ফটিকছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভূতের আছর!

0

জাহাঙ্গীর উদ্দিন মাহমুদ, ফটিকছড়িঃ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্সে-রে বিভাগটি বন্দ রয়েছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। এ বিভাগের একমাত্র এক্সে-রে যন্ত্রটি নিয়ে কিসসা-কাহিনীর কোন শেষ নেই। কখনো তার জ্বলে গেছে, কখনো লাইন আসেনা, কখনো নাকি গরম হয়ে যাচ্ছে, কখনো বিদ্যুৎ আর্থিং হয়ে গেছে, কখনো সিষ্টেম পুড়ে গেছে -ইত্যাদি। আনুমানিক ২০ লক্ষ টাকা মূল্যের (বর্তমান মূল্য) এক্স-রে যন্ত্রটি জনগনের কোন কাজেই আসছে না।

উপজেলার প্রায় ৫ লক্ষ মধ্যবিত্ত, হতদরিদ্র অসহায় মানুষের একমাত্র ভরসা উপজেলার সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হতদরিদ্র এ বিপুল জনগোষ্ঠীর পক্ষে বাইরের বেসরকারি ডায়গনষ্টিক সেন্টার থেকে পরিক্ষা নিরিক্ষা করানো মোটেও সম্ভব নয়। বছরের পর বছর এক্সে-রে যন্ত্রটি অকেজো পড়ে থাকার কারনে চরম র্দূভোগে পড়তে হচ্ছে অসহায় দরিদ্র রোগীদের। এক্সে-রে যন্ত্রটি চালুর অপেক্ষায় আর কত বছর ? এ প্রশ্ন এখন সকলের।

হাসপাতালে আগত জনৈক রোগীর স্বজন নাজিরহাট পৌরবাসী কাঁঙ্গাল হাজী কে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আপনারা সাংবাদিকরাও যদি এক্সে-রে মেশিন নষ্টের গল্প বিশ্বাস করেন তাহলে কি আর বলবো, আপনারাই চিন্তা করে দেখেন, আপনার কথা অনুযায়ী সম্পূর্ণ একটি নতুন মেশিন ১২টি বছরে ৬ মাস ও চলেনি, এটি নষ্ট হয় কিভাবে ? ভুক্তভুগীরা বলছেন ফটিকছড়ির এ হাসপাতালে ভূতের আছর লেগেছে। ভূত এক্স-রে মেশিনের ভিতর বাসা বেঁধেছে।

ফটিকছড়ি ‍উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
                      ফটিকছড়ি ‍উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

আসল কথা হলো হাসপাতালের কিছু সংখ্যক কর্মচারী ও দূর্নীতিবাজরা উদ্দেশ্য মূলকভাবে এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট বা অকেজো করে রেখেছেন তাদের কমিশন বানিজ্য টিকিয়ে রাখার জন্য। গোড়ার কথা, হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে ২০০৫ সালের ৭’জুলাই এক্সে-রে যন্ত্রটি সরবরাহ করে ট্রান্সমেট লিঃ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এবং ২০০৮ সালের ৬ আগষ্ঠ এক্স-রে যন্ত্রটি চালু করা হয় অর্থাৎ সরবরাহের পর এটি চালু করতে সময় লেগে যায় প্রায় তিন বছর।

এক্সে-রে যন্ত্রটি সরবরাহ বা হস্থান্তরের এক বছর আগে এক্স-রে টেকনোলজিস্ট আরিফুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হলেও সে সময় যন্ত্রটি চালু করতে কেন তিন বছর লেগেছিল সেটা কারো বোধগম্য নয়। এক্সে-রে টেকনোলজিস্ট আরিফুল ইসলাম বর্তমানে প্রশিক্ষনে রয়েছেন বলে হাসপাতাল সুত্রে জানা যায় এবং বর্তমানে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মিঠুন লালা নামে একজন এক্স-রে টেকনোলজিস্ট সাপ্তাহে তিনদিন ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডিউটি করেন।

এ বিভাগটি চালু থেকে এযাবৎ অর্থাৎ আনুমানিক ১২ বছরে সরকারি ব্যায় হয় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা, হাসপাতালে রক্ষিত রেজিষ্ট্রার বই অনুযায়ী সেবা পেলো মাত্র চার শত ৩ জন রোগী ! বিগত এক বছর যাবৎ হাসপাতালের উর্ধ্বতন সূত্রে এক্সে-রে যন্ত্রটির বিষয়ে একেক সমসময় একেক রকমের তথ্য জানা গেছে, যেমন মেরামতের কাজ চলতেছে, মাস দু’য়েকের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে।

চার পাঁচ মাস পর বলা হলো, এতো আগামী সপ্তাহে চালু হবে। কিছুদিন পর, এক্সে-রে মেশিন তো একেবারে রেডি, এখন আর কোন সমস্যা নেই তবে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত কিছু সমস্যা রয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ফটিকছড়িকে বলা হয়েছে এবং ভোল্টেজ বাড়িয়ে লাইনের মেরামত করে দিলেই আমরা এক্স-রে যন্ত্রটি চালু করতে পারবো।

সর্বশেষ আজ মঙ্গলবার ( ২৪ জুলাই) এ ব্যাপারে মুঠোফোনে ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ শাখাওয়াত উল্লাহ বলেন ভিন্ন কথা, মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার বলেছেন যন্ত্রটি মেরামতের অনুপযোগী হয়ে গেছে, এটি মেরামতে কোন লাভ হবে না, যা গত সপ্তাহে চিঠির মাধ্যমে আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন। তাদের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আর একটি নতুন মেশিন চেয়ে সরকারী স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেছি। আশা করি মাস দুয়েকের মধ্যে নতুন মেশিন সরবরাহ করা হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.