চট্টগ্রামে ফরিদ মাহমুদ আপন মহিমায় ভাস্বর

0

জুবায়ের সিদ্দিকী,সিটিনিউজ :: একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে নিহত হন শহীদ আকতার হোসেন। দেশ মাতৃকার জন্য বুকের রক্ত বিলিয়ে দেয়া এ সাহসী বীর শহীদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম অবুঝ সন্তানদের নিয়ে পড়েন চরম বেকায়দায়।

লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর উঁকি দেয় স্বাধীন বাংলার রক্তলাল সুর্য্য। স্বাধীন বাংলাদেশে শহীদ আকতার হোসেনের পরিবারে শুরু হয় আরেকটি যুদ্ধ। এ যুদ্ধ শহীদের অবুঝ সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকার।

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের সন্নিকটে পাক-হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ আকতার হোসেনের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে ০১-১১-১৯৭২ ইং একটি সনদপত্র ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রান ও কল্যাণ তহবিল থেকে ২০০০ টাকার চেক প্রদান করেন। চেক নম্বর ০০৯৭০৭, ফাইল নং-৭৭০।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তৎকালীন শ্রম ও বাণিজ্য মন্ত্রী চট্টগ্রামের সিংহপুরুষ জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর আন্তরিক সহযোগিতায় চিটাগাং হাউজ বিল্ডিং ডিভিশনের পক্ষ থেকে ০৭-০৬-১৯৭২ ইং ২৪ নং তুলা পুকুর লেইন, লালখান বাজার, চট্টগ্রামে বসবাসের জন্য শহীদ পরিবারকে একটি বাড়ি বরাদ্ধ দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে শহীদ পবিরারের ভরন-পোষন খরচাদি বহন করার জন্য ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চিটাগাং সিমেন্ট ক্লিংকার ফ্যাক্টরী থেকে সিমেন্টের পারমিট, চিটাগাং ষ্টিল মিলস লিমিটেডের পক্ষ থেকে একটি সিআই সিট ও লোহা ও ইস্পাত দুটি পারমিট দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু সরকারের আন্তরিক সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়াতেই শহীদ আকতার হোসেনের পরিবারে নেমে আসে আরেক বিপর্যয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট কালরাতে হাজার বছরের শ্রেষ্ট সন্তান জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর খুনী বেঈমান খন্দকার মোস্তাক গং ও পরবর্তীতে সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে শহীদ আকতার হোসেনের পরিবারকে দেওয়া ২৪নং তুলা পুকুর লেইনের বাড়ি থেকে জোরপুর্বক শহীদের স্ত্রী-সন্তানদের বের বের করে দিয়ে তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো: হেদায়েতুল ইসলামকে বরাদ্ধ দেওয়া হয়।

স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের লেলিয়ে দেওয়া সরকারী লোকজন শহীদ পরিবারের মালামাল লুটপাট করে নির্মম ভাবে। ওই সময় শহীদের স্ত্রী তৎকালীন ডবলমুরিং থানায় একটি মামলাও রুজু করেন। এ মামলার কোন কুল কিনারা হয়নি।

শহীদের স্ত্রী তার অবুঝ সন্তানদের নিয়ে কখনো শহরের এনায়েত বাজার, চন্দনপুরা ও পশ্চিম বাকলিয়া এলাকায় বসবাস করেন। চারটি বছর মানবেতর জীবন কাটিয়ে ১৯৮২ সালে আবার ফিরে আসেন লালখান বাজারে।

শহীদ আকতার হোসেন যে ৬ মাসের পুত্র সন্তানকে স্ত্রীর কোলে রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন, সেই সন্তানের নাম ফরিদ মাহমুদ। শহীদের ঔরস ও রক্তের আজকের প্রজন্ম ফরিদ মাহমুদ জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ থেকে এখন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয়।

তিনি চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের যুগ্ন-আহবায়ক। এখান পর্যন্ত আসতে অনেক বাধা, প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছে তাঁকে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করতে গিয়ে জেল-জুলুম অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারাবরন করেছেন দুই দফা।

১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম ডবলমুরিং-বন্দর আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ নির্বাচনে কর্মকা-ের মাধ্যমে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত হন শহীদ পুত্র ফরিদ মাহমুদ।

যার ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি মফিজুর রহামানের সঙ্গে সক্রিয় কর্মী হিসেবে দীর্ঘ ৭ বছর সকল কর্মসুচীতে ছিলেন। ৯০-৯৬ চট্টগ্রামের ছাত্রলীগ-যুবলীগের সকল কর্মসুচীতে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।

১৯৯৪ সালে ৭১এর ঘাতক রাজাকার গোলাম আযমের চট্টগ্রাম আগমন বিরোধী আন্দোলনে তিনি অগ্রনী ও সাহসী ভুমিকা রাখেন।

এ সময় স্বৈরাচারী বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে নগরীর গরীবুল্লাহ শাহ মাজার মোড়, ওয়াসা মোড়, ইস্পাহানী-টাইগারপাস মোড়, দেওয়ান হাট চৌমুহনী-বাদামতলী মোড়, কদমতলী ও অলংকার মোড়ের প্রতিটি কর্মসুচীর অন্যতম চেনামুখ ছিলেন ফরিদ মাহমুদ।

