ভাত দেবার মুরোদ নাই,কিল দেবার গোসাঁই

0

দীলিপ তালুকদার/ গোলাম সরওয়ার : চট্টগ্রামের এক তৃতীয়াংশ মানুষ বছরের ছয়মাস থাকেন পানিবন্ধী। জনদুর্ভোগ-দুর্দশার শীর্ষে থাকা এই চট্টগ্রাম শহরের অর্ধেকরও বেশি ওয়ার্ডের ভাড়াঘর ছয়মাস ধরে খালী পড়ে আছে। অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চলের ভুমি মালিকদের অবস্থা সবচেয়ে করুন। না পারছে বাসাবাড়িতে থাকতে, না পারছে ছেড়ে যেতে। ছয়মাসের জনদুর্গতি লাগবে কোন কাজ করতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। জলাবদ্ধতা স্থায়ী হয়েছে শহরে। প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে শহরের অনেক এলাকা। রাস্তাঘাটের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।

এ অবস্থায় চসিকের ভুমিকর নিয়ে তোড়জোড়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে মানুষ। অধিকাংশ ভুমি মালিকরা ফের গৃহকর ইস্যুতে ফুঁসে উঠছে। তাদের মতে, পৌরকর আদায়ের লক্ষ্যে সম্প্রতি শেষ হওয়া চসিকের এসেসমেন্ট করের পরিমান পুর্বের চেয়ে অস্বাভাবিকহারে বাড়ানো হয়েছে। ভবন মালিকরা বলছেন, ৫ বছর পুর্বে এসেসমেন্ট করার সময় বর্গফুটের মুল্যায়ন ভিত্তিক জেনারেল এসেসমেন্টের মাধ্যমে করের যে আওতা বাড়িয়েছিলেন সাবেক মেয়রগণ নতুন মুল্যায়নে তা ফলো করা হয়নি।

নতুন মুল্যায়নে ভবন ভাড়া দিলে কত আয় হতো সে হিসেব করে কর ধার্য করা হয়েছে। মুলত এই কারনেই করের পরিমান পুর্বের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। তবে চসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দাবী, ইচ্ছে করে কর বাড়ানোর সুযোগ কর্পোরেশনের নেই। আইন মেনেই কর ধার্য করা হয়েছে। এসেসমেন্ট শেষে প্রস্তাবিত ভ্যালুর বিষয়ে কারো আপত্তি থাকলে আপিল করার সুযোগ আছে। সুত্র মতে, পঞ্চবার্ষিকী কর পুর্নমুল্যায়ন শেষে তা গত ৩১ আগষ্ট জনস্মুখে প্রকাশ করা হয়। করো আপত্তি থাকলে করদাতাদের ৩ অক্টোবরের মধ্যে আপিল করতে আহবান জানানো হয়। যার প্রেক্ষিতে চসিকের ৮টি রাজস্ব সার্কেলের বিপরীতে ১২ হাজার ৮৯৬টি আপিল আবেদন জমা পড়েছে।

এদিকে নগরবাসীর কথা বিবেচনা করে করদাতাদের আপিলের সময়সীমা ৩ মাস বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ে অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে চসিক। এদিকে এসেসমেন্ট শুরুর পর থেকেই কর বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীও অভিযোগ করেছেন। সর্বশেষ এসেসমেন্ট কর ধার্যের পর হোল্ডিং মালিকদের নোটিশ দিয়েছে চসিক।

এর পর থেকে অসন্তোষের মাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। তাদের অভিযোগ, যাদের ভাড়াঘর নেই এবং নিজেরা বসবাস করেন, তাদের বাসাবাড়িও ভাড়ার টাকা হিসেবে মুল্যায়ন করা হয়েছে। এদিকে, সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে দেয়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে,’ সিটি কর্পোরেশন (কর ) বিধি ১৯৮৬ এর ১৯ এবং ২০ মুলে সিটি কর্পোরেশনের অধীক্ষেত্রে ভুমি ও ইমারত সমুহের বার্ষিক মুল্য নির্ধারন (এসেসমেন্ট) এর বিধান রয়েছে। উক্ত বিধিমালার বিধি ২১ অনুযায়ী প্রতি ৫ বছর পর এসেসমেন্ট হালনাগাদের বাধ্যবাদকতা রয়েছে। আদর্শ কর তফসিল ২০১৬ অনুযায়ী হোল্ডিং কর ও অন্যান্য ফি সমুহ আরোপ করা হয়। যা সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয়ের প্রধান উৎস।

মন্ত্রনালয়ের নির্দেশিত বিধি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিধি ১৯ এ বলা হয়েছে, ভবন ও ভুমির উপর কর এবং বিদ্যুতায়ন রেইট এবং আবর্জনা অপসারন রেইট আদায় করতে পারবে সিটি কর্পোরেশন। বিধি ২০ এ বলা হয়েছে, বাৎসরিক মোট ভাড়া হতে দুই মাসের ভাড়া বাদ দিয়ে বার্ষিক মুল্য নির্ধারন করতে হবে। ভবনের বিপরীতে ব্যাংক ঋনের সুধ থাকলে তা বাৎসরিক মুল্যায়ন থেকে বাদ যাবে। সুত্র মতে, এসেসমেন্ট শেষে নগরীতে মোট হোল্ডিং রয়েছে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ২৪৮টি। যা পুর্বের তুলনায় ২৮ হাজার ৭০২টি বেশি।

এসেসমেন্ট হোল্ডিং গুলোর বিপরীতে চলতি অর্থ বছরে ৫৫৯ কোটি টাকা পৌরকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আদায় হয়েছিল ১০৩ কোটি ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৭ টাকা। ভুমি মালিকদের অভিযোগ, বিগত দিনে কোন মেয়রের আমলে এমন উচ্চহারে করের বোঝা চাপানো হয়নি।

বর্তমান মেয়র আইনের দোহায় দিচ্ছেন, তবে কি বিগত দিনের কোন মেয়রই আইন মানেননি! জলাবদ্ধতা, জোয়ারের পানিতে প্লাবিত জনপদ, অপরিস্কার ও অপরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট, ভরাট হওয়া নালা নর্দমা উপচে উঠা নোংরা পানিতে রাস্তা ডুবে থাকা, আলোকবার্তির ব্যবস্থা অপ্রচুল, নগরীর ৯০ ভাগ রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যান চলাচলের অযোগ্যতা সহ জনদুর্ভোগের নগরী হিসেবে আলোচিত চট্টগ্রাম শহরের উচ্চমাত্রার করারোরোপের যৌক্তিকতা কোথায়। সিটি কর্পোরেশন তার সেবা দিচ্ছে না, কিন্তু উচ্চমাত্রার কর আদায়ের তোড়জোড়। এ যেন ভাত দেবার মুরোদ নাই, কিল দেবার গোসাঁই।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.