পবিত্র মাহে রমজানের প্রস্তুতি

0

আবছার উদ্দিন অলি, সিটি নিউজ :: মুসলমানদের প্রধান ইবাদত-বন্দেগীর মাস রমজান। বছর ঘুরে আবার এলো রোজা। মাহে রমজান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত তিন ভাগে বিভক্ত। সে-ই সৌভাগ্যবান যে এই মাসে পূর্ণ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও সংযমের সাথে রোজা পালন করবে। সব ধরনের অন্যায় অসত্য ত্যাগ করে আদর্শ নীতি-নৈতিকতা ও উত্তম চরিত্র দিয়ে মানুষকে আল্লাহর রহমতের বৃত্তে আসার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর কাছে প্রিয় হতে পারলে মানুষের কাছে প্রিয় হওয়া যায়। রোজা আমাদের শিক্ষা দেয় আত্মশুদ্ধি, ব্যক্তিত্বের সংস্কার এবং নিজস্ব সংকীর্ণতা গুলো কাটিয়ে ওঠার। মাহে রমজান। রাসুল (সা:) এর প্রবর্তিত পবিত্র ইসলাম এই রমজান মাসে জগতের সকল আস্তিক মানুষের জন্য এনে দিল অফুরণীয় আনন্দ, সিয়াম সাধনার প্রার্থীত পথের সন্ধান। যুগ সমস্যার প্রচন্ড ব্যাতি ব্যস্ততার মাঝে একটি স্বর্গীয় আনন্দপূর্ণ সময় এই রমজান। সমাজ, রাষ্ট্র, পরিবারে ভালবাসার নিবিড় বন্ধন অটুট করতে রমজানের গুরুত্ব অপরিসীম। নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থেকে মানুষ এই মাসেই স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করতে আকুল হয়ে উঠে। রোজা আমাদের নতুন করে আত্মশুদ্ধির পথ দেখায়। ভালভাবে পথ চলতে শেখায়। রোজা আমাদের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত একটি শিক্ষা। রোজার আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আলোর পথে নিজের জীবন পরিচালিত করা উচিত। রোজা আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম। আমরা রোজা রাখব, পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ও তারাবিহ’র নামাজ পড়ব, গরীবকে সাহায্য করব। এর মাধ্যমে আল্লাহ্র প্রিয়পাত্র হব।

সিয়াম সাধনার এ মাসটিকে ঘিরে মুসলিম পরিবারগুলোর নানান প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে ক’দিন আগ থেকেই। এসব প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের কেনাকাটা। কারণ রমজান মাসের শুরু হতে যাচ্ছে। এ মাসকে পুঁজি করে কতিপয় মুনাফা খোর ব্যবসায়ী নিজেদের আখের গোছাতে ও রীতিমতো তৎপর হয়ে উঠেছে। এর প্রভাব ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের খোলা বাজারে দারুণভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দরদামের উর্দ্ধগতি। এমনিতে ব্যবসা বাণিজ্যের দুদর্শাগ্রস্থ এই সময়ে পাইকারী বাজার কয়েকজন পুঁজিপতি আর মহাজনের হাতে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। যারা দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির সংকেত দেয়, নিয়ন্ত্রণ করে, এমনকি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার হীন মানসে তারা গুদামজাত করে রাখে, সিয়াম সাধনার পাশাপাশি সংযম আত্মশুদ্ধি ও চারিত্রিক উৎকর্ষতার মাস রমজান হলে ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার উল্টোরূপ দেয়। রমজান আসলে দ্রব্যমূল্যর উর্দ্ধগতি এটা যেন একটি ঐতিহ্য হয়ে গেছে। যার ফলশ্র“তিতে ক্রেতা সাধারণ রমজান এলেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আশংকায় উৎকন্ঠিত থাকেন। রমজানের দিনে যে সব পণ্যের বেশী প্রয়োজন পড়ে সে জাতীয় দ্রব্যের মূল্য এখন আকাশ ছোঁয়া। পৃথিবীর সব দেশে উৎসব এলে পণ্য সামগ্রীর দাম কমে কিন্তু বাংলাদেশে তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়। এটিতো রমজানের শিক্ষা নয়?

