বাঁশের সাঁকোই কাল হলো শিশু শাহ মোহাম্মদ রাহিমের

0

মেহেদি হাসান, সিটিনিউজ:: শাহ মোহাম্মদ রাহিম। বয়স সাত বছর। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল মা-বাবার সাথে। খুব সুন্দর ভাবেই কাটিয়ে দিয়েছে ঈদ। ঈদের ছুটিতে সুন্নতে খতনা করারও কথা ছিল। তারপর লম্বা ছুটি কাটিয়ে ফেরার কথা ছিল যান্ত্রিক শহর ঢাকায়। ঢাকায় আর ফেরা হয় নি আজিমপুরের লিটল বার্ডস স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ফুটফুটে ছাত্র শাহ মোহাম্মদ রহিমের। খালের ওপর নির্মাণ করা বাঁশের সাঁকো কেড়ে নিল তার প্রাণ। কিছুক্ষণ আগেও দিব্বি ছোটাছুটি করা লাশ হয়ে পড়ে রইলো হাসপালের বিছানায়। হয়ত আজ এমনিতেই হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল তার। নানার বাড়িতে তাকে গোসল করিয়ে দেয়া হয়েছে। একটু পরই হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করানো জন্য নেয়া হবে শাহ মোহাম্মদ রাহিমকে। এরই মধ্যে কোনো এক অজানা করণে ছুটলো দাদার বাড়ির দিকে। দাদার বাড়িতে আর যাওয়া হয় নি শাহ মোহাম্মদ রহিমের। সে গেল হাসপাতালে। তবে খতনা করাতে নয়। জীবনের শেষ সার্টিফিকেট নিতে।

শাহ মোহাম্মদ আবদুর রহিমের নানার ও দাদারর বাড়ির মাঝখানে একটি খাল। নোয়াখালীর সেনাবাগ পৌরসভার দু’টি গ্রাম বাবুপুর আর অর্জুনতলা। এই দুটো গ্রামকে আলাদা করেছে ঐতিহ্যবাহী শেখ সুফি খালটি। খালের যে জায়গায় বাঁশের সাঁকো, সেখানে কংক্রিটের পুল তৈরির টেন্ডারও হয়েছে। কিন্তু বর্ষার কারণে পানি বেশি হওয়ায় কাজ শুরু হয়নি। সেই সাঁকো বেয়ে নানার বাড়ি থেকে দাদার বাড়িতে ফিরছিল শাহ মোহাম্মদ রাহিম। আগে অনেকবাই পার হয়েছে এই সাঁকো। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে মাঝ পথে গিয়ে ভারসাম্য হারালো রাহিম। নিজেকে ধররে না রাখতে পেরে পড়ে গেল পানিতে। সাঁতার না জানায় ক্রমেই তলিয়ে গেল শাহ মোহাম্মদ রাহিম। আশেপাশে কেউই ছিল না। তারপর যখন ভেসে উঠলো তখন সেটা ছিল সেটা ছিল শাহ মোহাম্মদ রহিমের লাশ। তারপরও সেনবাগ জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয় শাহ মোহাম্মদ রাহিমকে। ক’দিন পর এই সাঁকোর জায়গায় হয়ে যাবে পুল। অনেক বাচ্চাই সেখানে দিব্বি ছুটোছুটি করবে। কিন্তু আর ফিরবে না শাহ মোহাম্মদ আবদুর রাহিম।

বাবা বাদল ঢাকায় নীলখেতে ব্যবসা করেন। মা গৃহিনী। তিন ভাইয়ের মধ্যে মেঝ শাহ মেহাম্মদ রাহিম। আজিমপুরে থাকতো পরিবারের সাথে। টম এন্ড জেরি আর আর মটুপাতলুর মতো ছুটে বেড়াতো ঘরে। মা-বাবার বড্ড আদরের ছিল শাহ মোহাম্মদ রাহিম। তারই মামা আবদুল্লাহ আল ফয়সাল রাজু। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায়  স্নাতকোত্তর করা রাজু ঢাকায় গেলেই উঠতো বোনের বাসায়। সেখানে মটুপাতলু আর টম এন্ড জেরি কার্টুনের মতো শুরু হতো মামা-ভাগিনার খুনশুটি। সবশেষ বার যখন ঢাকায় গিয়েছিল মামা রাজু, কখন দুষ্টুমি করতে করতে মেঝ ভাগিনাকে একটি ছিমটি দিয়েছিল রাজু। এতে ব্যাথা পেয়ে অভিমান করেছিল শাহ মোহাম্মদ রাহিম। আজ সেই মামা প্রতিবেদককে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলছিল “আমার ভাগিনা আর নেই।” দুপুরে শাহ মোহাম্মদ রাহিমের নানা ও দাদার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে কান্নার রোল। কান্না যেন কিছুতেই থামছে না মা-বাবা, নানা-নানীসহ অত্মীয় স্বজনের। সাঁতার না জানা শিশুটি যেন কিছুতেই চোখের আড়ালে না যায় সে দিকে খেয়াল রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরই মামা স্থানীয় কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মামুম।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.