শীর্ষ পেশাজীবী নেতারা চান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন

0

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা : দেশের প্রগতিশীল পেশাজীবীদের পাঁচ শীর্ষ নেতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মাঝি হতে চান।

পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদদের মধ্যেও বুদ্ধিবৃত্তিক পেশার মানুষের সংখ্যাই ছিল উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে ষাটের দশকের রাজনীতিতে পেশাজীবীদের যেই আধিক্য তার চিত্র পাল্টে গেছে ১৯৭৫এর পর থেকে । ৭০-এর নির্বাচনে এমনকি ৭৩ সালেও বঙ্গবন্ধু বুদ্ধিবৃত্তিক পেশাজীবীদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দেন । ১৯৭৫এর পরে সংসদে প্রকৃত রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি প্রতিনিধিত্ব কমেছে বুদ্ধিবৃত্তিক পেশাজীবীদের ।

এবারেও প্রার্থীতার আবেদনে ব্যবসায়ীদের আধিক্য রয়েছে । তবে সারাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের পেশাজীবীদের সর্বোচ্চ মোর্চা “পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদে”র পাঁচ শীর্ষ নেতা এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হতে আবেদন করেছেন । তাঁরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডে আবেদন পত্র জমা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, এই পেশাজীবী মোর্চাটি আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলোর পেশাজীবীদের সমন্বিত ফোরাম, যার প্রধান উপদেষ্টা হলেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। আর এই সমন্বয় পরিষদটি বিগত জাতীয় নির্বাচনসহ প্রায় সব কটি নির্বাচনে ভুমিকা রাখছে অন্ততঃ দুই দশক।

যে ৫জন শীর্ষ পেশাজীবী নেতা নৌকার মাঝি হতে চান তাঁদের মধ্যে -ফেনী-২ আসনে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল), সংগঠনটির অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইবি) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি ), সংগঠনটির চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ এবং সর্ববৃহৎ সংগঠন বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী চট্টগ্রাম -৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) এবং বগুড়া শাখার সভাপতি ডা: মোস্তফা আলম নান্নু ।

পেশাজীবী নেতা প্রার্থীগণ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবার ফেনী-২ আসন থেকে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডে । দৈনিক অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ অবজারভারে রিপোর্টার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৯৮ সালে অবজারভারের সম্পাদক হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল সাংবাদিক ফোরামের দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন ।

২০০৮সালে আসনটি থেকে নির্বাচন করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির ভিপি জয়নালের কাছে অল্প ব্যাবধানে হেরে যান । গত ৪০ বছর আগে ১৯৭৮সালে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের(ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।

এর পর ক্রমে ডিইউজে ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)র শীর্ষ নেতৃত্বে ছিলেন দফায় দফায়। পেশাজীবীদের নানা সংকটে দেশে বিদেশে বেশ সোচ্চার ভুমিকা রাখেন তিনি। পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা শুরুর দিকে পরিষদটির আহবায়কও ছিলেন । গতবারের নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলেও এবার তিনি প্রার্থীতার আবেদন করেছেন।

অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান : পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। আসনটি টাঙ্গাইলসহ সারাদেশে বহুল আলোচিত। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমানুর রহমান খান রানা আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

২০১২ সালের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া এই এমপি একজন আওয়ামী লীগ নেতা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হন। এই আসনেই এবার প্রার্থী হতে চান পেশাজীবী আন্দোলনে গত দুই দশকে বিশেষ ভুমিকা রাখা অধ্যাপক কামরুল। একাধারে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ(স্বাচিপ)’র একাধিক কেন্দ্রীয় পদেও নেতৃত্ব দেন তিনি। দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ নিয়ে সক্রিয় ছিলেন তিনি।

ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর: ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স(আইইবি)-এর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় পেশাজীবী নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর প্রার্থী হতে চান কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি ) আসনে ।

বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের নিরঙ্কুশ সমর্থনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি আইইবি’র সভাপতি হন। আইইবি’র দফায় দফায় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই জি এস বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক। পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য এবারের প্রার্থীতায় ব্যাপক আলোচনায় রয়েছেন।

সাংবাদিক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী রাসেল: সারাদেশের সাংবাদিকদের মধ্যে বর্তমানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকা মনোনয়ন প্রত্যাশী একমাত্র পেশাজীবী নেতা রিয়াজ হায়দার চৌধুরী রাসেল নৌকার মাঝি হতে চান চট্টগ্রাম-৯(কোতোয়ালি-বাকলিয়া)য়।

পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিকদের জাতীয় সংগঠন ‘বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নে’র সহসভাপতি তিনি। চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য তিনি । চট্টগ্রামের সদর আসনে ১৪দল ও জাতীয় পার্টি(এরশাদ) নেতৃত্বাধীন জোটের মাঠের কর্মীদের স্নায়ুবিক দূরত্বের সংকট কাটাতে পেশাজীবী- নাগরিক সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিয়াজের প্রার্থীতাকে বিশেষ বিবেচনায় দেখছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকগণ।

গত অন্ততঃ আড়াই দশকে দুঃসময়ে মাঠে থাকা পেশাজীবী নাগরিক সংগঠক রিয়াজের চট্টগ্রাম বিভাগ হতে পেশাজীবী কোটায় মনোনয়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সনাতনী সম্প্রদায়ের সাথে সুসম্পর্ক,তরুণ ও পেশাজীবী-শ্রমিক শ্রেণীর ভোটার আকর্ষণে প্রভাব-সক্ষমতাই নিয়ামক হতে পারে বলে আশা করছেন পেশাজীবীরা । চট্টগ্রামে নাগরিক উদ্যেগের এই আহবায়ক ২০০০সালে থেকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের দফায় দফায় নেতৃত্ব দেন।

ওয়ান ইলেভেনের দুঃসময়ের পূর্বাপর সময়ে , বিগত চসিক নির্বাচনসহ শিক্ষক-চিকিৎসক-সাংবাদিক- প্রকৌশলীসহ পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের নানা সংকটে মাঠে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর ২১আগস্টে হামলার প্রতিবাদসহ বিভিন্ন হত্যাকান্ড ও হামলার প্রতিবাদে মাঠে ছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ।

গণজাগরনেরও প্রধানতম এই সংগঠক চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মরহুম জননেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে গত পঁচিশ বছর আগে থেকেই মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় সম্পৃক্ততা ছাড়াও সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াতের পেট্রল বোমা-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারেও সক্রিয় ভুমিকা রাখেন । পরবর্তীতে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনেরও এই ঘনিষ্ঠ শুভার্থী ২০১৫সালের চসিক নির্বাচনে নাগরিক কমিটির পক্ষে ঘোষিত ইশতেহারটির প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ।

২০১৪এর জাতীয় নির্বাচনে ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় নাগরিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক। চট্টগ্রাম থেকেই নিয়মিত চলমান রাজনৈতিক ইস্যুতে টিভি টকশো করে সর্বজন পরিচিতি পাওয়া এই গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব গড়েছেন নিজস্ব ভক্ত বলয়ও । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরুণ নেতৃত্ব সৃষ্টির যে অব্যাহত প্রচেষ্টা, তাতেও পেশাজীবি নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে তরুণ নেতা রিয়াজের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে পারে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক তথ্যাভিজ্ঞরা । এমন বহুমাত্রিক কারণে ব্যাপক আলোচনায় আছেন তিনি ।

ডা. মোস্তফা আলম নান্নু : বগুড়া-৭ (গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের বগুড়ার শাখার সভাপতি ডা. মোস্তফা আলম নান্নু। তিনি বিএমএ বগুড়া শাখারও সভাপতি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে ২০০৮সালে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। আসনটি ঘিরে তিনি মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক সক্রিয় রয়েছেন। নিজ এলাকার সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে ও সনাতনী সম্প্রদায়ের পাশে রয়েছেন তিনি দীর্ঘদিন ধরে ।

এদিকে দেশজুড়ে এই শীর্ষ পেশাজীবীদের প্রার্থীতা নিয়ে পেশাজীবীদের মাঝে আশাবাদ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতূহল রয়েছে। জোট আর ফ্রন্টের সমঝোতার হিসেব নিকেষে পেশাজীবীদের প্রার্থীতা বহু সংকট কাটাতে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতি সচেতনেরা ।

একটি জরিপে প্রকাশ, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদে সুস্পষ্ট আধিপত্য ছিলো বুদ্ধিবৃত্তিক পেশাজীবীসহ পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদদের। যদিও তখনও ২৪ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী। দশম জাতীয় সংসদে ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের ১৭৫জনই ব্যবসায়ী।

সবচেয়ে বেশি ১৪২ জন ব্যবসায়ী জনপ্রতিনিধি সরকারি দলে। নবম সংসদেও ছিল অনেকটা একই চিত্র। আওয়ামী লীগের শতকরা ৫৩ ও বিএনপির ৬৯ ভাগ সংসদ সদস্যেরই পেশা ছিলো ব্যবসা। সার্বিকভাবে ৫৯ শতাংশ ব্যবসায়ী ছিলেন ওই সংসদে। এবারেও ব্যাবসায়িদের মনোনয়ন প্রাপ্তিতে প্রচেষ্টার হিড়িকে সংসদে পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব চান পেশাজীবীরা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.