সমন্বয়হীনতার কারনে পরিকল্পিত উন্নয়ন হচ্ছে নাঃ মেয়র
সিটি নিউজঃ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, চট্টগ্রামে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের উন্নয়ন কর্মকান্ডে সমন্বয় করা গেলেই নগরবাসীর ভোগান্তি ও বিভ্রান্তির অবসান ঘটবে।
তাই সিডিএ, ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও টিএন্ডটি সহ অন্যান্য সেবাদানকারী সংস্থার মধ্যে অবশ্যই সমন্বয় থাকা বাঞ্চনীয়। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা পরিপত্রে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে সমন্বয় সাধনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
আজ রবিবার ( ২৪ জুন ) সকালে কর্পোরেশনের কনফারেন্স হলে নগর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি (সিডিসিসি)’র ১২তম সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, সমন্বয়হীনতার কারনে পরিকল্পিত উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। কোন প্রতিষ্ঠানের কি দায়িত্ব তা জানে না নগরবাসী।
মেয়র বলেন, ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। তাই সকলকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাতেই চট্টগ্রামের পুঞ্জিভূত সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি বলেন, ভালো কাজের আলোচনা নেই। মন্দ কাজের জন্য সমালোচনার ঝড় উঠে। এই মন্দ কাজের জন্য নগরবাসী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে দোষারোপ করে। তাই নগরীর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের কার কি কাজ তা নগরবাসীকে অবহিত করা একান্ত অপরিহার্য।
উত্তর চট্টগ্রামে চলাচলকারী ভারী যানবাহনের জন্য কুলগাঁও এলাকায় বাস টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামে চলাচলকারী যানবাহনের জন্য অপর একটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে বলে মেয়র সভাকে অবহিত করেন।
তিনি বলেন, ওয়াসা, পিডিবি, টিএন্ডটি সহ বিভিন্ন সংস্থা রাস্তা খোড়াখুড়ি করে। দূর্ভোগ বাড়ে সাধারন মানুষের। চট্টগ্রাম শহরে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ প্রকল্প একনেকে পাশ করানোর পর আমাদের কাছে রাস্তা কাটার অনুমতি চায়। তখন আমাদের অনুমতি না দিয়ে উপায়ও থাকে না।
প্রকল্প গ্রহণের আগে সমন্বয় করলে এ সমস্যা হতো না। এ প্রসঙ্গে তিনি আগামী অর্থ বছরের সকল পরিকল্পনা ১৫ দিনের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য কর্পোরেশনের অধিক্ষেত্র প্রতিষ্ঠান সমূহের প্রতি আহবান জনান। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরে ৩ হাজার কোটি টাকার অধিক বিভিন্ন সংস্থার কাজ চলমান রয়েছে।
এ কাজগুলো বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামে দৃশ্যমান উন্নয়ন পরিলক্ষিত হবে। তিনি আরো বলেন, সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। নালা সমূহ পরিষ্কার করার সময় স্লাব উঠানো হচ্ছে। কিন্তু কাজ শেষে স্ল্যাবগুলো নালার উপর বসানো হচ্ছে না।
অথচ অধিকাংশ নালার স্ল্যাব ফুটপাত হিসেবে ব্যবহার হয়। তাতে মানুষের হাটা চলায় বিঘ্ন ঘটছে। আর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলেতো এসব খোলা নালা মৃত্যুকুপে পরিণত হয়। তাই এসব বিষয়ে তিনি সিডিএ কে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার আহবান জানান।
পাহাড়ের ঝুকিপূর্ণ বসবাস নিয়ে সিটি মেয়র বলেন, এভাবেতো চলতে পারে না। নগরীতে যত্রতত্র পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এ সমস্যা দেখার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। এই পাহাড় কাটা রোধে পরিবেশ অধিদপ্তর যদি সিটি কর্পোরেশনের সহায়তা চায় সে ক্ষেত্রে চসিক সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে।
সভায় পরিবেশ অধিদপ্তর এর পরিচালক মো. আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, সিডিএ কর্তৃক অনন্যা আবাসনসহ আশপাশের মিল কারখানার বর্জ্যের কারনে হালদা নদীর দূষন সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় স্বার্থে এ হালদা নদীকে দূষন থেকে রক্ষা করার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, এ হালদা নদী একটি প্রাকৃতিক নদী এ নদী থেকে বৎসরে কোটি কোটি টাকা আয় হয়। তাই হালদা নদীকে জাতীয় নদী ঘোষনায় সকল কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের ব্যবসায়িক হৃদপিন্ড। জলাবদ্ধতা থেকে একে রক্ষার জন্য সিডিএ এর মেগা প্রকল্প দ্রুতগতিতে বাস্তবায়নের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, প্রতিদিনি ১৫ হাজার ভারী গাড়ী চট্টগ্রামে চলাচল করে।
এসব গাড়ী সমূহের সুনির্দিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় নিত্য যানজট সৃষ্টি হয়। তাই নগরীর বাইরে বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা অতীব প্রয়োজন। এ সমস্যা নিরসনে তিনি একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, বিগত ২৬ বৎসর এ নগরবাসী সুপেয় পানির কষ্ট পেয়েছে। চট্টগ্রামে ওয়াসা কর্তৃক চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পন্ন হলে নগরবাসীর সুপেয় পানির কোন অভাব হবে না।
তিনি বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রাস্তা কর্তন করতে হয়। এতে নগরবাসীকে সাময়িক অসুবিধা ভোগ করতে হয়। তারপরও জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে নির্দ্দিষ্ট সময়ের আগে কাজ সম্পন্ন করে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহার পরিচালনায় সভায় কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে.কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় চট্টগ্রাম এর ডেপুটি ডাইরেক্টর ইয়াসমিন পারভীন তিবরিজি,
চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ এর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) কুসুম দেওয়ান, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর এর পরিচালক মো. আজাদুর রহমান মল্লিক, বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. তানভিরুল ইসলাম, কর্ণফুলি গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন লি. এর ডিজিএম প্রকৌশলী আমিনুর রহমান, বিটিসিএল এর প্রকৌশলী প্রবাল কুমার শীল,
বিআরটিএ এর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ কায়সার, বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী লিয়াকত শরিফ খান, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু হেনা মোহাম্মদ তারেক ইকবাল, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো.জহির উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ফিটনেস বিহীন গাড়ী চলাচল, অনুমোদন বিহীন যান্ত্রিক যান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হতে অযান্ত্রিক যান অপসারন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।