রামগঞ্জে লক্ষীপুরের সাহসী ও ত্যাগী নেতা মিলন

0

জুবায়ের সিদ্দিকী,সিটি নিউজ :   সৈয়দ মোজাম্মেল হক মিলন ১৯৫৯ সালের ২৭ জানুয়ারী লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার ১নং কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী দরগাহ বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা সৈয়দ নুরুল হক ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ন ও সমাজ সেবক। তার মাতা মোসাম্মৎ নুরুর নাহার চৌধুরী একজন আদর্শ মাতা ও গৃহীনি। ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সৈয়দ মোজাম্মেল হক মিলন ২য়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযদ্ধের সময় চট্টগ্রাম অবস্থানকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের কিছু ট্রেনিং নেন ও নানাভাবে অংশগ্রহন করেন। তিনি আগ্রাবাদ প্রাথমিক ও সরকারী কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। ১৯৭৪ সালে কাঞ্চনপুর স্কুল থেকে এস এস সি। পরবর্তীতে আবার চট্টগ্রাম লেখাপড়া করেন ও সেখান থেকে এইচ এস সি ও ডিগ্রী পাশ করেন। রাজনৈতিক কারণে তার লেখাপড়ায় মারাত্বক বিঘ্ন ঘটে।

ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিকে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর ২৭নং আগ্রাবাদ ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকান্ডের পর জাতীর সবচেয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় জনমত সংঘটিত করতে ১৯৭৭ সালে তিনি ’মুজিব সেনা’নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্টা করেন। ১৯৮১ সালে তিনি সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি সে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। উল্লেখ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পর জাতির ঘোর দুর্দিন ও সংকটকালে তৎকালীন শাসক চক্রের রক্ত চক্ষুও ভয় ভীতিকে উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করায় সৈয়দ মোজাম্মেল হক মিলন হুলিয়া মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন পলাতক জীবন যাপন করেন।

সৈয়দ মোজাম্মেল ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৪ সাল থেকে তিনি অধ্যাবধি সততা ও নিষ্ঠার সাথে লক্ষীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ন সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। জামাত-বিএনপির দু:শাসনের সময় লক্ষীপুরের রামগঞ্জে যখন অঘোষিতভাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, তখন তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের দু:সাহস দেখিয়েছেন। এর আগে ২০০১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার নিরাপত্তা বিধানের দাবীতে রামগঞ্জে সমাবেশ করেন। এসব কারনে তাঁর বাড়িতে ৩০-৪০ টি মোটর সাইকেল যোগে অস্ত্রধারী বিএনপির সন্ত্রাসীরা মুহুর্মুহু গুলি চালায়। পরে জনতার প্রতিরোধের মুখে সন্ত্রাসীরা এলাকা ছেড়ে গেলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। একইভাবে ওই সময় ছাত্রলীগের প্রতিষ্টাবার্ষিকীতে প্রধান অতিধি হিসেবে উপস্থিত থাকায় বিএনপির মাস্তান ও পুলিশ তার উপর আক্রমন চালায়।

তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগুলো মোকাবিলা করেছেন পিছু হটেননি। বিরোধীদলে থাকার সময় বেশ কয়েকবার তিনি সফলতার সাথে লক্ষীপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি একজন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হিসেবেও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন কল্যানমুলক কাজে তিনি সর্বদাই তাদের পাশে থাকেন। তাঁর হাত ধরেই ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্টা লাভ করে রামগঞ্জ প্রেস ক্লাব। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় কলাম লেখার পাশাপাশি তার বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৮৮ সালে ইসলামী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রকাশিত ’জাতীর জনক শেখ মুজিবুর রহমান’ গ্রন্থে সৈয়দ মোজাম্মেল হক মিলনের বহুল আলোচিত লেখা ’দালাল আইন ও সাধারণ ক্ষমা’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ১৯৯১ সালে ’চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ ও মুজিব প্রসঙ্গ’ ও ২০১১ সালে একুশের বই মেলায় ’স্বাধীনতা ঘোষনার অজানা কথা’ সহ প্রকাশিত বেশ কয়েকটি গ্রন্থ ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