মাহে রমজানের মাস মূলত প্রতিটি মানুষের মাঝে লাগামহীন ব্যয় বাহুল্য বর্জনের শিক্ষাকে রপ্ত করার মাস। অথচ আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় ইসলামের যুগোপযোগি শিক্ষা-সংযম, নীতি-নৈতিকতা আর আত্মসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যে জীবন বিধান প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মানুষের জন্য বিধান করে দিয়েছেন তা থেকে আমাদের যোজন ব্যবধান লক্ষ্য করি। তবুও ধনী-দরিদ্রের এক কাতারে আনার এই আয়োজনে বিশ্বের রোজার সংস্কৃতির সাথে আমাদের চট্টগ্রামের রোজাদারী মুসল্লীদের ব্যবধান নেই। দেখা যায় প্রতিটি মানুষ অবলীলায় অন্তরের উদারতা দিয়ে জানা কিংবা অপরিচিত যে কাউকেই সাথী করে ইফতারে অংশ নেবার ঐকান্তিক, মহত্তম আকুতি আমরা প্রায়স দেখতে পাই। রোজার একটি বড় অংশ হচ্ছে ইফতার। অ ল ভেদে ইফতারের আয়োজন ভিন্নরকম। চট্টগ্রামের ইফতার সংস্কৃতির আলাদা বৈশিষ্ট রয়েছে। এই অ লের মানুষজন এমনিতেই ভোজন রসিক। তাই বাহারি রঙের আইটেম থাকে ইফতারিতে। মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব মাহে রমজান, উৎসব মুখরভাবে পালিত হচ্ছে। রমজান মাসে ইফতারির কদর বেশ আকর্ষনীয়। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার রোজাদারদের কাছে খুব প্রিয় বিষয় হয়ে এসেছে যুগ যুগ ধরে। এর ধর্মীয় গুরুত্ব যেমন রয়েছে তেমনি সামাজিক গুরুত্ব বহন করে। পরিবার পরিজন নিয়ে এক সাথে ইফতার এবং অফিস আদালত কলকারখানা মালিক শ্রমিক মিলিয়ে একসাথে ইফতারের সংস্কৃতি আমাদেরকে ঐক্যের বন্ধনে অটুট থাকার মানষিকতা জাগিয়ে তোলে। আমরা সবাই এক হয়ে শ্রেণী বৈষম্য ভূলে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় একসাথে ইফতার করে থাকি।

