বই জীবনের নিত্য সঙ্গী হলে সমাজ আলোকিত হবেঃ মাহতাব উদ্দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক, সিটি নিউজঃঃ একুশ মেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন বইমেলা মাতৃভাষা প্রেমী বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। চট্টগ্রামে একুশে বইমেলা অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও এই ঐতিহ্যকে ধারণ করে আসছে।
তিনি আজ শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারী ) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সাংবাদিক সম্মেলন কক্ষে ডি সি হিলে অনুষ্ঠিতব্য ২০-২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একুশে বইমেলা উপলক্ষে একুশ মেলা পরিষদ চট্টগ্রামের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামের বইমেলা জমে না। এর কারণ বাহ্যিক উপকরণ ও আনুষ্ঠানিক জৌলুষে বইমেলার আবেদন ডাকা পড়ে যায়।
তিনি বলেন, এক সময় সৃজনশীল বই নৃত্য জীবনের সঙ্গী ছিল। এখন সেই স্থান দখল করেছে ফেইসবুক, বলার অপেক্ষা রাখেনা ফেইসবুকের কারণে বাংলাদেশে পরপর কয়েকটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে, রক্ত ক্ষয় হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ বাঙালি-বাংলা জাতিসত্তার অবিচ্ছিন্ন অংশ। এই সত্যকে অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই। তাই এই সত্য প্রতিষ্ঠিত করবে। তিনি আরো বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারিকে আমরা আজ আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে আটকে রেখেছি। এই দিনটিতে তরুণ প্রজন্ম উৎসব করে।
কিন্তু অনুভব করে না একুশের প্রবল শক্তিকে। ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাঙালির সবচেয়ে বেশি সমৃদ্ধ। এই সমৃদ্ধি বাঙালিকে আত্মনির্ভর করেছে। এই কারণেই বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালিকে গরীবি অপবাদ মুক্ত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেলা পরিষদের মহাসচিব নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেন, আমরা আনন্দের সাথে জানাচ্ছি, সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে এবারও একুশ মেলা পরিষদ, চট্টগ্রাম নগরীর নজরুল স্কোয়ার (ডি সি হিল প্রাঙ্গণে) আগামী ২০ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ৯ দিনব্যাপী একুশের বইমেলা শুরু হচ্ছে।
এবারের বইমেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা সমূহ অংশগ্রহণ করছে। এবারের বইমেলায় প্রতিদিন বিকেলে একুশের মঞ্চে ভাষার চেতনায় উদ্দীপনামূলক সাংস্কৃতিক ও বিষয়ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য বিষয় ‘বই আমাদের অন্ধকার ঘুচিয়ে আলোর সন্ধানের শিখা’।
আমাদের চলার পথ অত্যন্ত কঠিন। চট্টগ্রামে সৃজনশীল বই প্রকাশনার সংকট ও বন্ধ্যাত্ব আমাদেরকে বেদনাহত করে। এক সময় চট্টগ্রামের বইঘর সারাদেশে সৃজনশীল বই প্রকাশনায় সারাদেশে আলো ছড়িয়ে ছিল। প্রতিষ্ঠানটি এখন অবলুপ্ত। হাতেগোনা যে ক’টি প্রকাশনা সংস্থা রয়েছে সেগুলো লাভের কথা দূরে থাক, লোকসানের বোঝায় ভারী হয়ে বিলুপ্তির পথে।
এই নির্মম বাস্তবতা সত্ত্বেও আমরা একুশের বইমেলা করে যাচ্ছি বাঙালির মনোজগতকে সৃজনশীল করার জন্য। আজ নতুন প্রজন্ম বইবিমুখ। তারা তথ্য প্রযুক্তির সহজলভ্য বিনোদনের স্রোতে গা ভাসিয়েছে। তাদের কল্পনার জগত ছোট হয়ে গেছে। এরা পটন-পাঠন থেকে ছিটকে পড়েছে। রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-জীবনানন্দ-জসীম উদ্দীন কি তা জানে না। এরা পাশ্চাত্যের প্রভাবে শিকড়চ্যুত। আজকের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের একাডেমিক পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার ঘোড় দৌঁড়ে ব্যস্ত।
তাদের কাছে সন্তানদের একটি ভাল বই পড়া মানেই সময় নষ্ট। আমাদের কাছে আরো তিক্ত অভিজ্ঞতা হলো, ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে একুশের বইমেলায় ঢাকা থেকে কোন প্রকাশনা সংস্থা সরাসরি অংশগ্রহণ করেন না। তবে ঢাকা ও কলকাতা থেকে তাদের সাম্প্রতিক প্রকাশনাগুলো পাঠনে কিন্তু বইমেলা পূর্ণাঙ্গতা পায় না। তারপরও লেখক, পাঠক, সংস্কৃতিকর্মীদের সমাবেশে এই আয়োজন বর্ণাঢ্য হয়ে ওঠে।
তাই বইমেলা শুধু বইয়ের নয় সংস্কৃতি লালন-পালনের চারণভূমি হয়ে ওঠে। নৃত্য-গীত-আবৃত্তি-নাটক ও বিষয়ভিত্তিক সেমিনারে ডিসিহিল প্রাঙ্গণ সকাল-বিকেল-সন্ধ্যে-রাত মুখরিত থাকে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য তনয়া মাননীয় প্রধামন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দেন এবং এটাই আমাদের ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলার পাথেয়।
বাঙালি জাতিসত্তার আলোকিত প্রেরণায় যাঁরা সমুজ্জল তাঁদের সৃজনকর্ম নতুন প্রজন্মকে পৌঁছে দিতে পারলেই এই আয়োজনের সার্থকতা খুঁজে পাবো। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মেলা পরিষদের কো চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম উদ্দিন চৌধুরী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রামের সদস্য সচিব আহমেদ ইকবাল হায়দার, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অনুপ বিশ্বাস, মেলা পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী শওকত আলী সেলিম, আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী আকবর, যুগ্ম মহাসচিব মহিউদ্দিন এম. আলম, সংস্কৃতিকর্মী খোরশেদ আলম, নজরুল ইসলাম মোস্তাফিজ, কবি সজল দাশ, রুপম মুৎসুদ্দী টিটু প্রমুখ।
এবারের ২৬তম একুশের বইমেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রায় ২০টি প্রকাশনা সংস্থার বুক স্টল থাকবে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টায় বইমেলার উদ্বোধন করবেন মেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন এবং ৯ দিনব্যাপী একুশের বইমেলা উপলক্ষে একুশের মঞ্চে প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে উদ্দীপনামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভাষা শহীদদের স্মরণে স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।