রাউজানে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে স্বপ্ন দেখেন একজন জমির

0

নেজাম উদ্দিন রানা, রাউজানঃ  এলাকায় একজন পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে যথেষ্ট পরিচিতি তার। নিজ মেধা ও যোগ্যতায় তিনি জয় করেছেন এলাকার মানুষের মন। মানুষের জন্য কিছু করার মাঝেই আত্মতৃপ্তি লাভ করেন তিনি। এভাবে মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে এক সময় এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রতিবন্ধীদের দেখে ব্যতিত হন তিনি।

ভাবলেন, তাদের কল্যানে কিছু একটা করবেন। প্রথমেই প্রতিবন্ধীদের সংগঠিত করতে তাদের নিয়ে গঠন করলেন একটি কমিটি। দিনদিন বাড়তে থাকে কমিটির সদস্য সংখ্যা। প্রতিবন্ধীদের সাথে সব সময় সখ্যতা বজায় রেখে তাদের মধ্যে ভিন্ন কিছু প্রতিভা আবিস্কার করলেন প্রতিবন্ধীদের খুবই আপনজন চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভার দ্বিতীয় প্যানেল মেয়র, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জমির উদ্দিন পারভেজ।

শতাধিক প্রতিবন্ধীকে এবার আমন্ত্রণ জানাতে শুরু করলেন জাতীয় দিবসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। তাদের মধ্যে একজন পারেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই জ্বালাময়ী বক্তব্য, আছেন কোরআনে হাফেজ, কেউবা জানেন জনপ্রিয় শিল্পীদের কালজয়ী কিছু গান। সবাইকে একই ছাদের নিচে এনে রাউজান পৌরসভার দ্বিতীয় প্যানেল মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ সাধারণ মানুষের সামনে প্রতিবন্ধীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ তৈরী করে এলাকার মানুষের প্রশংসা লাভ করেছেন।

শুধু তাই নয়, এলাকার শতাধিক প্রতিবন্ধী যেন তার আত্মার আত্মীয়। যে কোনো স্থানে জমির উদ্দিন পারভেজকে দেখলে প্রতিবন্ধীরা ছুটে যান তার কাছে। তাকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন বুকে। অনেক সময় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে হোটেলের খাবার টেবিলে বসে এক সাথে আহার সারেন।

প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু একটা করার মাঝে অসীম আনন্দ খুঁজে পান তিনি। সম্প্রতি প্রতিবন্ধীদের কল্যানে গঠন করেছেন ১০১ সদস্যের একটি কমিটি। প্রতিবন্ধী কল্যান সমিতি নামে এই কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন রেজা, সম্পাদক তিনি নিজে। পাশাপাশি সাংবাদিক, ব্যাবসায়ী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে গঠন করা কমিটির মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করে যেতে চান কাউন্সিলর পারভেজ।

সম্প্রতি এলাকার প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তার এত উৎসাহের ব্যাপারে জানতে চাইলে রাউজান উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, রাউজান পৌরসভার দ্বিতীয় প্যানেল মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ আজকের সূর্যোদয়কে বলেন, আপনি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরলে দেখবেন এলাকার প্রতিবন্ধীরা কতটা অবহেলায় পড়ে আছে। দৃষ্টি, মানসিক, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের অনেকেই ভিন্ন চোখে দেখে। বলতে গেলে একপ্রকার অবহেলার মাঝেই সমাজে দিন কাটে তাদের। এলাকায় এই অবহেলিত মানুষগুলির কষ্টগাঁথা জীবন আমাকে ব্যতিত করে।

আমি খুব কাছ থেকেই তাদের দেখে ভাবতাম ওরাওতো রক্তে, মাংসে আমার মতো মানুষ। তাহলে এতো ভেদাভেদ কেন, কেনইবা আমরা ওদের নিয়ে উপহাস করি, তাচ্ছিল্যের চোখে দেখি। ভাবনার এক পর্যায়ে আমি সিন্ধান্ত নিই, তাদের সংগঠিত করে ওদের কল্যাণে কিছু একটা করবো। আজকে ওরা যখন বড় কোনো প্রোগ্রামে হাজার হাজার মানুষের সামনে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ সবার সামনে বলে কিংবা কারো সুকন্ঠে দেশাত্মবোধক গান শুনে গর্বে আমার বুকটা ভরে যায়।

এলাকার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছে। এখন কেউ তাদের আর তাচ্ছিল্য করেনা। সবাই প্রতিবন্ধীদের আপন ভাবতে শিখেছে। আমি চাই প্রতিবন্ধীরাও সমাজে আর দশজনের মতো আদর, স্নেহ আর ভালোবাসার বন্ধনে বেড়ে উঠুক।

জমির উদ্দিন পারভেজ আরো বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সব সময় ভালো কিছু করার তাগাদা থেকেই আজকে এলাকার সাংসদের অনুপ্রেরণায় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করার শক্তি পেয়েছি। রাস্তা দিয়ে চলার সময় অনেক প্রতিবন্ধী ছুটে এসে পারভেজ ভাই বলে বুকে জড়িয়ে ধরেন, তাদের ভালোবাসা আমাকে আপ্লুত করে। তাদের কল্যানে আমৃত্যু কাজ করে যেতে চাই আমি। সমস্ত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে একদিন প্রতিবন্ধীরাও নিজেদের মেলে ধরবে সমাজে এই স্বপ্ন দেখি আমি।

নিরহংকারী জমির উদ্দিন পারভেজ নীরবে, নিভৃতে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে যে স্বপ্ন দেখে আসছেন সেই স্বপ্নই আজ আলো ছড়াচ্ছেন এলাকায়। অবহেলায় পড়ে থাকা প্রতিবন্ধীরা মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে সমাজে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.