প্রশংসিত মাদক বিরোধী অভিযান, প্রশ্নবিদ্ধ একরাম মার্ডার

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ  মাদক বিরোধী অভিযানে কক্সবাজারে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের সঙ্গে টেলিফোনে ’শেষ কথোপকথনের’ যে অডিও রেকর্ড তার পরিবার প্রকাশ করেছে, তাতে পুরো মাদক বিরোধী অভিযান এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর ভুমিাক প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করছেন মানবাদিকার কর্মীরা।

চারটি ক্লিপ মিলিয়ে ১৪ মিনিট ২২ সেকেন্ডের ওই অডিও রেকর্ডে কয়েকজনের কন্ঠ, গুলির শব্দ আর চিৎকার সাংবাদিকদের শুনিয়ে একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগম অভিযোগ করেছেন তার স্বামীকে মাদক বিরোধী অভিযানের নামে ’পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ করা হয়েছে।

তার পরিবারের দেওয়া ওই অডিও যাচাই করা যায়নি। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন অডিও যাচাই করা হচ্ছে। আদৌ যাচাই করা হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। একরামের তার বড়ভাই নজরুল ইসলাম বলেছেন, একরামের ফোন খোলা ছিল বলে এ প্রান্তে পুরো ঘটনাপ্রবাহ রেকর্ড হয়েছে অটো রেকর্ডারে।

জাতীয় মানবাদিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এ ধরনের হত্যাকান্ডের বিচারিক তদন্ত হওয়া দরকার। আইনকে ’পাশ কাটিয়ে’ কাজ করতে গেলে যে বিপদ ঘটতে পারে. একরামের ঘটনায় তা স্পষ্ট হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাদিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

আর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান একে বর্ণনা করেছেন ন্যায় বিচার, আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের জন্য ’অশনি সংকেত’ হিসেবে। সারা দেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে ১৩ দিনে নিহত ১২২ জনের মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক একজন।

যিতি গত ২৬ মে রাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য। টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হককে র‌্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বর্ননা করা হয় ’স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী এবং ’ইয়াবার শীর্ষ গডফাদার’ হিসেবে।

তবে তার পরিবার বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগম তার দুই মেয়েকে নিয়ে গত ৩১ মে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে অভিযোগ করেন,  জমি সংক্রান্ত বিষয়ের কথা বলে সেই রাতে তার স্বামীকে ডেকে নিয় যায় একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।

পরে মেরিন ড্রাইবে নিয়ে একরামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। চারটি অডিও ক্লিপ সংবাদ সম্মেলনে শুনিয়ে আয়েশা বলেন,  যেখানে শুরুতে মেয়ের সঙ্গে একরামের কথা, পরে তার নিজের কন্ঠ রয়েছে। এরপর ও প্রান্তে গুলির শব্দ, পুলিশের সাইরেন, চিৎকার-হাঁকডাক ও গালিগালাজ এবং এ প্রান্তে নারী ও শিশুদের আহাজারী মিলিয়ে রোমহর্ষক এক পরিস্থিতির চিত্র পাওয়া যায় ওই অডিও রেকর্ডে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে র‌্যাবের পরিচালক (মিডিয়া) মুফতি মাহমুদ খান বলেন, অডিওটা আমরা শুনেছি। অনেক রকমের অডিও হয়, বিষয়টি আমরা দেখছি। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল বলেন, অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছে। যেহেতু এ রকম একটি কথা এসেছে, এটা তো ইনকোয়ারি ছাড়া কিছু করা যাচ্ছে না। আমি বিষয়টি ইনকোয়ারি করে দেখব। তদন্তে কেউ যদি দোষী সাব্যস্থ হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন মন্ত্রী।

কি আছে অডিও ক্লিপে

সংবাদ সম্মেলনে একরামের স্ত্রী আয়েশা বলেন, সেদিন রাত ১১টা ৩২ মিনিটের পর তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আর সেটা যে পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছ, মোবাইলের ওই রেকর্ড যাচাই করলেই তা বোঝা যাবে। তিনি দাবী করেন, একরাম ইয়াবার কারবারে জড়িত ছিলেন না।

