্রাম মহানগরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে সম্পর্ক নেই এবং দলীয় কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত নয় এমন এমপিও আছেন আওয়ামীলীগে।
অনুসন্ধানে ও দলীয় সুত্রে জানা যায় যে, দলে উড়ে এসে জুড়ে বসে, কোন ত্যাগ বা দলীয় কোন কর্মকান্ডে নেই এমন নেতাও এখন এমপি পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী। আবার অনেকে একটি বা দুটি ওয়ার্ডে রঙ্গিন পোষ্টার ছেড়ে শুধু পোষ্টার ও ব্যানারে ছড়াছড়ি দিয়ে মনে করছেন তিনি মনোনয়ন পাচ্ছেন। তবে এদের অনেকেই বলে বেড়ান অমুকভাই তমুকভাই আমার খুব ঘনিষ্ঠ।
নমিনেশন কোন ব্যাপারই না। চট্টগ্রামে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকে রঙ্গিন প্রোফাইল তৈরী করে প্রধানমন্ত্রীর রানৈতিক কার্যালয় ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ একধিক দফতরে পাঠাচ্ছেন। যেন দলীয় সভানেত্রির কাছে নাম অন্তর্ভূক্ত হয়। এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ত্যাগী ও তৃণমূলের নেতাকর্মী যেভাবে আছেন সেভাবে আছেন দুর্নীতিবাজ, বদমেজাজী, কালো টাকার মালিক ও সন্ত্রাসীদের গডফাদার। আগামী নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি অংশ নেবে এটা ধরে নিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামীলীগ।
বিগত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের মতো কোন কারনে আগামী নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও এবারের চিত্র অন্যরকম হবে। এমনটাই মনে করছেন আওয়ামীলীগের নেতারা। এদিকে নির্বাচন যে ফর্মেই হোক বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে সেই নির্বাচন কঠিন প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ হবে এবং আওয়ামীলীগকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলে মনে করেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
আওয়ামীলীগের হাইকমান্ড সুত্রে জানা গেছে, স্বজনপ্রীতি, নিজ এলাকায় বিতর্কিত, বার্ধক্য, স্বেচ্ছাচারী মনোভাব, ভুমি দখল, দুর্নীতি, তৃণমূলের দুরত্ব, কমিশন খাওয়াসহ নানা অভিযোগ প্রায় অর্ধশত এমপির বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে চট্টগ্রামের কয়েকজন রয়েছেন। যারা ইতিমধ্যে বিতর্কিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অটোপাস এমপিদের অনেকেই এবার পাদ পড়তে পারেন।
এসব এমপির ভাগ্য অনিশ্চিত। কোন কোন এমপি নিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে রীতিমত “রাজা” হয়েছেন। তাদের নির্দেশ ছাড়া একটা ইটও এদিক ওদিক হয়না। এছাড়া বেশীরভাগ এমপির চামচা ও চাটুকাররা এলাকায় রাজত্ব কায়েম এবং অঘোষিত “মহারাজা” হয়ে দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভীড়ে এমপিরা এখন কোনঠাসা ও অস্বস্থিতে আছেন।
আবার বাদ পড়ার আশংকায়ও উৎকন্ঠিত। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনে করছেন, এবার ব্যাপক রদবদল হবে এবং তারুণ্য প্রাধান্য পাবে। আওয়ামীলীগের হাইকমান্ড সুত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের অনেক এমপি মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ছুটছেন ঢাকায় মন্ত্রি পাড়ায়। দৌড়ের উপর আছেন এসব নবাগত প্রার্থীরা। টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, ও বদমেজাজী অনেক আওয়ামীলীগ নেতা নামধারীরাও মনোনয়ন প্রত্যাশায় দলের চামচাদের দিয়ে রঙ্গিন পোষ্টার ছেড়েছেন অমুকভাই ও তমুকভাইকে মনোনয়ন দেওয়া হোক জানিয়ে।
অনুসন্ধানে ও দলীয় হাইকমান্ড সুত্রে জানা যায় যে, ২০০১ সালে নির্বাচনের সময় আওয়ামীলীগের মনোনয়ন গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছিল। সে রিপোর্ট ভুল ছিল বলে নির্বাচনে আওয়ামীলীগের অধিকাংশ সংসদ সদস্য পরাজিত হন এবং বিএনপি সরকার গঠন করে। যদিও সভানেত্রি জননেত্রী শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি টিম মাঠ পর্যায়ে বর্তমানে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে, গোয়েন্দা সংস্থার একধিক সংস্থার পাশাপাশি। অভিজ্ঞমহল মনে করেন, চট্টগ্রামে প্রায় সব কয়টি আসনে পরিবর্তন আবশ্যক। এবার তারুন্যকে প্রাধান্য দিয়ে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা হবেন এবং দল নিরংকুশ বিজয় অর্জন করতে পারবে।