চট্টগ্রামে তোপের মুখে এমপিরা, মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ চট্টগ্রামে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের দূরে ঠেলে দিয়ে প্রত্যেক এমপি নিজস্ব গ্রুপ তৈরী করেছেন। জামাত-বিএনপিসহ বিভিন্ন দল থেকে আসা হাইব্রীড আওয়ামী লীগারদের কদর বেড়েছে এমপিদের কাছে। আত্বীয়করণ করা হয়েছে সংগঠন, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনে। সব জায়গায় বসানো হয়েছে আস্থাভাজনদের। উন্নয়ন কর্মকান্ডেও সম্পৃক্ত করা হয় নিজের লোকজনকে।

সর্বত্র স্থানীয় এমপির লোকজনের দোর্দন্ড প্রতাপ। এমপির কাছের লোকজনের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে নির্বাচনী এলাকা। কোনঠাসা হয়ে পড়েছে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীরা। এসব কারনে বর্তমান এমপিদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তৃনমূলের নেতাকর্মী ও জনগন। যে কারনে আগামী নির্বাচনে মনোয়ন প্রাপ্তী ও নির্বাচনে জয়লাভ নিয়ে তারা আছেন সংশয়ে। এরই মধ্যে রাজপথ ও পাড়া মহল্লা সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সম্ভাবনাময় নতুন প্রার্থীদের দিকেই ঝুঁকে পড়েছে সাধারন মানুষ। তোপের মুখে পড়েছেন এমপিরা। সর্বশেষ জরিপেও নতুনদের অবস্থান ভাল।

চট্টগ্রাম রাউজানের বর্তমান সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী ও মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। বিএনপি থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী। অবশ্য নগর কোতোয়ালী আসনটি আওয়ামী লীগ নিজের হাতে রেখে সেখানকার বর্তমান এমপি ও জাতিয় পার্টির নেতা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে রাউজান আসন ছেড়ে দিতে পারে বলে মনে করেন অনেক প্রবীণ নেতা।

চট্টগ্রাম রাঙ্গুনিয়া আসনের বর্তমান এমপি ড. হাসান মাহমুদ। এ আসনে দলের কোন মনোনয়ন প্রত্যাশী নেই। তবে বিএনপি থেকে সাকা চৌধুরীর ছোট ভাই গিয়াস কাদের চৌধুরী অথবা ছোট ছেলে ফজলুল কাদের চৌধুরী প্রার্থী হতে পারেন বলে সুত্রে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম ডবলমুরিং আসনে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সংসদ সদস্য ডা. আফসারুল আমীনের বিরুদ্ধে দলীয় সভা-সমাবেশে উপস্থিত না থাকা ও উন্নয়নে ভুমিকা না রাখার অভিযোগ নেতাকর্মীদের। এ আসনের অনেক এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত জলাবদ্ধতা, মাদকের আগ্রাসন ও অভ্যন্তরীন সড়কের বেহাল অবস্থায় মানুষ ক্ষুদ্ধ। এখানেও পরিবর্তন চান তৃনমূলের নেতাকর্মীরা। এ আসনে এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী ডা. আফছারুল আমীন, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা সৈয়দ মাহমুদুল হক, নগর যুবলীগের আহবায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, নগর যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক ফরিদ মাহমুদ ও সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ নজরুল ইসলাম মনোনয়ন প্রত্যাশী। এদের মধ্যে ফরিদ মাহমুদ ও জাবেদ নজরুল সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রচার ও বিভিন্ন সেবামুলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান করে নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এম.এ লতিফের বিরুদ্ধে তৃনমূল নেতাকর্মী ও নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগের শেষ নেই। এ আসনের অধিকাংশ এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা ও প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হলেও এ ব্যাপারে তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। অভ্যন্তরীন সড়ক গুলোর অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। তৃনমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এমপির কোন সম্পর্ক নেই। বিভিন্ন কর্মকান্ডে তিনি বিতর্কিত হয়েছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনও একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর নজুরুল ইসলাম বাহাদুর। বিএনপি থেকে একক প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