চট্টগ্রামে মূলত জিইসি’র মোড়, আগ্রাবাদ, জামাল খান, নিউ মার্কেট, খুলশী, আন্দরকিল্লা ও স্টেডিয়াম পাড়ায় ইফতার সামগ্রী সবচেয়ে বেশি বিক্রয় হয়। এই এলাকা গুলোতে অভিজাত দোকান গুলো থাকার কারণে ক্রেতা সাধারণের সমাগম বেশি ঘটে। বিকেল হওয়ার সাথে সাথে গ্রাম গঞ্জে ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরের পাড়া, মহল্লা, বিপনি কেন্দ্র ও অভিজাত এলকায় হরেক রকম রসনা বিলাসী ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। বেগুনী, পেয়াজু, মরিচ, চপ, ডিম চপ, মার্টন হালিম, বীফ হালিম, ফিস কাবাব, চিকেন উইংস, ফিস বল, কাবাব, ভেজিটেবল রোল, চিকেন রোল, লাচ্ছা সেমাই, ফিন্নি, জিলাপী, চিকেন চাপালিজ, আখনী বিরানী, চিকেন বিরানী, হরেক রকম ইফতারী বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামের বনেদি ইফতারি প্রস্তুত ও বিপনন কেন্দ্র গুলোতে এবার নতুন নতুন আইটেম এসেছে। টক, ঝাল, মিষ্টি মিশেলে এসব আয়োজনে আইটেম গুলোর জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে রোজাদাররা। যেমন- রেডিসন স্পেশাল হালিম, আগ্রাবাদ হোটেলের চিকেন চাপ, ওয়েলপার্কের গড়িয়া হালিম, মেরিডিয়ানের স্পেশাল ভেজিটেবল-বীফ চিকেন মাসালা হালিম, পেনিনসুলার হরেক রকম স্বাস্থ্যকর ফলদ হালিমের জন্য ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড় যেন ইফতারে কেনার উৎসব। ব্রোস্ট ক্যাফে, বনফুল, আড্ডা, ওয়েলপার্ক, লর্ডস ইন, ডায়মন্ড, মাল , দারুল কাবাব, ফুলকলি, মিষ্টিমেলা, ওয়েলফুড, ইকবাল সুইটস, ফেভার্স, রেডচিলি, প্রজাপতি পার্ক, আগ্রাবাদ হোটেল, হাইওয়ে সুইটস, ধমফুক, পিঠাস্টপ, সাফরান, জাফরান, গ্লিডি গার্ডস, রোদেলা বিকেল, সাংরিলা, হোটেল সেন্ট মার্টিন, এম্ব্রোসিয়া, কে.এনজি, নবাবী, সিলভার স্পোন, ফেভার ইন, সেভার ইন, কফি ইন, মধুবন, বনলতা, মুন বেকারী, ফুড কর্ণার, ওরিয়েন্টাল, খাবার মেলা, হোটেল ডিলাইট, মিঠাই, বোম্বে সুইটস, গ্রিন চিলি, স্বাদ, মিষ্টি মুখ, নিয়ে এসেছে প্রতি বছরের মত বাহারি ইফতার। চিকেন হালিম ৪০০ টাকা, মার্টন হালিম ৫০০টাকা, বীফ হালিম ৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফিন্নি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, মিষ্টি দই ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা, রোজা উপলক্ষ্যে চলছে ইফতারি বেচা কেনা। ডিজিটাল ব্যানারে স্পেশাল ইফতারি বিক্রির হাট-ডাক চলছে। স্পেশাল ইফতারির দৌড়ে নরমাল খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্বাস্থ্যকর কি অস্বাস্থ্যকর যাচাই বাচাই করার তাগিদ কারো নেই। লাল রং মিশ্রিত পোড়া তেল দিয়ে ভাজা ইফতারি, রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে ভাজা মুরি, কেমিক্যাল যুক্ত পেপে, কলা, আম, ফরমালিন যুক্ত মাছ রোজা রাখার পর খালি পেটে রোজাদাররা খেয়ে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশী। এ সমস্ত বিষাক্ত ভেজাল খাবার খেয়ে হৃদরোগ, জন্ডিস, ডাইরিয়া, ডায়াবেটিক, কিডনী, লিভার ইত্যাদি রোগের প্রভাব বিস্তার করতে পারে। বিকেল নামার আগেই শুরু হয় ইফতারের তোড়জোড়। হোটেল রেস্তোরা মসজিদ বিপনি বিতান গুলার সামনে বাজার গুলার পথের ধারে বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ, জিইসি, নিউ মার্কেট, বহদ্দার হাট, চকবাজার, লালখান বাজার, দেওয়ান হাট, হালিশহর, অলংকার মোড়, আন্দরকিল্লা, ষ্টীল মিল, কাঠগড়, সদরঘাট, মুরাদপুর, কাজের দেউড়ী, জামালখান সহ পুরা নগরী হয়ে উঠে ইফতারির বাজার। ৫টা বাজার সাথে সাথে ইফতারি কেনার জন্য উপচে পড়া ভিড় দেখা যায় নগরীর প্রাণ কেন্দ্র গুলোতে কিন্তু ভাবনার বিষয় হচ্ছে এই যে ইফতারি সামগ্রী যা খাচ্ছি, তা কতটা স্বাস্থ্যকর। কেমিক্যাল যুক্ত, রং মিশ্রিত, চর্বি যুক্ত, খোলামেলা, ভেজার খাবার সারাদিন রোজা রাখার পর যা পান করছি তা অনেকটাই বিষ।