চট্টগ্রামের বিএনপি ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসীদের দুর্গখ্যাত আমবাগান-পাহাড়তলী, পাঞ্জাবী লেইন, মাষ্টার লেইন, সরাইপাড়া এলাকায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে প্রতিষ্টিত করে সংগঠনের ভীত মজবুত করতে প্রশংসিত ভুমিকা রাখেন তিনি।

স্বৈরাচারী বিএনপি-জামাত সরকারের সময় বিএনপি ক্যাড়ারদের হামলায় গুরুতর আহত এবং ১৯৯৪ ও ২০০৪ সালে দুইবার হয়রানীমুলক মিথ্যা মামলায় আটক হয়ে কারাবরন করেন তিনি।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার আমলে বিএনপি-জামাতের জালাও পোড়াও বোমাবাজি প্রতিরোধে তিনি সাহসী উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

ফলশ্রুতিতে ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ সরকার আমলে হরতাল-অবরোধে গরীবুল্লাহ শাহ মাজার মোড় হতে বাদামতলী মোড় পর্যন্ত এবং টাইগারপাস থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত এলাকা ছিল বিএনপি-জামাতের আন্দোলনমুক্ত।

যে কারনে লালখান বাজার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের আহবায়ক থেকে সৈয়দ মাহমুদুল হকের আহবায়ক কমিটিতে নগর যুবলীগের রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট হন তিনি। নগর যুবলীগের চন্দন-মশিউর কমিটিতে সংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি।

ওয়ান ইলেভেন সরকারের আমলে সংগঠনের চরম দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রেখে কৌশলে নানা কর্মসূচী পালন করেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির দাবীতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে তিনি পোষ্টার লাগান। নেতাকর্মীরা বিপদে আপদে পাশে পেয়েছেন তাকে,তৃনমুলের কর্মীদের সাথে সবসময় যোগাযোগ রয়েছে তার।

ফরিদ মাহামুদ ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নেতাকর্মীদের সংঘটিত করতে কাজ করেছেন । সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সেই ১৯৯৯ সনে আমি মক্কায় হজ্ব পালনের সময় মিছফালাহ কাবা ঘরের সামনে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন“অডা ফরিদ মাহামুদ কেন, ভালা না, বললাম, হ্যা ভালো । দুজনের গায়ে এহরামের কাপড় । দেশে এসে ফরিদ মাহামুদকে কাছে টেনে নিলেন ।

মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র থাকাকালীন যারা তার কাছ থেকে ও থাকে ব্যবহার করে কোটিপতি হয়েছে তারা এখন ছায়ামারান না চশমা হিলের বাসবভনে এমন অনেক নেতাকেও দেখেছি । সে ক্ষেত্রে ফরিদ মাহামুদ ব্যতিক্রম। তিনি মুনাফেকি করেননি।

খোজখবর বর্তমানে নগর যুবলীগের যুগ্ন-আহবায়ক ফরিদ মাহমুদ বিগত আট বছরে বিএনপি-জামাত জোটের যুদ্ধাপরাধের বিচার ও জাতীয় নির্বাচন ২০০৯ বানচাল করার ষড়যন্ত্র, হেফাজতের তান্ডব, জালাও পোড়াও পেট্রোল সন্ত্রাস ও মানুষ হত্যা রাজনীতির বিপরীতে তিনি দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে প্রতিরোধ করেন তিনি।

১০০ দিনের অবরোধের নামে সারাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব ও মানুষকে দুর্ভোগে নিমজ্জিত করার সংকল্পকে ব্যর্থ করে দিতে সাহসী ও গৌরবোজ্জল ভুমিকা ছিল ফরিদ মাহমুদের।

শিশুকালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পিতা হারা ফরিদ মাহমুদ ব্যবসা, রাজনীতি, সমাজ -সংস্কৃতি ও সাহিত্য সাধনায় সমানভাবে নিয়োজিত।

চট্টগ্রামের আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতিতে অন্যতম মেধাবী নেতা ফরিদ মাহমুদ ১৯৯৩ সাল থেকে পত্র পত্রিকায় কলাম লেখা ছাড়াও অসংখ্য গল্প, কবিতা, নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

’আছো আমার হৃদয় ভরে’ শিরোনামে মম প্রকাশ থেকে প্রথম গল্প গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ এর একুশে বইমেলায়। প্রথম উপন্যাস ’একটি নীল পদ্ম’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ এর একুশের বই মেলায়। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ হতে’ মেঘ না চাইতে জল’ গল্পের বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৪ এর একুশের বই মেলায়।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন, টিভি জার্নালিষ্ট ইউনিয়ন, সংবাদপত্র হকার্স এসোসিয়েশন, বিজয়ের বইমেলা, কথাশিল্পী শওকত ওসমান স্মৃতি পরিষদ, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন সংগঠনের আজীবন দাতা সদস্য, সংগঠক ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের স্বল্পকালীন অতিথি প্রযোজক ছিলেন তিনি। ব্যক্তিগত পেশায় এ্যাডভাটাইজিং ও ট্রেডিং ব্যবসায়ী ফরিদ মাহমুদ দুইপুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।

 

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.