প্রতিশোধের রাজনীতি নয়, প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য: কর্ণেল অলি

0

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশ :: এলডিপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কর্ণেল (অবঃ) অলি আহমদ বীর বিক্রম বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন, ভোগের রাজনীতি বা জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে টিকে থাকা নয়। সকলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা, গণতন্ত্রকে সু-প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু আমরা অতীত নিয়েই ব্যস্ত। ৪২ বৎসর পূর্বে বা অতীতে কে কত বড় নেতা ছিল, এ দেশে কার কত বড় অবদান, কোন রাজনৈতিক দল কখন কি বলেছে, তা নিয়ে নিত্যদিনের ঝগড়া-ঝাটিতে আমরা ব্যস্ত। নেতিবাচক রাজনীতিতে আজ আমরা অভ্যস্ত। এতে করে আদৌ কি আমরা দেশ এবং জাতি হিসেবে উপকৃত হচ্ছি? বরং দেশকে পিছনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের ভাবমূর্তি দেশ বিদেশে আজ প্রশ্নবিদ্ধ। আসলে দেশ পরিচালনা করার মতো আমাদের মধ্যে সেই ধরনের ত্যাগ, সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, মন মানসিকতা রয়েছে কিনা, তা ভেবে দেখা দরকার। দেশের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কথা আগে ভেবে দেখা প্রয়োজন। আসলে তারা কি আমাদের দেশের চলমান রাজনীতি পছন্দ করে, না ঘৃনা করে? আমার দৃঢ় বিশ্বাস তরুণ প্রজন্ম হঠকারী রাজনীতি চায়না। কেউ রাজত্ব কায়েম করুক সেটাও তারা চায়না। তারা চায়, রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে তাদের নতুন নতুন চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটুক। দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। মানুষ স্বস্তিতে এবং নিরাপদে নিজ নিজ পেশায় মনোযোগ দিয়ে কাজ করার সুযোগ পাক। কারো প্রতি যেন অবিচার বা অন্যায় না হয় তা নিশ্চিত করা হয়। সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। কাজ শেষ, সময় শেষ। আল্লাহর গজব থেকে আমরা কেউ রক্ষা পাবোনা। কৃত কর্মের ফল ভোগ করতেই হবে। অন্যায় করে কখনোও কেউ পার পায়নি। আগামীতেও পাবে না। এটাই আল্লাহর বিধান। আসুন প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ পরিহার করি। একে অপরের প্রতি বিদ্ধেষ পোষন না করে, দেশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাই।

এই মুহুর্তে সরকারের করণীয় হবে, দেশের ও দেশের মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলি সনাক্ত করা এবং জুুুরুরী ভিত্তিতে সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। বারবার সম্মানিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে, হয়রানি করাই যেন রাজনীতির মুল লক্ষে আজ পরিনত হয়েছে। আশান্তির বীজ বপন করে কারো মঙ্গল হবে না। এটা খুবই দুঃখজনক। বহুদিন যাবত ধীরে ধীরে বিভিন্ন সাংবিধানিক সংস্থাগুলিতে সরকার তার প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। বিগত কয়েক বছর যাবত, এই সংস্থা গুলিতে রাজনৈতিক বিবেচনায় পদায়ন স্বাভাবিক রীতি-নীতিতে পরিনত হয়েছে। সাংবিধানিক সংস্থাগুলি এবং সরকারি কর্মচারীদের যদি আমরা, রাজনীতির বাইরে রাখতে না পারি, তাহলে দেশে কখনো শান্তি ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবেনা। জনগণও সুষ্ঠু নির্বাচন, সুবিচার, সুশাসন এবং ন্যায় বিচার থেকে হবে বি ত। সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য স্বাভাবিকভাবে এক ধরনের দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও কর্মচারীদের হাতে হবে জিম্মি। যা বর্তমানে বিদ্যমান।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘মানুষই সৃষ্টির সেরা’। তবে বহু বছর যাবত রাজনীতিবিদদের আচার, আচরণ ও অশ্লীন ভাষার প্রয়োগ দেখলে মনে হয়, ক্রমশ: আমাদের মধ্যে মনুষ্যত্ব লোভ পাচ্ছে। কেউ কাউকে সমীহ বা সম্মান দেখিয়ে কথা বলার বা বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনা। লাগামহীন ভাবে একে অপরের অযথা সমালোচনা করে যাচ্ছি। অবশ্যই, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজন গঠন মুলক সমালোচনা তিহিংসা মুলক নয়। ব্যক্তিগত নয়, সমষ্টিগত।