তার ব্যাংক ব্যালেন্স বা সম্পদেও অস্বাভাবিক কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ঘটনার সুষ্ট বিচার দাবী করে আয়েশা তার দুই মেয়ের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেন সরকার প্রধানকে। আয়েশার বিবরণ অনুযায়ী, একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তার ক্রমাগত ফোন পেয়ে ২৬ মে রাত ৯টার দিকে একরাম বাড়ি থেকে বের হন। রাত ১১টার সময়ও বাড়ি ফিরে না এলে তার মেয়ে ১১টা ১৩ মিনিটে ফোন করে তার বাবাকে।

অডিওতে শোনা যায়, মেয়ে জানতে চাইছে তিনি কোথায় আছেন। জবাবে বাবা বলেন, মেজর সাহেব ডেকেছিলেন, ওখান থেকে তিনি টিএনও (ইউএনও) অফিসে যাচ্ছেন। টিএনও অফিস থেকে আসতে দেরি হবে কিনা -মেয়ের জিজ্ঞাসায় বাবা বলেন, দেরি হবে না। এর পর ফোন কেটে যায়।

রাত ১১টা ১৪ মিনিটে একরামের মেয়ে আবারও ফোন করে জানতে চায়, তিনি কোথায় আছেন। অপর প্রান্ত থেকে উত্তর আসে, আমি টিএনও (ইউএনও) অফিসে যাচ্ছি তো, আমি চলে আসব আম্মা’। ফিরতে কতক্ষন সময় লাগবে-মেয়ের এ জিজ্ঞাসায় অপর প্রান্ত থেকে উত্তর আসে, বেশিক্ষন লাগবে না, আমি চলে আসব ইনশাআল্লাহ, ঠিক আছে? ঘুমাও।

রাত ১১টা ৩২ মিনিটে আবারও মেয়ে ফোন করলে বাবা বলেন. ‘হৃীলায় যাচ্ছেন’। কেন সেখানে যেতে হচ্ছে জানতে চাইলে উত্তর আসে, তিনি ’জরুরী কাজে’ যাচ্ছেন। মেয়ে তার কাছে আবারও জানতে চায়-কেন? যাচ্ছি আম্মু ঠিক আছে…যেতে হচ্ছে তো….। মেয়ে তখন জানতে চায়, তার বাবা কেন কাঁদছে।

এ অবস্থায় ফোন নেন আয়েশা। তিনি হ্যালো হ্যালো করতে করতেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাত ১১টা ৫৪ মিনিটে আবার ফোন করেন একরামের স্ত্রী। ফোন রিসিভ হওয়ার আগে তিনি প্রার্থনা করতে থাকেন, যেন একবার স্বামীর সাথে কথা হয়। ফোন রিসিভ হলে আয়েশা বলেন, হ্যালো, হ্যালো. হ্যালো, হ্যালো কে? হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো, আমি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছি। হ্যালো কে ওইটা, ফোন রিসিভ করছে ওইটা কে? আমি ওনার মিসেস বলতেছি, হ্যালো, হ্যালো।

এমন সময় ফোনের অপর পাশে কাউকে বলতে শোনা যায়,’…তুমি যেটা বলছ…জড়িত না? কেউ একজন বলেন, না। এরপর আগ্নেয়াস্ত্র কক করার শব্দ এবং দুটি গুলির শব্দ শোনা যায়। সেই সঙ্গে মরণাপন্ন কারও চিৎকার। ওই আওয়াজে চিৎকার করে কেঁদে ওঠেন একরামের স্ত্রী ও মেয়েরা। আয়েশা বলেন, ও আল্লা আমার জামাই কিছু করে নাই। আমার জামাই কিছু করে নাই। আমরা বিনা দোষী। আমার জামাই, আমার হাজব্যান্ড কিছু করে নাই, আমার হাজব্যান্ড কিছু করে নাই।

এ সময় ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কয়েকজনের কথা শোনা গেলেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না। বার বার বাঁশির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরে গালিগালাজের আওয়াজও শোনা যায়। এক পর্যায়ে একরামের স্ত্রী চিৎকার করে জানতে চান, আপনারা কোথায়, আপনারা কোথায়’। অপরপ্রান্তে বাঁশির শব্দ বাড়তে থাকে। গালিও শোনা যায়।

কাঁদতে কাঁদতে আয়েশা বলতে থাকেন, আমার জামাই কিছু করে নাই। কমিশনার কিছু করে নাই। আপনারা শুয়ারের বাচ্চা কেন বলতেছেন? উনি কিছু করে নাই। আমার হাজব্যান্ড কিছু করে নাই। কমিশনার কিছু করে নাই, উনাকে কেন মারতাছেন? আপনারা উনাকে কেন মারতাছেন। অন্য প্রান্ত থেকে কয়েকজনের কন্ঠ শোনা গেলেও তাদের কথা বোঝা যাচ্ছিল না।