ভেজাল বিরোধী অভিযান চলছে, এরপরও নকল ভেজাল সেমাই ও নুডুলস কারখানা সন্ধান মিলছে। অভিজানে প্রতিদিন জরিমানা করে চলছে। তারপরও থেমে নেই ওজন এ কম দেওয়া ভেজাল খাদ্য বিক্রি বেশী দামে বিক্রির প্রতিযোগিতা। এসব অপকর্ম যেন রোজার জন্যই অপেক্ষা করে বসে থাকে। পুরো রমজান মাস জুড়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। সেই সাথে অপরাধীদের জেল জরিমানা করা জরুরী। ভেজাল খাদ্য উৎপাদন বিপনন বিরুদ্ধে আমাদের জোরালো অভিযান চলতে থাকলে ভেজাল কম হবে। পৃথিবীর সব দেশে তাদের উৎসব গুলোতে দ্রব্য মূল্যের দাম কম। সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি হয়। যথা রকম সুযোগ সুবিধা থাকে তা উৎসব গুলোতে প্রদান করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে বিপরীত চিত্র। রমজান এলেই দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়ানো যেন রীতিমত কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে এর থেকে বেরিয়ে আসা যাচ্ছেনা। রোজা এলেই মিথ্যা কথা বলা, ঠকবাজি, চুরি, ওজনে কম দেওয়া ভেজাল বিক্রি দ্রুত বেড়ে যায়।

সরকারী বেসরকারী তৎপরতার কারনে পাইকারী ও খুচরা বাজারে পণ্যের সরবরাহের কোন ঘাটতি নেই। সময়মত আমদানি হয়েছে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্য। বিপনন ব্যবস্থার কোন অনিয়মের খবর আপাতত নেই, রাজনৈতিক আন্দোলনও তেমন জোরালো নয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা যেন বেপরোয়া। কোন নিয়মনীতি সরকারী ঘোষণা মানতে রাজি নয় তারা। বড় ছোট ব্যবসায়ীরা এখন যেন একজোট। সিন্ডিকেট করে রোজার নিত্য পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ছোলা, বেসন, চিনি, ডালের দাম। বড় মজুদ থেকে সরবরাহ কমিয়ে বাজারে কৃক্রিম সংকট তৈরির ক্ষমতা রয়েছে হাতেগনা কয়েক জন ব্যবসায়ী। তারা দাম সামান্য বাড়িয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে। ব্যবসায়ীদের মনোভাব এমন হয়েছে যে, পণ্যের জন্য দাম হাঁকা হবে ক্রেতারা সেটাই দিতে প্রস্তুত থাকে। বাজারে এই ফ্রি ষ্টাইল নীতির ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। যারা রোজা আগের দিন বাজার করেছেন তাদের কাছে এর উত্তর রয়েছে। বাজার অর্থনীতির নিয়ম মাফিক নয়। চলছে ব্যবসায়ীদের মর্জি মাফিক।

রমজানের ইফতার সংস্কৃতি চট্টগ্রাম নগরীতে একটি সার্বজনীন আয়োজন হিসাবেই আমরা দেখতে পাই। কুলী-মজুর সকলেই কাতারভুক্ত হয়ে ইফতারে অংশগ্রহণ এমন আনন্দ বিশ্বের কোন উৎসবে অনেকটা বিরল। দরিদ্র ভূখাদের জন্যও রোজার আনন্দ ঈদ অবধি ইত্যাকার প্রাত্যাহিক হৃদয় ঘনিষ্ঠ আয়োজন। রোজা রাখি কি না রাখি তাতে কোন বাধ্যবাধকতার বালাইও যারা নাই বলে মনে করেন সেই তারা রোজদারদের সাথে সমানে ইফতারের মাহফিলে একিভূত হতে কোন কসুর নেই।

যে যার মত করে চলছে, রাস্তা ঘাটে ধুলাবালিতে ইফতার বিক্রি বন্ধ করতে হবে। বাজার মনিটরিং করতে হবে নিয়মিত। গুদামজাত করে মূল্য বৃদ্ধি কারা করছে সেদিকে গোয়েন্দা নজর দারি বাড়াতে হবে। ভেজাল খাদ্য বিক্রি বন্ধে আরো জোরালো ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। সবার আগে নিজেকে সচেতন হতে হবে। রোজার মাসে এক সাথে বাজার না করাই ভালো। এতে করে বাজারে চাপ কমবে, দাম বাড়ানোর সুযোগও থাকবেনা, সবাই যখন একসাথে পুরো মাসের বাজার করে তখনি ব্যবসায়ীরা সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে তুলে। রমজান মাসে আমরা যে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ি তা আমাদের সমাজ ব্যবস্থা তথা রাষ্ট্রকে পিছনে নিয়ে যাচ্ছে। রোজা এলে দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়ে, ঠকানোর কাজ বেড়ে যায়, মিথ্যা বলা বেড়ে যায় আর হয়রানী প্রতারণা যেন নিত্য সঙ্গী। আমরা আমাদের বিবেককে প্রশ্ন করলে এর উত্তর পাবো।

