মুজিব নগর সরকার মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছে: অনুপম সেন

0

নিজস্ব প্রতিবেদক:: আন্তর্জাতিক সমাজ বিজ্ঞানী, একুশে পদকপ্রাপ্ত ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেছেন, মুজিব নগর সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছে।

বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণের পর মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ পরিচালনার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল। মুজিবনগর সরকারই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত করেছে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) নগরীর থিয়েটার ইন্সটিটিউট চট্টগ্রাম টিআইসিতে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, চট্টগ্রাম জেলা আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ড. অনুপম সেন আরও বলেন, মুজিবনগর সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করতে ভারত রাজী হয়। তাজউদ্দিন আহমেদ যখন ১৯৭১ এর ৪ এপ্রিল ভারত সরকারের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সহায়তার জন্য গিয়েছিলেন তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য কোন সরকার গঠিত হয়েছে কিনা। তখন তাজ উদ্দিন জবাব দিয়েছিলেন- মুজিব নগর সরকার গঠনের কথা।

তিনি বলেন, মূলত ৪ এপ্রিল মুজিব নগর সরকারের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে এই সরকারের কাযক্রম শুরু হয়। সভায় মুখ্য আলোচকের ভাষণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর ড. জাকির হোসেন বলেন, যারা কোটা বিরোধী আন্দোলন করেছে তাদের অন্দোলনের প্রেক্ষাপটে মুক্তিযুদ্ধের কোটাও বাতিল করা হয়েছে। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তারা বস্তুত দেশ স্বাধীনের পর সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এজন্যই তাদের সন্তানদের জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের জন্য যেটুকু সুযোগ সুবিধা দিয়েছিলেন ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সামরিক সরকারগুলোর সময় মুক্তিযোদ্ধারা কোন সুযোগ সুবিধা পাননি। পরবর্তিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সকল সুযোগ সুবিধা চালু করেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সুবিধা বাতিল করার জন্য কোটা বিরোধী আন্দোলনের একটা ভূমিকা ছিল। এটা সুদূর প্রসারী নীল নকশা। কারণ এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার করার জন্য পরীক্ষা নীরিক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এ কথা রাখেননি কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীরা।

তিনি আরও বলেন, পরে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নামে সারা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির সম্মান তারা রক্ষা করেননি। যে কারণে সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা সকল কোটা বাতিল করতে বাধ্য হন। কারণ এই কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছিল সরকারকে বেকায়দায় ফেলার একটি কৌশল। বিশেষ অতিথির ভাষণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী বলেন, ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর সরকারের আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি গড়ে দেয়। এই সত্যকে যারা অস্বীকার করে তারা বাংলাদেশকেও স্বীকার করে না।

দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র রিপোর্টার ড. সৈয়দ আবদুল ওয়াজেদ বলেন, মৌলবাদ সারাবিশ্বেই আজ প্রধান সমস্যা। এটা দূর করতে প্রধান কাজ হবে পারিবারিক শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে, সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই তরুন- তরুনীরা হতাশ হয়ে মৌলবাদে জড়াবে না। এটা না হলে কোন শাসনই মৌলবাদ বন্ধ করতে পারবে না। তিনি সকল শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস শেখানোর জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র সহ সভাপতি ইকবাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মুজিব নগর দিবসের আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন দেবনাথ, পাহাড়তলী থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার কামাল উদ্দিন, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বশর, আকবর শাহ থানা আওয়ামীলীগের প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক আবু সুফিয়ান, সাবেক ছাত্রনেতা মহিউদ্দিন মইনুল আলম, সংস্কৃতি কর্মী কবি সজল দাশ প্রমুখ। আলোচনা সভা অনুষ্ঠান শেষে মুজিব নগর দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত শিশু কিশোর চিত্রাংকন প্রতিযোগীতার বিজয়ীদের মধ্যে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন প্রধান অতিথি ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি কর্মী নজরুল ইসলাম মোস্তাফিজ , মুজিবুর রহমান, দিলীপ সেনগুপ্ত, রিপন বড়–য়া, রোকন উদ্দিন মাহমুদ প্রমুখ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.