বিশ্বসেরা বন্দরের তালিকায় এগিয়েছে ‘চট্টগ্রাম বন্দর’

0

অর্থ ও বাণিজ্য, সিটি নিউজ :: বিশ্বের শীর্ষ ১০০ সমুদ্রবন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান এখন ৭০তম। ২০০৯ সালে এই বন্দরের অবস্থান ছিল ৯৮তম। ধাপে ধাপে এখন তা ৭০তম স্থানে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ আট বছরে দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরটি ২৮ ধাপ এগিয়েছে।

কনটেইনার ওঠানামা এবং প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় শিপিং বিষয়ক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম লয়েডস লিস্ট ২০১৭ সালের কনটেইনার ওঠানামা বিবেচনায় নিয়ে ২০১৮ সালে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্ট বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছে তাদের ওয়েবসাইটে।

বিশ্বের ১০০টি শীর্ষ বন্দরের তালিকায় প্রথমে রয়েছে চীনের সাংহাই পোর্ট। ২০১১ সাল থেকেই এই বন্দরটি তালিকার শীর্ষে রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর বন্দর। তৃতীয় স্থানে থাকা চীনের শেনজেন পোর্ট।

প্রথম ১০টির মধ্যে সাতটিই হচ্ছে চীনের বন্দর। তালিকায় ভারতের মুম্বাইয়ের জওয়াহেরলাল নেহরু বন্দরের অবস্থান ২৮তম; আর ভারতের চেন্নাই বন্দরের অবস্থান ৯৯তম। এ ছাড়া পাকিস্তানের করাচি বন্দরের অবস্থান চট্টগ্রাম বন্দরের অনেক পরে ৮৩তম।

আর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর যেসব বন্দরের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কনটেইনার পৌঁছায় সেই বন্দরগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং হচ্ছে ১২তম এবং তানজুম পেলিপাস বন্দর হচ্ছে ১৯তম অবস্থানে। শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরের অবস্থান হচ্ছে ২৪তম।

এব্যাপারে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এম এ লতিফ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিক ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়নের প্রমাণ হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ওঠানামার এই বড় প্রবৃদ্ধি। যেভাবে দেশ আগাচ্ছে সেভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়নি, টার্মিনাল-জেটি বাড়েনি। এর পরও বিদ্যমান সক্ষমতা দিয়ে বন্দর যেভাবে সামাল দিচ্ছে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, স্বাধীনতার পর দেশে জেটি হওয়ার প্রয়োজন ছিল ৭০টি কিন্তু হয়েছে মাত্র সাতটি। ফলে বন্দরের অবকাঠামো প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। বে টার্মিনালসহ বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে যেই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেগুলো নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নের দিকে বন্দরকে জরুরিভাবে নজর দিতে হবে। তা না হলে আমাদের সামনে বিপদে পড়তে হবে।

লয়েডস লিস্টের তালিকা মতে, চট্টগ্রাম বন্দর ২০১৭ সালে ২৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৭ একক কনটেইনার ওঠানামা করেছে; যার প্রবৃদ্ধি ৯.৪ শতাংশ। ২০১৬ সালে এই বন্দর ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯০৯ একক কনটেইনার ওঠানামা করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর।

৩০ বিলিয়ন তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চট্টগ্রাম বন্দর বড় অবদান রাখছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয় বন্দরের ডিজাইন অনুযায়ী এটি পুরনো বন্দর এবং বন্দরের ইয়ার্ড ও যন্ত্রপাতিগুলো পুরনো। গত বছরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ‘কি গ্যান্ট্রি ক্রেন’ অচল থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

সেখানে আরো বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় বন্দরের এই অগ্রগতি এখন নিজের জন্যই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর পরও বন্দরের ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রশংসা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

এ ছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০১৮ সালের মধ্যেই ছয়টি কি গ্যান্ট্রি ক্রেন যুক্ত করা, বন্দরের সম্প্রসারণ, নতুন টার্মিনাল-জেটি নির্মাণ প্রকল্পের প্রশংসা করা হয়েছে। দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড, ভারতের আদানি পোর্ট এবং চায়না মার্চেন্ট পোর্টের সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে বন্দরের নতুন টার্মিনালে অংশগ্রহণের আগ্রহের কথাও গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে।

রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ১০০টি বন্দরের গড় কনটেইনার প্রবৃদ্ধি ছিল গড়ে ৬ শতাংশ কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবৃদ্ধি প্রায় ১০ শতাংশ। ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল ৭১তম, ২০১৫ সালে ৭৬তম, ২০১২ সালে ৯০তম এবং ২০০৯ সালে ৯৮তম।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আজিজ বলেন, বিদ্যমান জেটি-টার্মিনাল এবং যন্ত্রপাতি দিয়ে পণ্য ওঠানামার ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বন্দর ব্যবহারকারীদের নিবিড় সহযোগিতার কারণেই এই অর্জন হয়েছে।

প্রবৃদ্ধি সামাল দিতে বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করা এবং এই বছরের মধ্যে অনেক আধুনিক যন্ত্র যোগ করে কনটেইনার ওঠানামা আরো গতিশীল করার আশাবাদের কথা বলেন বন্দর চেয়ারম্যান।

কনটেইনার ওঠানামার দিক থেকে শীর্ষে থাকলেও কাঙ্ক্ষিত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বন্দর ব্যবহারকারীদের। তবে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বক্তব্য হচ্ছে, চট্টগ্রাম বন্দর হচ্ছে শেষ গন্তব্য। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কা হচ্ছে ট্রানশিপমেন্ট পোর্ট।

সুতরাং সেই বিবেচনা এই তালিকায় আনা হয়নি। আর বিশ্বের কোথাও বন্দরের ভেতর এফসিএল কনটেইনার বা কনটেইনার থেকে পণ্য খুলে সরবরাহ দেওয়ার নিয়ম নেই। এই পদ্ধতি চালু না থাকলে চট্টগ্রাম বন্দর আরো বহু ধাপ এগিয়ে যেত। আর কম সময়ে ব্যবহারকারীরা পণ্য ছাড়ের সুযোগ পেতেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.