পার্বত্য চট্রগ্রামে আরও দুইটি স্থলবন্দর হবে: নৌ পরিবহন মন্ত্রী

0

শ্যামল রুদ্র, খাগড়াছড়ি  :: নৌ পরিবহন মন্ত্রী মো. শাহজাহান খান শনিবার ২১,এপ্রিল খাগড়াছড়ির রামগড় সফরের মধ্য দিয়ে বহুপ্রতিক্ষিত রামগড়-সাবরুম স্থল বন্দর স্থাপনের কাজ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। রামগড়ের মহামুনি এলাকায় নির্মীয়মাণ স্থল বন্দর কাজের অগ্রগতি সরেজমিন দেখতেই ওই দিন তিনি মূলত রামগড় আসেন।

উভয় দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে অতি গুরুত্বপূর্ণ ফেনী নদীর রামগড়-সাবরুম অংশে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর নির্মাণ স্থল পরিদর্শন শেষে কাজের গতি আরও তরাম্বিত করতে সংশ্লিষ্টদের দিক নির্দেশনা দেওয়া হয় ।

এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের মো. শাহজাহান খান জানান, বন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছেন। এসব স্থাপনা ১০ একর জমির ওপর নির্মিত হবে।

সরকারের বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যালয় স্থাপনের অগ্রগতি দেখতে জুন-জুলাইয়ে আরও একবার রামগড় আসার কথা জানান তিনি। অবশ্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষ গত ১০ নভেম্বর তাঁদের অংশে কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

পরে মন্ত্রী রামগড়ে এক জনসভায় বলেন, ফেনী নদীর ওপর প্রস্তাবিত সেতু ভারতের ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের বানিজ্যিক রাজধানী চট্রগ্রামের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ফলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়, বানিজ্য পর্যটন এর প্রসার এবং মানুষে মানুষে সম্পর্কোন্নয়নে গোটা অঞ্চলের  উপকার হবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে সর্বোপরি গোটা এলাকায় প্রাণ চা ল্য ফিরে আসবে।

পার্বত্য চট্রগ্রামে আরও দুইটি স্থল বন্দর স্থাপনে কথা মন্ত্রী জনসভায় উল্লেখ করেন। রামগড় উপজেলা আওয়ামীলিগের আহ্বায়ক  মো. শাহ আলমের সভাপতিত্বে জনসভায় আর বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ির সাংসদ ও টাস্ক ফোর্স সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু ,উপজেলা আওয়ামীলিগ নেতা কাজী আলমগীর, জেলা পরিষদ সদস্য জুয়েল ত্রিপুরা,প্রমুখ।

   এ দিকে, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর নির্মাণ কাজ শুরুতে এ অঞ্চলের  আশা জাগানিয়া মানুষগুলো অর্থনৈতিক মুক্তির প্রত্যাশা করছেন। সমাজের খেঁটে খাওয়া, উচ্চ ও মধ্যবিত্ত সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আশা রামগড় স্থল বন্দর এই অঞ্চলের  অধিবাসীদের অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি কর্মচা ল্য সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে এবং সফল কানেক্টিভিটিতে বৈদেশিক বানিজ্যের মাধ্যমে দেশ এগুবে সমৃদ্ধির পথে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের  তুলনায় পাহাড়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম। বড় ছোট কোন ধরনেরই মিল ফ্যাক্টরি কল কারখানা না থাকায় বিপুল সংখ্যক মানুষ বেকার জীবন কাটাচ্ছেন।

      এদিকে, স্থল বন্দর নিমার্ণ কাজ শুরু করায় নতুন আশায় উজ্জীবিত এ সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ বিনিয়োগকারী-ব্যবসায়ীরা। বিশ্লেষকদের মতে, বিপুল সংখ্যক  মানব সম্পদ কাজে লাগবে অযুত সম্ভাবনার এই কর্মযজ্ঞে। ওই সময় চাকরি-বাকরি,ব্যবসা-বানিজ্যে সবার সামনেই খুলে যাবে নতুন এক স্বর্ণালী সময়,যেন বহুবছরের প্রত্যাশিত চাওয়া।

            সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,চট্রগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বা লীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়,আসাম,মনিপুর মিজোরাম,নাগাল্যান্ড এবং অরুনাচল এই সাত রাজ্যের (সেভেন সিস্টার্স) সঙ্গে ব্যবসা বানিজ্য সম্প্রসারণ করতে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার রামগড়-সাবরুম স্থল বন্দর স্থাপনে উদ্যোগী হয়। ইতিমধ্যে স্থলবন্দর কে ঘিরে বন্দর টার্মিনাল, গুদামঘর সহ অন্যান্য অবকাঠামো নিমার্ণে ভূমি অধিগ্রহণ কাজও চুড়ান্ত করেছে দুই দেশ।

    সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত জানুয়ারী মাসে রামগড় সফরের সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রামগড় স্থল বন্দরের সঙ্গে চট্রগ্রাম বন্দরের সংযোগ সড়ক (রামগড় – বারৈয়ারহাট পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার) উন্নয়নের কাজ বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকা বাস্তবায়ন করবে। এ জন্য খরচ হবে ৩ হাজার কোটি টাকা এবং সড়কটি চার লেনে উন্নিত হবে। অন্যদিকে, ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪ দশমিক আট মিটার প্রস্থ সংযোগ সেতুটির নির্মাণ ভারত করবে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ১৫০ মিটার। খরচ হবে ১১০ কোটি রুপী। নিমার্ণ সময় ধরা হয়েছে দুইবছর পাঁচমাস।

       বিশিষ্ট উপজাতি নেতা মংপ্রু চৌধুরী ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল কাদের বলেন, স¤প্রতি ভারত-বাংলাদেশ উভয় পক্ষ ত্বরিত গতিতে স্থলবন্দর বাস্তবায়নের কাজ শুরু করায় ব্যবসায়ীসহ সকল মহল আশার আলো দেখছেন। সব মিলিয়ে রামগড় স্থল বন্দর পূর্নাঙ্গ ভাবে চালু হলে বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি বিপুল জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে যে, বিশাল ভূমিকা রাখবে নিশ্চিত ভাবেই তা বলা যায়। আর যোগাযোগের ক্ষেত্রে সূচিত হবে এক নতুন দিগন্তের। আ লিক গন্ডি ছাপিয়ে এ যেন বিশ্বব্যাপি সেতুবন্ধনের এক পূর্বাভাস।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.