কিছু একটা খুঁজে বের করতে নির্দেশ দেন। এরপর একজন বলেন, বাড়ি কই বাড়ি? এরপর গাড়ির সাইরেন শব্দ শোনা যায়। পরে আরও তিনটি গুলির শব্দ শোনা যায়, সঙ্গে অকথ্য গালি। ফোনের এ প্রান্ত থেকে আয়েশা বলতে থাকেন, তার স্বামী কিছু করেনি, কেন তাকে মারা হচ্ছে। এক পর্যায়ে ”খোসাগুলো’ খোঁজার কথা বলা হয় ফোনের অন্য প্রান্তে। পরে থেমে থেমে বেশ কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা যায়। একজন বলেন, আর লাগবে না। খোসাগুলো দেখ। ১০ রাউন্ড গুলির কথা বলেন একজন। খোসা খোঁজাখুজি করেন। আটটি খোসা খুঁজে পাওয়ার কথা জানান একজন। সাইরেন বাজতে থাকে। আরও খোসা খুঁজে পাওয়ার কথা জানানো হয়।

প্রশংসিত থেকে প্রশ্নবিদ্ধ অভিযান
একরামের পরিবারের দেওয়া ওই অডিও ক্লিপের বিষয় জানতে চাইলে মানবাদিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, এটা সাংঘাতিকভাবে সমগ্র অভিযানটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এর বৈধতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন. যারা মানবাদিকারের সঙ্গে কোন না কোনভাবে জড়িত বা সাধারন মানুষ যারা প্রথমদিকে এ অভিাযানকে খুবই সমর্থন জানিয়েছিল, তারা তো বুঝতে পারছেন এভাবে আইনকে পাশ কাটিয়ে কোন কাজ করতে গেলে যে কোন সময় যে কারো ঘরে বিপদ হতে পারে। এটা বোধ হয় এ ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করে তিনি বলেন, সত্য উদঘাটন করা এবং দোষীদের শানাক্ত কার তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

সরকারকে তিনি পরামর্শ দেন. সামগ্রিকভাবে এ অভিযানকে বন্দুকযুদ্ধের কাহিনী না বলে এটা বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ড হচ্ছে সেটা বিবেচনায় রেখে কিভাবে আইনের আওতায় নিয়ে এসে অভিযান পরিচালনা করা যায় কাজটি এখন করতে হবে। মিজানুর রহমান বলেন, অপরাধের বিরুদ্ধে কোন অভিযান, অপরাধীর বিরুদ্ধে কোন কার্যক্রম বন্ধ রাখার কথা বলা যায় না।

তার যৌক্তিকতাও নেই। কিন্তু যাই করা হোক, তা হবে আইন মাফিক। সেখানে কোন কম্প্রোমাইজ হতে পারে না। আমরা বলতে চাই, অভিযান চলুক। কিন্তু যার যেটা কাজ অপরাধীকে ধরবে, শনাক্ত করবে। আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আইন মাফিক আদালতে তাদের বিচার হবে। এ বিচারের বাইরে গিয়ে তাদেরকে শাস্তিদান করার যে নির্বাহী ক্ষমতা এটাকে রদ করতে হবে।

এটি হলে সেখানে আইনের শাসন থাকে না। মানবাদিকার থাকে না। এটি থাকলে মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় থাকে। কক্সবাজারের ওই ঘটনার তদন্ত দাবী করে তিনি বলেন, যদি ভুল করেও একরামকে হত্যা করা হয়ে থাকে, যদি কোন উদ্দেশ্য নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকে, তাহলে এর পেছনে কারা রয়েছে তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

শুধু ভুল হয়ে গেছে, এমন হতেই পারে, একটা দুটো এরকম হতে পারে-এমন কথা কখনও গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। এটা হতে দেওয়া যায় না কোন সভ্য সমাজে। মিজানুর রহমান বলেন, একরামের পরিবার যে অভিযোগ এনেছে তা সত্য কি মিথ্যা সেটা প্রমান হবে বিচারের মাধ্যমে। উনি মাদক ব্যবসায়ী যদি হয়ে থাকে, কিভাবে বন্দুকযুদ্ধ হল? উনি তো গুলি করেননি।

