চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগে নতুন কমিটি আসছে

0

জুবায়ের সিদ্দিকী,সিটি নিউজ :  চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে জহুর আহমদ চৌধুরীর ছেলে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে করা হলেও কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ারও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম সফরের সময়। গনপুর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এ ব্যাপারে বলেছেন,’ মহানগর কমিটি মেয়াদোত্তীর্ন হয়ে যাওয়ার পর সভাপতির পদটি শুন্য হয়ে যাওয়াতে প্রধানমন্ত্রী এটি ভেঙ্গে দেওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

হয়তো নতুন কমিটির ব্যাপারে ভালো করে খোঁজ খবর নিতে তিনি আপাতত: মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। জানা গেছে,’ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বয়োজ্যেষ্ট মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে দায়িত্ব পালনে সতর্ক থাকতে বলেছেন। নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী আ.জ.ম নাছির উদ্দিন ঘরানার। মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির ৮০ ভাগ নেতাকর্মী মহিউদ্দিন চৌধুরী অনুসারী ও শিষ্য। অন্যদিকে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডেও নেতাকর্মীদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হওয়াতে তৃনমুল নেতাকর্মীদের সাথে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির সঙ্গে মতবিরোধ, কর্মীদের স্বার্থ, ইচ্ছা বা অনিচ্ছা নিয়ে দুরত্ব সৃষ্টির আশঙ্খা করছেন সাধারন নেতাকর্মীগন।

এ ক্ষেত্রে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী নেতাকর্মীদের উপেক্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। কারন মহিউদ্দিন চৌধুরী জীবিত থাকাকালীন মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল খারাপ। দলীয় সুত্রে জানা গেছে, শারিরিকভাবে অক্ষম, অসুস্থ, দুর্বল মাহতাব উদ্দিন কানেও শোনেন না। নিজে একা চলাফেরা করতে পারেন না। এ ছাড়া ১৯৭৫ সালে মরহুম এম.এ মান্নান যখন সভাপতি তখন মাহতাব উদ্দিন সাধারন সম্পাদক ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যাকান্ডের পর তিনি সম্পুর্ন নিস্ক্রিয় হয়ে যান। এ সময় সাহসী ভুমিকা রেখে সাধারন সম্পাদক হন এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। সংগঠনে নিস্ক্রিয় নেতাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করায় নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও গুঞ্জন ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

এমনকি ওয়ার্ড কমিটি নিয়েও বিপত্তি ঘটতে পারে। এমন একজন নিস্ক্রিয় নেতা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বা আপাতত হলেও নগরীর বেশিরভাগ নেতাকর্মী তা সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না। দলীয় সুত্রে জানা গেছে, সিনিয়র নেতাদের অনেকেই বয়সের ভারে ন্যুজ। এভাবে দলীয় ও সাংগঠনিক কর্মকান্ডে নিস্ক্রিয়তা, গ্রহনযোগ্যতা ও দল চালানোর মত সক্ষমতা না থাকায় অনেকে আছেন পিছিয়ে। এদিকে অনেক নেতাকর্মীদের ধারনা আ.জ.ম নাছির উদ্দিনকে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে নতুন মুখ এবং চমক সৃষ্টি করে ত্যাগী, মাঠ পর্যায়ের তৃনমুলের কান্ডারী মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ফরিদ মাহমুদ ও শফিক আদনানের মত তারুন্যকে প্রাধান্য দিয়ে কমিটি পুনর্গঠিত হতে পারে।

যদিও কোন কোন শীর্ষ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে সাধারন সম্পাদক করার মত দিলেও দলীয় হাইকমান্ড মনে করছে, নওফেল কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের মত গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বরং তাকে ঢাকা বিভাগ থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্ব প্রদান করলে তিনি নগর আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড গতিশীল ও সহযোগিতা প্রদান করতে পারবেন। আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগরের কর্মকান্ড, সাংগঠনিক ভিত্তি, নেতাদের রাজনৈতিক গ্রহনযোগ্যতা, শীর্ষ এমপি-মন্ত্রী থেকে শুরু করে অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতা, নগর আওয়ামী যুবলীগের ’চার খলিফার’ রাজনৈতিক কর্মকান্ড একটি শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরন করেছেন।

