চট্টগ্রামে পুলিশের মধ্যে বিএনপি-জামাত !

0

জুবায়ের সিদ্দিকী,সিটি নিউজ : আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসনের গুরুত্বপুর্ন পদে এবং বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখন সংশয় তৈরী করেছে সরকারী দলে। বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন মেয়াদে যারা নিয়োগ পেয়েছিলেন এমন প্রায় ১০০ জন পরিদর্শককে নিয়ে গোপন প্রতিবেদন তৈরী করেছে একাধিক সংস্থা।

এরই মধ্যে তা জমা হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে। এই প্রতিবেদনে তাদের পারিবারিক অবস্থান, শিক্ষাজীবন, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, আদর্শ, স্বজনদের কর্মকান্ডের তালিকা সবিস্তারে বর্ননা করা হয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে,’এসব কর্মকর্তাদের অনেকে নিজেদের আড়াল করে বর্তমানে অতিমাত্রায় আওয়ামী লীগ সেজেছেন।

সময়মত তাদের খোলস বদলে আগের ভুমিকায় ফিরে যেতে পারেন। যা সরকারী কার্যক্রম ও সরকারের জন্য মারাত্বক হুমকির কারন হয়ে দাঁড়াবে। তাদের বেশিরভাগ ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন। তালিকায় থাকা অধিকাংশ কর্মকর্তা ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের রাজনীতির পদে জড়িত ছিলেন। এরা এখনো গোপনে বিএনপি জামায়াতকে সহায়তা করে যাচ্ছেন। এই তালিকায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়াও রয়েছেন এএসপি পদোন্নতি লাভ করা বেশ কয়েকজন চিহ্নিত কর্মকর্তা। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সুপারিশে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও আছেন তালিকায়।

পুলিশ সদরদপ্তরের এক গুরুত্বপুর্ন পদে আসীন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জানান, ’যাদের নাম গোয়েন্দা তালিকায় এসেছে তাদের ব্যাপারে আরো খোঁজ খবর নেয়া হবে ও হচ্ছে এবং সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

এ তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন,’ চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কোতোয়ালী থানার ওসি মো: জসিম উদ্দিন, হালিশহর থানার ওসি মাহফুজুর রহমান, আকবর শাহ থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর, ইপিজেট থানার ওসি সৈয়দ মোহাম্মদ আহসানুল ইসলাম, পাহাড়তলী থানার ওসি মো: মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, চান্দগাঁও থানার ওসি মো: আবুল বাশার, সদরঘাট থানার সাবেক ওসি মর্জিনা আক্তার মঞ্জু নিয়োগ পেয়েছিলেন ছাত্রদলের নেত্রী হিসেবে। বায়েজিদ থানার ওসি মো: আবুল কালাম, কর্ণফুলী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম, বন্দর থানার সাবকে ওসি রফিক উল্লাহ, আনোয়ারা থানার ওসি দুলাল মাহমুদ, চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার মাহমুদ, রামু থানার ওসি লিয়াকত আলী সিকদার, উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার ওসি রফিকুল ইসলাম, রাউজানের ওসি কেফায়েত উল্লাহ, ফটিকছড়ি থানার সাবেক ওসি আবু ইউছুফ মিয়া, পটিয়া থানার ওসি শেখ মো: নিয়াম উল্লাহ, বাঁশখালী থানার ওসি আলমগীর হোসেন সবাই সাবেক ছাত্রদলের বিভিন্ন স্থরের নেতা এবং বিএনপি-জামায়াত আদর্শের হিসেবে চিহ্নিত।

ঢাকার তেজগাঁও থানার ওসি আবদুর রশীদ বাড়ি সাতকানিয়াতে। ১৯৯৩ সালে তিনি ছাত্রদল নেতা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। ধানমন্ডী থানার ওসি আবদুল লতিফ, উত্তরা পুর্ব থানার ওসি নুরে আলম সিদ্দিকী, উত্তরা থানার ওসি হেলাল উদ্দিন মির্জা আব্বাসের ভাই মির্জা খোকনের ঘনিষ্ট বন্ধু। সবুজবাগ থানার ওসি আব্দুল কুদ্দুস ফকির বিএনপি নেতা চৌধুরী কামাম ইবনে ইউসুফের আশীর্বাদপুষ্ট জেলা ছাত্রদল নেতা ছিলেন। ফেনী সদর থানার ওসি রাশেদ চৌধুরী, চৌদ্দগ্রামের ওসি আবু ফয়সাল, কুমিল্লার ডিবির ইন্সপেক্টর কে.এম মঞ্জুরুল আলম ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নারায়নগঞ্জ সদর থানার ওসি শাহেন শাহ পারভেজ, চান্দিনার ওসি নাছির মৃধা, মতিঝিল থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম রব্বানী, গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মো: সেলিম, মৌলভী বাজার কমলগঞ্জের ওসি বদরুল আলম, সিলেট শাহ পরান থানার ওসি আখতার হোসেন, হবিগঞ্জ চুনারুঘাট থানার ওসি আজমিরুজ্জামান, কদমতলী থানার ওসি আবদুল জলিল মাগুরা জেলা ছাত্রদল নেতা ছিলেন। হাজারীবাগ থানার ওসি মীর আলিমুজ্জামান, শ্যামপুর থানার ওসি (তদন্ত) হাবিবুল ইসলাম, বনানী থানার ওসি (তদন্ত) আবদুল মতিনের নিয়োগও ছাত্রদল নেতা হিসেবে। শতাধিক নামের তালিকা থেকে এখানে আংশিক প্রকাশ করা হল।

