বোয়ালখালীতে ক্রেতা সমাগমে সরগরম ঈদ বাজার

0

বোয়ালখালী প্রতিনিধি, সিটি নিউজ :: ক্রেতাদের সমাগমে সরগরম হয়ে উঠেছে বোয়ালখালী উপজেলার বিপনিবিতানগুলো। সরগরম তো হবেই, ঈদ যে ঘনিয়ে আসছে। ঈদের কেনাকাটা করতে এ গরমে যানজট পেড়িয়ে নগরে যেতে চান না উপজেলার ক্রেতা সাধারণ। অনেকেই নগর থেকে দু’একটি পছন্দের কাপড় কিনলেও বেশির ভাগ কেনাকাটা বোয়ালখালীতেই সারছেন।

সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত ক্রেতা সমাগম হচ্ছে উপজেলা সদরের বিপনিবিতানগুলোতে। ঈদকে কেন্দ্র করে ভাসমান ব্যবসায়ীরাও জামা কাপড়ের পসরা নিয়ে বসেছে উপজেলা সদরের অলি-গলিতে।

গৃহিণী আফরোজা বেগম বলেন, ঈদ উপলক্ষে পরিবারের সদস্যদের কাপড়চোপড় দিতে হবে, তাই কেনাকাটা করতে এসেছি। এবার ঈদের কেনাকাটাটা উপজেলা থেকে সেরে ফেলতে চাই। বিক্রেতারা ভালো মানের জামা কাপড় রেখেছে। দামও নাগালে রয়েছে। তবে ছোটদের জামাকাপড়ের দাম একটু বেশি বলছে।

কালুরঘাটের এক পোশাক কারখানার শ্রমিক শামীমা আরা জানান, স্বামী-স্ত্রী দু’জনের বেতনের টাকায় ঈদের জামা কাপড় কেনা যায় না। ঘরের খাদ্যের বাজার করে, মুদি দোকানদারের বকেয়া মিটিয়ে হাতে আর টাকাই থাকে না। তাই এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সারতে হয় ছেলেমেয়েদের নতুন জামাকাপড় কেনা। বেশি কিছু কিনতে না পারলেও অন্তত: বড়দের জন্য শাড়ি ও লুঙ্গি দিতেই হয়। তিনি বলেন, বেশির ভাগই প্রয়োজনীয় জামা কাপড় কেনা হয় ঈদে।

নিজের জন্য কিছু কিনবেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে শামীমা মুখে হাসি রাখার চেষ্টা করে বলেন, ছেলেমেয়েগুলোকে দিতে পারলেই খুশি। টাকা বাচানো গেলে নিজের জন্য একটা ব্যাগ কিনতে হবে। অনেকদিন হলো ব্যাগটা পুরোনো হয়ে গেছে, জোড়াতালি দিয়ে কাজে যাই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শামীমা বলেন, ঘর-সংসার সামলাতে ওভারটাইম করেও কুলাতে পারছি না। গত বছরের দেনা শোধ হয়েছে কয়েকদিন হলো। তাই রমজানের শুরুতে ঋণ নিতে পেরেছি।

জানা গেছে, উপজেলার বেশিরভাগ নিন্মবিত্ত ও নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শেষ মুর্হুতে ঈদের কেনাকাটা করেন। পরে তা সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তিতে বছর ধরে পরিশোধ করেন। অনেকে বিয়ে শাদি ও অন্যান্য অনুষ্ঠান সামাল দেন কিস্তিতে টাকা নিয়ে। ফলে এনজিও সংস্থাগুলো স য় ও চড়া সুদে ঋণ দেয়।

জামা কাপড়ের পাশাপাশি টিভি, ফ্রিজ, মোবাইলসহ নানা ইলেক্ট্রনিক পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তবে এবার বেশি বিক্রি হচেছ টিভি। কেন না, ঈদের সাথে সাথে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর বসবে। তাই ফুটবল প্রেমিরা টিভি কিনছেন কিস্তিতে ও নগদে।

উপজেলা সদরের, খাজা মার্কেট, আল মদিনা মার্কেট, জব্বার মার্কেটে ক্রেতাদের ভীড় দেখার মতো। বিক্রিও হচ্ছে ভালো। বিপণিবিতানের বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুপার শপগুলো। এক দোকানে সবধরণের পণ্য রাখে এ সুপারশপগুলো। দাম নির্ধারিত করা আছে পণ্যের গায়ে দর করার সুযোগ নেই।

বেশির ভাগ ক্রেতাই দর কষাকষি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাই দেখেশুনে বাজেট অনুযায়ী পছন্দের পণ্য কিনতে আলাদা আলাদা জামা কাপড়, জুয়েলারী, কসমেটিকস, জুতার দোকানে ভীড় করছেন তারা। সাথে গৃহস্থালির পণ্যের দোকানেও সমান তালে চলছে কেনাবেচা। সৌখিন ক্রেতারা ঘর সাজানোর জন্য আসবাবপত্র সমাগ্রী কিনতে দেখা গেছে।

উপজেলার দর্জির দোকানগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে এখন। রমজানের প্রথম ১০দিন অর্ডার নিলেও এখন অর্ডার নিচ্ছেন না আর। অর্ডারি কাপড় সেলাই করে সময় মতো গ্রাহকদের ডেলিভারি দিতে না পারলে দু’কথা শুনতে হবে। তাই নতুন করে অর্ডার নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছে দর্জিরা। যদিও অর্ডার নেন তাও ঈদের আগে দিতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন তারা। এতে এক প্রকার বিমুখ করছেন গ্রাহকদের।

শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, পাঞ্জাবী, ত্রি-পিস, সেলাই বিহীন লুঙ্গি যারা ক্রয় করছেন তাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। সেলাইয়ে অন্যান্য সময়ের তুলনায় দামও নিচ্ছে বেশি। মো. আরবান হাকিম বলেন, এ এক মহা সমস্যা। দর্জি দোকানে গেলেই বলছে ঈদের আগে ডেলিভারি দেয়া যাবে না। অনেক দোকানে তো অর্ডারই নিচ্ছে না।

কলেজ ছাত্রী আফরিন জানান, ত্রি-পিস তো সেলাইয়ে জন্য দর্জির কাছে নিয়ে যেতেই হয়। সেলাইয়ে দামও বেশি বলছে আবার ঈদের আগে দিতে পারবে কি না, তাও সন্দেহের মধ্যে রাখছে।

মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের ভীড়, চলছে কাপড় চোপড় দেখা ও পছন্দের পালা। সাথে দরকষাকষি। বিক্রেতারা জানান, ক্রেতাদের পছন্দ হলে ও ৫০-১শত টাকা লাভের মধ্যে দিয়ে দিচ্ছেন। ক্রেতাদের অভিযোগ, বিক্রেতারা দাম হাঁকচ্ছেন বিক্রয় মূল্যের দ্বিগুণ-তিনগুণ। ফলে দরদাম করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। 

জব্বার মার্কেটের বিয়ে বাজার সুপার শপের স্বত্ত্বাধিকারী মো. ফরিদুল আলম জানান, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী, নিত্য নতুন ডিজাইনের ও ভালো মানের পণ্যের সমাহার রয়েছে বিয়ে বাজারে। ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা মধ্যে রাখা হয়েছে।

খাজা মার্কেটের শাহ আমানত সু স্টোরের বিক্রেতা হেলাল উদ্দিন বলেন, এবারের ঈদ উপলক্ষে ভালো মানের জুতার কালেকশন রয়েছে। নতুন ডিজাইনের এসব জুতার চাহিদাও রয়েছে ভালো।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.