এই রিপোর্টে মহিউদ্দিন চৌধুরীর একান্ত সান্নিধ্যে দীর্ঘদিন যারা রাজনীতি করেছেন, রাজপথে সবসময় সক্রিয় ছিলেন, নগরীর সকল ওয়ার্ডে তৃনমুল নেতাকর্মীদের সাথে সবসময় যোগাযোগ ও গভীর সম্পর্ক, সাংগঠনিক কর্মকান্ডে দক্ষতা, দল পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন সহ নানা বিষয় উঠে এসেছে রিপোর্টে। এই রিপোর্টে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও মহিউদ্দিন চৌধুরীর অত্যন্ত ঘনিষ্ট সহচর, জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের সফলতার ফিরিস্তির ফেরিওয়ালা ফরিদ মাহমুদ এর নাম উঠে এসেছে। তার পাশাপাশি আলোচনায় আছেন তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা শফিক আদনানও।

তবে সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্য প্রচারে লিফলেট, পোষ্টার, সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ শিরোনামে প্রকাশনা, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সরকারের সাফল্যে এবং জামায়াত বিএনপির অপশাসন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভয়াবহতার ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করে জনগনকে উজ্জিবীত করা, সসজিদ, মাদ্রাসা, গির্জা, মন্দির টেম্পলে সরকারের উন্নয়ন প্রচারের কর্মকান্ড ‘চট্টগ্রামের দলীয়’ ফোরামের বাইরে সুশীল সমাজ ও গনমাধ্যমগুলোতে বেশ আলোচিত হচ্ছে।

এছাড়া শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতি-খেলাধূলা ও সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত করে সংগঠনের নেতা কর্মীদের কাছে যেমনি বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে তেমনি গোয়েন্দা রিপোর্ট ও দলীয় হাইকমান্ডের কাছে শফিক আদনানের চাইতে ফরিদ মাহমুদ অনেক বেশী বিবেচনায় রেখেছেন বলে জানা গেছে। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে এসে ক্ষমতার হালুয়া রুটির ভাগ বসাতে ও আখের গুছাতে যখন ব্যস্ত অধিকাংশ নেতা তখন এমন একজন নেতা ব্যতিক্রম বলে দলীয় হাইকমান্ডও অবগত হয়েছেন।

দলীয় সুত্র জানায়, ফরিদ মাহমুদের এই মহতি উদ্যোগ সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। মাহতাব উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হওয়ার পর ঘোষনা করেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাসির উদ্দিন না আসা পর্যন্ত দলীয় কোন কর্মসূচীতে তিনি যাবেন না। নগর আওয়ামীলীগের কর্মসূচী অনুসারে নেতাদের কবর জেয়ারত, সদ্য প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হলেও বেশীরভাগ সময় নাসির বলয়ের নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে রাখতে দেখা যাচ্ছে। এই শিবিরের কয়েকটি অনুষ্ঠানেও অতিথি হিসেবে তিনি উপস্থিত থেকেছেন। জানা গেছে, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদের জন্য অনেকেই চেষ্টা তদবিরে রয়েছেন। তবে আলোচনায় থাকা সহ-সভাপতি মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি।

মন্ত্রীত্ব নেওয়ার পর থেকে মহানগরীর রাজনীতিতে তিনি দীর্ঘদিন অনুপস্থিত। নেতাকর্মীদের সাথেও রয়েছে দুরত্ব। সভাপতি হওয়ার দৌড়ে আছেন সহ-সভাপতি ডা. আফসারুল আমীন এমপি। তিনিও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে সক্রিয় নয়। এ ছাড়া আছেন সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও নঈম উদ্দিন। দলের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের কিছু নেতার সাথে দুরত্ব রয়েছে ডা. আফসারুল আমীনের। খোরশেদ আলম সুজন সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ময়দানে সক্রিয় রয়েছেন। কিন্তু বাকশাল করার কারনে অনেকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন এই নেতাকে। নঈন উদ্দিন চৌধুরী নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হলেও রাজনীতির মাঠে তার গ্রহনযোগ্যতা ও এতবড় দল চালানোর ব্যাপারে অনেকের সংশয় রয়েছে।