চট্টগ্রাম জেলা ও সিএমপির গুরুত্বপুর্ন থানায় কর্মরত ও সার্কেলের একাধিক এএসপি বিএনপি-জামায়াত ঘরানার লোক। পুলিশের চাকরী করে সরকারের সমালোচনা করে অনেক কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মন্তব্য কিভাবে করে ভাবতে অবাক লাগে। ছাত্রদল ও যুবদলের থেকে উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা এই ধরনের কর্মকান্ড প্রকাশ্য করলেও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন এই প্রশ্ন সাধারন মানুষের। সিএমপি ও জেলা পুলিশের অনেক কর্মকর্তা বিএনপি-জামায়াত ঘরানার দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশের থানা ও অন্যান্য গুরুত্বপুর্ন ষ্টেশনে। এরা কর্মক্ষেত্রে মুখে শেখ ফরিদ বগলমে ইট’ নীতিতে সুর পাল্টে দিনে আওয়ামী লীগের খাস লোক হলেও রাতে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে আর্ভির্ভুত হন। বহুরুপী চরিত্রের এসব ওসি ও এএসপিরা বিএনপি-জামায়াত ঘনিষ্ট সংগঠনকে আর্থিক সহযোগিতাও দিয়ে আসছে।

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ ঘরানার বলে পরিচিত অনেক ওসি নগরীতে খুলে বসেছেন ব্যবসা প্রতিষ্টান। দীর্ঘদিন একই এলাকায় চাকুরীর সুবাদে এরা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। অনেকে ব্যবসায়ীক পার্টনার, প্লট, ফ্ল্যাট ও গাড়ি-বাড়ির মালিক। তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের সন্ধানে নামে না দুদক কিংবা অন্য কোন গোয়েন্দা সংস্থা। এরা দাপিয়ে বেড়ায় সরকারীদলের শীর্ষ কোন নেতা, বা কোন মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে। বছরের পর বছর এসব আওয়ামী লীগ ঘরানার পরিচয়দানকারী ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কখনো বদলী হন না। নগরীতে ঘুরে ফিরে সিএমপিতে ওসির দায়িত্ব পালন করছেন। এসব ওসির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী, অবৈধ কর্মকান্ডে মদদ জোগানো, ইয়াবা ব্যবসা, মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয়দান ও ছিনতাইকারী-সন্ত্রাসীদের আস্কারা দেওয়ার মত অভিযোগ রয়েছে। এসব কর্মকর্তাদের অবৈধ টাকা ইনকামের ধান্ধার কারনে নগরীতে চলছে সন্ত্রাস রাহাজানী ও খুনের মহোৎসব। এরাই সরকারের বারোটা বাজাচ্ছে।

কারন তাদের কখনো বদলী হতে হয় না সিএমপির বাইরে। এখানকার রাজনীতিবিদ, অপরাধী, দাগী-ক্রিমিনাল সবার সাথে তাদের সখ্যতা। আওয়ামী লীগ ঘরানার পরিচয়েওসি বা এএসপি সবারই নগরী, নিজ এলাকা ও ঢাকায় আলিশান বাড়ি, চায়নিজ রেষ্টুরেন্ট, কাভার্ট ভ্যান, ট্রান্সপোর্ট সহ নানা ব্যবসা রয়েছে। এসব চিহ্নিত ওসিগন বদলী না হওয়াতে ও একই থানায় তিন থেকে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের সুবাধে স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলায় অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন,’ যে কোন পুলিশ ষ্টেশনে কোন পুলিশ সদস্য যদি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করে তবে সে অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এখন ওসিরা নগরীতে নামে বেনামে ব্যবসা করছেন।

যেন তাদের নিয়ন্ত্রনে কোন আইন বা তদারকী নেই। এতে করে অন্য কোন যোগ্য পুলিশ কর্মকর্তার পদায়ন হচ্ছে না। অন্যদিকে গোয়েন্দা তালিকায় নেই, মুখে শুধু আওয়ামী লীগের জয়গান শোনা যায় এমন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা জোটের নেতাদের সমীহ করলেও আওয়ামী লীগের নেতাদের চেনেন না। এমনই একজন ফটিকছড়ির ভুঁজপুর থানার ওসি আবদুল লতিফ। তিনি যেখানেই গেছেন বিতর্কিত কর্মকান্ড করেছেন। আবার কোন কোন ওসির কক্ষে অবাধে তদবিরে নিয়োজিত সুন্দরী রমনীরা। সুন্দরীদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে মফস্বলের বেশকিছু থানায়। এটাও গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এসেছে। এতে করে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে পুলিশ প্রশাসন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.