পাঠক প্রিয়তার কারনে বই মেলায় প্রকাশিত গ্রন্থটি ’মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ঘোষনা’ নামে চতুর্থ সংস্করন প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালে। ওই বছর গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে সেরা সাত বইয়ের লেখক ও প্রকাশককে ’বিশাল বাংলা প্রকাশনী সাহিত্য পুরস্কারে’ পুরস্কৃত করা হয়। তম্মধ্যে সৈয়দ মোজাম্মেল হক মিলনকেও জাতীয় প্রেসক্লাবে সেরা বইয়ের লেখক হিসেবে পুরস্কার প্রদান করা হয়। সৈয়দ মোজাম্মেল হক মিলন ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে সিএন্ডএফ পেশার মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন।

বর্তমানে তিনি বানিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামে সততা ও সফলতার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তিনি চট্টগ্রাম মা শিশু হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের আজীবন সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রজন্ম ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্ঠা, রামগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্টাতা ও প্রধান উপদেষ্ঠা সহ বিভিন্ন সমাজ সেবামুলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত রয়েছেন। সৈয়দ মোজাম্মেল হক মিলনের স্ত্রী আশরাফুন নাহার একজন আদর্শ গ্রহিনী। তিনি এক এক কন্যা ও দুই পুত্র সন্তানের জনক।

তারুন্যদীপ্ত, নিষ্ঠাবান সমাজ সেবক এবং সাধারন মানুষ ও নেতা কর্মীদের দু:সময়ের সাথী সৈয়দ মোজাম্মেল হক মিলন। পেশী শক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে দৃঢ অবস্থান নিয়ে সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসা এই নেতা বলেন’, জন্মস্থানের প্রতি প্রত্যেক মানুষের আকর্ষন চিরন্তন। হযরত শাহ মিরান (রা.) ও শাহ জকি (রা.) সহ অনেক পীর মাসায়েকের লালনভুমি রামগঞ্জ আমার জন্মভুমি হওয়ায় নিজেকে ধন্য মনে করি। নিজের এলাকার মানুষের প্রতি ভালবাসার টান সবসময় অনুভব করি। সুযোগ পেলেই ছুটে যাই গ্রামে। নেতাকর্মী, আত্বীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত হয় আলাপ হলে ভাল লাগে।

এলাকার সমস্যা নিয়ে সৈয়দ মোজাম্মেল হক মিলন বলেন,’ রামগঞ্জ মুলত কৃষি প্রধান এলাকা। কৃষি, মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগী ও গবাদি পশু পালন, কাঠ ও বাঁশের শিল্পকর্ম, রিক্সা, ঠেলাগাড়ি চালানো, দিনমজুরী করাই বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা অর্জনের প্রধান অবলম্বন। এছাড়া এখানে ক্ষুদ্র কিছু শিল্প যেমন তাঁত বুনন, ছাপাখানা এবং ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবি রয়েছে। অনেকে আবার বিদেশে কর্মরত থেকে টাকা পয়সা অর্জন করে পরিবার পরিজনের মৌলিক চাহিতা পুরন করছেন। তাদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা আধুনিক চাষাবাদের জন্য যাবতীয় কৃষি উপকরন, পানিশেচ, কীটনাশক ও উত্তম বীজ সরবরাহের। কৃষকদের সময়মত এসব সরবরাহ করা গেলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। খাদ্য উৎপাদনে আমরা স্বাবলম্বী হব। লক্ষীপুর নিয়ে তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে মিলন বলেন,’ বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। যার সুফল পাওয়া গেছে। তিনি বলেন,’ লক্ষীপুরের উন্নয়নের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।

এই জেলায় একটি মেডিকেল কলেজ, একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা আজ সময়ের দাবী। চৌমুহনী, রায়পুর-রায়পুর সড়ক, দালালবাজার-রামগঞ্জ সড়ক, হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ-চৌমুহনী সড়ক দ্বিগুণ প্রশস্ত করে চার লেনে উন্নীত করা সহ সুযোগ পেলে রামগঞ্জকে শিক্ষা, স্বাস্থ্যা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে একটি আদর্শ জনপদে পরিনত করব ইনশাআল্লাহ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.