অন্যদিকে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সহ চন্দন ধর ও মশিউর রহমান, আলতাফ হোসেন বাচ্চুকে সভাপতি মন্ডলীতে রেখে সম্পাদকীয় পদগুলোতে দলের আন্দোলন সংগ্রামে পরিক্ষিত, ত্যাগী অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হতে পারে। সিডিএর চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম ও সুনীল সরকারও সভাপতি পদের জন্য লবিং করছেন বিভিন্ন মহলে। এই তালিকায় মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে নওফেলও রয়েছেন।

আ.জ.ম নাছিরকে সভাপতি করা হতে পারে যেভাবে মহিউদ্দিন চৌধুরী সভাপতি হয়েছেন। তিনি সভাপতি পদে দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তবে মেয়র নাছিরের বিরুদ্ধে নেতিবাচক অনেক অভিযোগ প্রধানমন্ত্রী অবগত হওয়া ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের যুগ্ন সচিবের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ করে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় উঠে। যে কারনে নারায়নগঞ্জের মেয়রকে উপমন্ত্রী, রংপুরের মেয়রকে যেখানে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা দেওয়া হলেও চট্টগ্রামের মেয়রের এ ধরনের মর্যাদা জোটেনি।

এমন অবস্থায় আ.জ.ম নাছির উদ্দিনকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে নাও আনা হতে পারে। এমনকি জোয়ারের পানি ও জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মেয়রের দায়িত্বে তিন বছরের মাথায়ও কোন উন্নতি বা দৃশ্যমান করতে না পারায় নগরবাসীর কাছেও তিনি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন। চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর এক সময়কার ওয়ার্কিং ফোর্স হিসেবে বিবেচিত রাজনীতিতে প্রবীণ সুনীল সরকার, বদিউল আলম, এম এ রশিদ, রেজাউল করিম চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে আনেকটা নিস্ক্রীয়।

তাই আগামী কমিটিতে এসব অভিজ্ঞ প্রবীণ নেতারা উপদেষ্টা মন্ডলীল কাতারে চলে যেতে পারেন। তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কোন কথা নেই। দৃশ্যপট বদলে যেতে পারে এমনভাবে যে, সকল সমীকরনের সমাপ্তী টেনে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সুত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক শীর্ষ নেতার কাছে অনেক নেতা ধর্না দিচ্ছেন পদ-পদবীর জন্য। এদের মধ্যে এমন অনেক নেতা আছেন যাদের ছায়াও কর্মীরা বছরে একবারও দেখেন না। ড্রয়িং রুম রাজনীতিতে অভ্যস্থ এসব নেতা খুব বেশি অহংকারী।

তৃনমুলের নেতাকর্মী ও সাধারন মানুষের সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আন্দোলন, সংগ্রামে রাজপথে নেই এমন অনেকে মহানগরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া ফিতা কাটা, ব্যবসায়, ধান্ধায়, ফাঁকাবাজিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন অনেক শীর্ষ নেতা। এখনও মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকাহত নেতাকর্মীগন। এই শোককে শক্তিতে পরিনত করে নেতাকর্মীগন এগিয়ে চলছেন। যদিও চক্রান্তকারী ও ল্যাং মারার রাজনীতিতে অভ্যস্থ একশ্রেনীর মুখোশধারী রাজনীতিবিদরা নানা চক্রান্ত করে যাচ্ছেন।

যারা মহিউদ্দিন চৌধুরী জীবিত থাকাকালে ধারে কাছেও যেতে পারেনি তারাও এখন বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ডকে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে শক্তিশালী অবস্থানে রাখতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর একান্ত আনুগত্যে ও সান্নিধ্যে থাকা যে কোন নেতা হোক তাকে নগর আওয়ামী লীগে সংযুক্ত করে দলকে সুসংহত করতে উদ্যোগ নেওয়া জরুরী বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.