সেখানে তো আত্বরক্ষার প্রশ্ন ছিল না। তাহলে তাকে কেন গুলি করে হত্যা করা হল? এ হত্যার নির্দেশ কে দিল? নির্দেশটা কে পালন করল? তারা উভয়ই সমান অপরাধী। তারা তো আইনের দন্ড থেকে রেহাই পেতে পারেন না। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, তিনি একরামের স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের খবর পড়েছেন, তবে অডিও শোনেননি।

আইনশৃংখলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কেউ অপরাধী কি না তা নিশ্চিত হলেও তাকে হত্যা করা যায় না। সেজন্য তাকে আইন অনুযায়ী প্রেপ্তার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। কোথাও যদি কাউন্টার ফেইস করতে হয় তবে আইনের বিধান মেনেই ফেইস করতে হবে। প্রতিটি হত্যাকান্ডের জন্য ম্যাজিষ্ট্রেট দিয়ে অভিযোগের তদন্ত করাতে হবে।

কক্সবাজারে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটার জন্য একটা ম্যাজিষ্ট্রেসি তদন্ত হওয়া উচিত। কারও বেঁচে থাকার অধিকার যাতে লংঘিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে সরকারকে তাগিদ দেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। মানবাদিকার কমিশনের তৎপরতার ফলে সরকারের ভুমিকায় কোন পরিবর্তন এসেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় এজেন্সিগুলোকে আমরা বলে যাব।

পরিবর্তন যে একেবারেই আসছে না তা কিন্তু নয়। কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে যা খুবই দু:খজনক। তবে সম্প্রতি নিহতের ঘটনা বা এ ধরনের ঘটনা অনেকটা কমে এসেছে। এটা শুধু কমে আসলে হবে না, শুন্যের কোঠায় নিয়ে আসতে হবে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সারাবিশ্বে কোথাও বন্দুকযুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণে বা অন্য কোন অপরাধ দমনে কার্যকর পদ্ধতি বলে প্রমানিত হয়নি। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আইনকে পাশ কাটিয়ে মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের সংস্কৃতি যেভাবে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে তা দেশের মানবাদিকার পরিস্থিতির জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠতে পারে তিনি সতর্ক করেন।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইন লঙ্ঘন হচ্ছে, সংবিধান লংঘন হচ্ছে।একই সাথে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আইনের লঙ্ঘনকে যেভাবে অনানুষ্ঠানিক বৈধতা দেওয়া হচ্ছে তা দেশের ন্যায়বিচার, আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত। কক্সবাজারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আত্মরক্ষার জন্য পাল্টা গুলি চালানোর কথা বলা হলো। কিন্তু তার সত্যতা নিরুপনে কোন আইনি পক্রিয়া অনুসরনের কথা আমাদের জানা নেই।

নাড়া দিয়েছে যুবলীগ নেতা একরাম হত্যা

মাদক বিরোধী অভিযানে নিহত টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পর-পর তিনবার নির্বাচিত পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের স্ত্রী অভিযোগ করেছেন’ র‌্যাব ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তাঁকে ডেকে নিয়ে খুন করেছেন। ১ জুন বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাতকারে তিনি এ অভিযোগ করেন।

এ দিকে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গনমাধ্যমে প্রকাশিত অডিও টেপটি তাঁদের নজরে এসেছে। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন। অপরদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জান খান কামাল বলেছেন, একরাম হত্যার বিষয়টি একজন ম্যাজিষ্ট্রেট তদন্ত করবেন।

নিহত একরাম ১৩ বছর দায়িত্বপালনকারী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি, টেকনাফ বাস ষ্টেশন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও টেকনাফ মাইক্রো শ্রমিক ইউনিয়নের আহবায়ক ছিলেন। একরাম হত্যাকান্ড নিয়ে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে গোটা দেশের সচেতন মহল নড়েচড়ে বসেছে।

প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন চলমান মাদক বিরোধী অভিযানের বিষয়ে বলেছেন, মিডিয়ার অসুস্থ প্রক্রিয়া বন্ধ হলে কান্নারও অবসান হবে। ১ জুন নিজের ফেসবুক পোষ্টে তিনি লিখেন, কক্সবাজারের টেকনাফে মাদক বিরোধী অভিযানে নিহত একরামের সাথে তার স্ত্রী-কন্যার ফোনালাপের অডিও তাকে সারারাত ঘুমাতে দেয়নি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.