আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিন কিউ পদত্যাগ করছেন। দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছরের মাথায় তিনি পদত্যাগ করলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ৭১ বছর বয়সী থিন কিউ পদত্যাগ করেছেন বলে বুধবার জানিয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট দপ্তর। সংবিধান অনুযায়ী সাত কর্মদিবসের মধ্যে দেশটিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
থিন কিউকে মিয়ানমারের কার্যত সরকার প্রধান ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চির ডান হাত বলে মনে করা হয়। গত কয়েক মাস ধরেই থিনের শারীরিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছিল। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তাকে নিয়মিত দেখা যায়নি। মিয়ানমারের রাষ্ট্রপ্রধান হলেও কার্যত সরকার চালাচ্ছিলেন অং সান সু চি। ২০১৬ সালের ৩০ জুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সু চি তার বাল্যবন্ধু ও দীর্ঘদিনের উপদেষ্টা থিন কিউকে পেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেন।
দীর্ঘ সামরিক শাসনের পর ২০১৬ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে জিতে মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি পার্টি (এনএলডি) ক্ষমতায় আসে। কিন্তু বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করায় মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ ছিল না তার। ফলে থিন কিউকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নেন সু চি। যদিও এই পদ ছিল অনেকটাই আনুষ্ঠানিক। তবে ক্ষমতায় আসলেও সু চির সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে রয়েছে।
এদিকে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট দপ্তর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী সাত দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করা হবে। আর সে পর্যন্ত বর্দমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট মিন্ট সোয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। মিন্ট একজন সাবেক জেনারেল।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে আরসার কথিত হামলার অভিযোগ তুলে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন-ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মতো ভয়াবহ নিপীড়নের শিকার হয়ে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের এমন দমন-পীড়নকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ।
মিয়ানমার সরকার ও দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা নিধণের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। রাখাইন প্রদেশের বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের বসতবাড়িতে বর্তমানে বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে বলে সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে। এসব অভিযোগের মাথায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দশ দেশের জোট আসিয়ানের সম্মেলনে যোগ দিতে সম্পতি অস্ট্রেলিয়া সফর করেন সু চি। এসময় তাকে মানবাধিকার মানবাধিকার কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। অসুস্থার কারণ দেখিয়ে সিডনিতে তার নির্ধারিত একমাত্র ‘প্রকাশ্য ভাষণ’বাতিল করেন তিনি। সূত্র : বিবিসি, এএফপি