রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে বিভাগীয় কমিশনারের আহ্বান

0

নিজস্ব প্রতিবেদক:: গ্রামের পাশাপাশি অনেক রোহিঙ্গা নগরীতেও ঢুকে পড়ছে। তাই তারা যেন কোনোভাবেই ভোটার তালিকায় ঢুকতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের করা প্রতিবেদনে বিশেষ এলাকা হিসেবে নগরকেও অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কমিশনে প্রস্তাব পাঠাব।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) সকালে নগরীর সার্কিট হাউস মিলনায়তনে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম–২০১৭ বিষয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান এ কথা বলেন।

জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গারা জাল ও ভুয়া সনদ এবং বাবা–মা প্রদর্শনের মাধ্যমে ভোটার হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।যাতে কোনোভাবেই নতুন ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে। এছাড়া ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে চিহ্নিত বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি মহানগরীকেও অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের নিজেদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। তবে এর মধ্যে তারা যাতে কোনোভাবে ভোটার তালিকায় ঢুকে না পড়ে সেজন্য আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার মহিলা গর্ভবতী। বাংলাদেশে থাকাকালীন তাদের হয়ত সন্তান জন্ম নেবে। আমরা এসব নবজাতকের ডাটাবেজ করব। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নেওয়া এসব নবজাতক কোনোভাবেই আমাদের দেশের নাগরিক নয় বলে জানান তিনি। একই দপ্তরের উপ–পরিচালক নায়েব আলী বলেন, নয়টি উপজেলায় কিছু কিছু রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে ঢুকে পড়েছে। এসব রোহিঙ্গা জাল, ভুয়া জন্মসনদ, নাগরিক সনদ এবং ভুয়া বাবা–মা প্রদর্শনের মাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টির অগোচরে ভোটার হওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের আমাদের দেশে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি আমরা মানবিক আচরণ করব। তবে এর পাশাপাশি রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার তালিকায় ঢুকতে না পারে সেদিকেও আমাদের নজর রাখতে হবে। কর্মশালায় জানানো হয়, চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি উপজেলার মধ্যে কর্ণফুলী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা ও চন্দনাইশ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ছে। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী এসব উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে ৫৪ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ জন। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে যাতে কোনো রোহিঙ্গা ঢুকে যেতে না পারে, সেজন্য ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষেত্রে এই কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৪ জন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার ৩২ উপজেলাকে বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে। এর মধ্যে কক্সবাজার ও রাঙ্গামাটিতে ৮টি করে, বান্দরবানে ৭টি ও চট্টগ্রামে ৯টি উপজেলা বিদ্যমান। আগের বছর ২০টি উপজেলা বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে নির্বাচন কমিশন। পরে দেশের দক্ষিণ–পূর্ব অঞ্চলের এই ৪টি জেলায় বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার খবরে গত ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত ভোটার তালিকা হালনাগাদ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয় সভায় আরো ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত আগস্টে বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলা।

ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই বিশেষ ৩২টি উপজেলার নাগরিকদের ভোটার হতে হলে বাবা–মার জাতীয় পরিচয়পত্রের পাশাপাশি চাচা ও ফুফুর জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি জমা দিতে হবে। এছাড়া ভোটার নিবন্ধনের নির্ধারিত ফরম ছাড়াও তাদের পূর্ব পুরুষের ধারাবাহিকতা প্রমাণে অতিরিক্ত একটি ফরম পূরণ করতে হবে। এছাড়া এসব উপজেলায় রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির যাচাই–বাছাই ছাড়া এসব উপজেলায় কেউ ভোটার হতে পারবে না।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত উপজেলাগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা ও চন্দনাইশ উপজেলা; কক্সবাজারের সদর, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, উখিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, রামু ও টেকনাফ; বান্দরবানের সদর, লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানছি এবং রাঙামাটির সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল রয়েছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ২৫ জুলাই থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে একযোগে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। যাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তাদের যাচাই–বাছাই ও নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে আগামী ৫ নভেম্বর পর্যন্ত। ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা এবং ৩১ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করার কথা নির্বাচন কমিশনের।

কর্মশালায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (চট্টগ্রাম বিভাগ) দীপক চক্রবর্তী, উপ–পরিচালক মো. নায়েব আলী, বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.