ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবি

0

সিটিনিউজ ডেস্ক :: সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারি আট ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির (বিএসসি) সদস্য সচিব মোশাররফ হোসেন খানের পদত্যাগ এবং পিএসসির অধীনে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

রবিবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রার্থীরা। সেখানে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অবস্থান করার পর পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এরপর তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

সেখানে প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বিক্ষোভের পর মিছিল নিয়ে তারা পরীক্ষার নেয়ার দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থা বিভাগের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এরপর তারা শাহবাগ অবস্থান নেবেন বলে জানা গেছে।

পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনা, প্রশ্নফাঁস, হলে ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহারের সুযোগ দেয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে পরীক্ষার্থীরা এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন।

এর আগে গত শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিএসসির অধীনে সরকারি আট ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষায় নানা অনিয়মের ঘটনায় ওইদিনই তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে একটি পেজ খুলে প্রচারণা চালায় ও রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাওয়ের জন্য নিজেরা একত্রিত হওয়ার ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী এ বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।

মানববন্ধনে পরীক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, প্রহসনের পরীক্ষা বাতিল করতে হবে। প্রশ্নফাঁস হয়েছে। অনেক কেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহার করে পরীক্ষা দিয়েছে প্রার্থীরা। কোনও কেন্দ্রে সিট প্ল্যান ছিল না। ঠাসাঠাসি করে এক বেঞ্চে ৫/৬ জন করে বসে দেখাদেখির মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। সব কেন্দ্রেই আসন বিন্যাসে ছিল অব্যবস্থাপনা।

হযরত শাহ আলী কলেজে পরীক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আসন ছিল না। সেখানে ৫ হাজার ৬০০ পরীক্ষার্থী পরীক্ষাই দিতে পারেননি। বিজ্ঞান কলেজে সবাই দেখাদেখি করে ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়েছে। দনিয়া কলেজে পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিট পর প্রশ্ন এসেছে। পরীক্ষা শুরু হয়েছে আরও পরে। কোনো কোনো কেন্দ্রে প্রশ্নের উত্তরপত্র দেখে পরীক্ষা দিয়েছে অনেকে। এই সব কিছুর প্রমাণ তাদের কাছে আছে বলে তারা দাবি করছে।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের দাবি, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি বিলুপ্ত করে পিএসসির আদলে আলাদা করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে পরীক্ষা নিতে হবে। এ কমিটির সদস্য সচিব মোশাররফ হোসেন খানকে পদত্যাগ করিয়ে কমিটি পুনরায় সাজাতে হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে সিট প্ল্যান নিশ্চিত করে বিতর্কিত কেন্দ্রগুলোকে কেন্দ্র তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। ঢাকা কেন্দ্রীক নয়, বিভাগীয় শহরে পরীক্ষার কেন্দ্র দিতে হবে। কেন্দ্রগুলোয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করতে হবে।

তাদের অভিযোগ, গত ১২ জানুয়ারি রাজধানীর শাহ আলী মহিলা কলেজে ৫ হাজার ৬০০ পরীক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত বসার জায়গা ছিল না। মাত্র ৩০ জনের বসার ব্যবস্থা থাকা কক্ষে গাদাগাদি করে এক থেকে দেড়শ’ পরীক্ষার্থীকে বসতে দেওয়া হয়। লাইব্রেরি কক্ষ, সেমিনার কক্ষ, শিক্ষকদের মিটিং রুমে গাদাগাদি করে বসতে দেওয়া হয়। শিক্ষকদের অফিসরুম এমনকি প্রিন্সিপালের নিজের চেয়ারে বসতে দেওয়া হয় পরীক্ষার্থীদের। এরপরও জায়গার অভাবে হাজার হাজার পরীক্ষার্থী বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন।

এমন অব্যবস্থাপনার কারণে পরীক্ষার্থীরা কলেজটির জানালা দরজা ভাঙচুর করে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এবং ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলে। এরপর বিএসসির সদস্য সচিব মোশাররফ হোসেন খান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই কেন্দ্রের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে তা আগামী ২০ জানুয়ারি নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন খান বলেন, আমি সাধ্যমত চেষ্টা করেছি সুশৃঙ্খলভাবে পরীক্ষা নিতে। পরীক্ষা দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ঢাবির ব্যবস্থাপনা বিভাগকে। তাহলে আমাকে সবাই ভুল বুঝে চাপ দিচ্ছে কেন?

তিনি বলেন, কোনো কোনো কেন্দ্রে বিদ্যুত ছিল না। এর সুযোগ নিয়েছে পরীক্ষার্থীরা। এর জন্য কি বিদ্যুত বিভাগ দায়ী না আমি। ৬০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়েছে। এক কেন্দ্রে হয়নি তা ২০ জানুয়ারি হবে।

পরীক্ষার্থীরা চাইলে হাইকোর্টে পরীক্ষা বাতিল চেয়ে রিট করুক তাতে আমার আপত্তি নাই এমন মন্তব্য করে মোশাররফ হোসেন বলেন, তেজগাঁও কলেজ কেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহারের দায়ে ১০ জনকে বহিস্কার করা হয়েছে। আমি সাধ্য মতো চেষ্টা করছি। এর বাইরে আর কি করতে পারি।

‘আমার কোনো অনিয়ম দেখলে সবাই তা দেখিয়ে দিক। কোনো দলের হয়ে নয়, বেকারদের চাকরি দেয়ার স্বার্থে পরিশ্রম করছি। আমার পরিবর্তে যোগ্য কেউ এখানে আসতে চাইলেও আপত্তি নাই।’

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, তারপরও সকল দায়ভার আমার কারণ এই পর্যন্ত ১২ টা পরীক্ষা নিয়েছি আমি। আর এ জন্য নিজের ছেলে-মেয়েদেরও খোঁজ নিতে পারছি না।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.