আমাদের উপর থেকে জনগনের আস্থা ও বিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। অথচ রাজনীতিবিদেরাই সমাজ বিনির্মাণের কারিগর। উন্নয়ন সাধনের প্রতীক। তবে কেন আমরা এ সুযোগ থেকে বি ত হচ্ছি? মানুষ চায় সমাজে শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, সু-শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা, ন্যায় বিচার, অর্থনৈতিক উন্নতি, এক মুঠো ভাত এবং শান্তিতে ঘুমানো। বিগত ৪২ বছর যাবত আমরা কি তা নিশ্চিত করতে পেরেছি? এর মুল কারন আমাদের মধ্যে এক ধরনের অহংকার, অহমিকা এবং রাজত্ব কায়েম করার মনোভাব কাজ করছে।

জনগণ কষ্টে আছে, অশান্তিতে আছে। কারণ সরকার পরিচালনায় তাদের কোন অংশীদারিত্ব নাই। মানুষের কষ্ট লাঘবের সকল পথ বন্ধ। অনির্বাচিত ব্যক্তিরা দেশ পরিচালনা করছে। ফলে তাদের কর্মকা-ে কোন জবাবদিহীতা ও স্বচ্ছতা নেই। কর্তা খুশি থাকলে সব ঠিক, চেয়ার ঠিক থাকলে সব ভালো। জনগনের ভালোবাসা ও সমর্থন না থাকলেও অসুবিধা নাই। আসুন আমরা দেশ ও জনগনের কথা বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি। যথা শীঘ্রই সম্ভব সুষ্ঠু, অবাধ এবং সকলের কাজে গ্রহণযোগ্য পন্থায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করি। লোভ লালসা ত্যাগ করে, জনগণের মঙ্গল ও সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করি। দিন যত অতিবাহিত হবে, সমস্যা আরো জটিল ও প্রকট আকার ধারণ করবে। অন্ধকার গুহা থেকে বের হওয়া তখন সম্ভব নাও হতে পারে। ক্ষমতার মোহ থেকে আমাদের সকলকে বের হতে হবে।

আগামীতে সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনে জয়লাভ করার পর মানুষ নতুন কি পাবে, তা পরিস্কার ভাবে বলতে হবে। হাত বদলের পালার ইতি টানতে হবে। ইতিবাচক সমাজ গড়ার শপথ নিতে হবে। সকলে মিলে প্রতিজ্ঞা করি, যেন এই দেশ থেকে চিরদিনের জন্য স্বৈরতন্ত্র বিতাড়িত হয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তরুণ প্রজন্মের মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগাতে হবে। তরুণ সমাজ দেশ ত্যাগেও তখন নিরুৎসাহিত হবে।

জাতীয় ঐক্য  গড়ে উঠলে মাঠে সভা সমাবেশ ও রাস্তায় মিছিল থাকবেনা। হরতাল ও অবরোধ আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যাবে। তবে মনে রাখতে হবে, যুদ্ধাংদেহী মনোভাব নিয়ে বেশী দূর আগানো সম্ভব নয়। তাই সব সময় আলোচনার রাস্তা খোলা রাখতে হবে। সমঝোতায় আসতে হবে। তবেই দেশ সঠিক ও সুন্দর ভাবে চলবে। জনগণ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.