চট্টগ্রাম পটিয়া আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী পর পর দুইবার নির্বাচিত হলেও তার সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুরত্ব রয়েই গেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাক ও পৌর মেয়র হারুনুর রশিদের সঙ্গে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এর আগের কমিটির সঙ্গেও সাংসদের দুরত্ব ছিল দীর্ঘদিন। জানা যায়, বিগত ইউপি নির্বাচনে স্থানীয় বড়লিয়া ও শোভনদন্ডি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিরোধের সৃষ্টি হয়। দলের অভ্যন্তরে রয়েছে দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিং রাজনীতি। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাছির উদ্দিন। বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য গাজী শাহজাহান জুয়েল।

চট্টগ্রাম আনোয়ারা আসনের সংসদ সদস্য ভুমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। এ আসন থেকে বার বার নির্বাচিত হয়েছেন তাঁর পিতা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলার বর্ষিয়ান নেতা মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। এখানে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেক বর্ষিয়ান নেতা আতাউর রহমান খান কায়সারের কন্যা বর্তমান সংরক্ষিত এমপি আয়েশা ওয়াসেকা খান। বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য সরোয়ার জামাল নিজাম ও জাতীয় পার্টি থেকে তপন চক্রবর্ত্তী আছেন বেশ আলোচনায়।

চট্টগ্রাম চন্দনাইশ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নুজরুল ইসলাম চৌধুরী। গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় তিনি সহজে বিজয়ী হন। এ আসনে আওয়ামী লীগের অনেক নেতার সঙ্গে তার বিরোধ রয়েছে। তৃনমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দলে জামায়াত-বিএনপির লোকজন ঢুকে পড়েছে। তাদেরই কদর বেড়েছে। এখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ইঞ্জিনিয়ার আফসার উদ্দিন আহমদ ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মফিজুর রহমান।

চট্টগ্রাম সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন দ্বন্ধ গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রচার চালিয়ে আবু রেজা নদভীকে এমপি নির্বাচিত করেছিলাম। বিজয়ী হওয়ার পর থেকে তিনি দলের মূল ধারার নেতাকর্মীদের সঙ্গে দুরত্ব রেখে চলেছেন। একই অভিযোগ লোহাগাড়ার আওয়ামী লীগ নেতাদের। অভিযোগ আছে, উন্নয়ন কর্মকান্ড ও দলের কর্মসুচীর চেয়ে নিজের ফয়জুল্লাহ ফাউন্ডেশন নিয়ে বেশি ব্যস্ত। দলের কোন্দল ও গ্রুপিং এর কারনে অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান আছে বেশ আলোচনায়। বিএনপি থেকে শেখ মো: মহিউদ্দিন।

চট্টগ্রাম বাঁশখালী আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আছেন আব্দুল্লাহ কবির লিটন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মুজিবুর রহমান সিআইপি। আগামী নির্বাচনে জাতিয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহামুদুল ইসলাম চৌধুরী নির্বাচন করতে আগ্রহী। এ আসনে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং দীর্ঘদিনের। অপরদিকে হেফাজতে ইসলামের নেতা মুফতি ইজহারুল ইসলাম এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। আওয়ামী লীগ তার শরিকদল জাতিয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে পারে এমন প্রচার জোরে শোরে চালাচ্ছেন জাপা নেতা। তবে আওয়ামীলীগের নেতারা মনে করেন এবারও বাঁশখালী আওয়ামীলীগের কান্ডারী মোস্তাফিজুর রহমানই পাবেন মনোনয়ন।

এদিকে মনোনয়ন বঞ্চিত হবার সম্ভাবনাকে সামনে রেখে একাধিক সংসদ সদস্যের দৌড়ঝাঁপ বেড়ে গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং এলাকার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন এই নিয়ে ব্যস্ত তারা। জেলা ও কেন্দ্রীয়নেতাদের বাসাবাড়িতেও যাচ্ছেন। এলাকার রাজনীতিতে দুর্বল ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হওয়া এসব সংসদ সদস্যদের অনেকেই মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন বলে দলীয় সুত্র জানায়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.