রোজার সাথে পাল্লা দিয়ে যুক্ত হয়েছে যানজট। দুপুর ৩ টা থেকে আগ্রাবাদ, বারেক বিল্ডিং, জিইসি, মুরাদপুর, কর্ণফুলী ব্রীজ, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, টেরীবাজার, আন্দরকিল্লা, নিউমার্কেট, বহদ্দার হাট, বিআরটিসি, ফলমন্ডী, যেন যানজটের দুর্গো হিসাবে প্রস্তুতি নেই। প্রথম রোজা থেকে যানজটের নতুন রূপ সৃষ্টি হয় চট্টগ্রামে। গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরম আর তাপদাহ অতিষ্ঠ নগরবাসী। বৃষ্টির দেখা মিলছেনা। নামমাত্র বৃষ্টি হলেও রাস্তা ঘাট ভাঙ্গা চুরা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযান রাস্তা স¤প্রসারন ও ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের কারনে এমনিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগর বাসীকে। তার সাথে যানজট সঙ্গী হয়েছে খুব যতœ সহকারে। রোজাকে পুঁজি করে কৃত্রিম সংকটের মাধ্যমে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করা মোটেও কাম্য নয়। ব্যবসায়ীদের একটি মাস অন্তত সংযত হওয়া উচিৎ। পাইকারী ব্যবসায়ীদের সাথে তাল মিলিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরাও ভেজার মিশ্রন কাজে লিপ্ত রয়েছেন।

রমজানের মধ্যেও লোডশেডিং এর ভূত টা যেন না থাকে। অন্তত পক্ষে সেহরী ইফতার তারাবী এই তিন সময় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে ভালো সার্ভিস দিতে হবে। নগর বাসীর মধ্যে লোডশেডিং নিয়ে যে ভয় ছিল তা রয়ে গেছে। তবে মার্কেটে বিদ্যুতের অপব্যবহার সাইন বোর্ড ও রাস্তায় অপ্রয়োজনীয় বাতি জ্বালানো বিশাল বিশাল তোরন ও গেইট নির্মান করে আলোক সজ্জার ব্যাপারে কঠোর হতে হবে পিডিবিকে। আত্মশুদ্ধি ও খোদাভীতিই সিয়াম-সাধনার মূল লক্ষ্য। রমজানে আমাদের মন-মানসিকতা পরিবর্তণ করতে হবে। রোজা সৎ, সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হতে শেখায়। এতসব অনিশ্চয়তার পরও রমজানের বাকী দিনগুলো ভালই ভালই কাটুক- এমনটিই প্রত্যাশা। ৩০ রোজার পর মহা-মিলনের ঈদ বয়ে আনুক আনন্দের জোয়ার। রোজাদারের নিকট ইফতারের যে আনন্দ তা তুলনা করা যায় না। জগতের তাবৎ, ইনসানের জন্য রোজা যে নেয়ামত পরিবহন করে এনেছে জঠিল জীবন ব্যবস্থা, মহার্ঘ বাজার দর, অসহনীয় যানজট, দূঃসহ আদ্রতা কোন কিছুই তাকে ম্লান করে দিতে পারেনা। সৃষ্টিকর্তার নামে সারা বেলা উপোষ করে ইফতার মুখে যে প্রশান্তির হাসি আর তারই গুণগান এর নমুনা কিংবা উপমা স্বর্গীয় বিষয় ছাড়া প্রার্থিব কোন আয়োজন হতে পারেনা। পুরো রমজান মাস জুড়ে সবাই ভালো থাকুন সৃষ্টি কর্তার কাছে এটাই প্রত্যাশা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.