সরকারের উন্নয়নচিত্রের ফেরিওয়ালা ফরিদ মাহমুদ

0

বিশেষ প্রতিনিধি,সিটি নিউজ :  আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের বৈতরনী পার হতে চায়। সরকারের উন্নয়ন পদক্ষেপে ভর করে শেখ হাসিনার মিশন-ভিশন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিনত হবার পথে অগ্রসরমান শ্লোগানে ও বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও পোড়াও সহিংস আন্দোলনের দু:সহ স্মৃতি সামনে রেখে জনগনের মন জয় করতে চায় দলটি।

স্বাধীনতা অর্জন থেকে শুরু করে দেশ ও জাতি গঠনে দলটির ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এ বার্তায় চাইবে যে, এসব বিবেচনায় উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পুনরায় সরকার গঠনে আওয়ামী লীগ দাবী রাখে। এই উদ্দেশ্যে ব্যপক প্রচার-প্রচারনায় মাঠে নেমেছে দলটি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারের ও শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নে উন্নয়নের প্রচারনায় চট্টগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন মাহনগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ফরিদ মাহমুদ।

আগামী নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে বিএনপির দুর্নীতির আমলনামা ও সরকারের উন্নয়ন প্রচারনাকে প্রাধান্য দিয়ে এজেন্ডা হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারনায় এ পলিসি গ্রহনের সিদ্ধান্ত সঠিক। যে কোন দল এটিই করবে। জনগনের কাছে নিজেদের সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি প্রধান প্রতিদ্বন্ধিতার খারাপ দিকগুলো তুলে ধরতে চাইবে। তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, রাজপথের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপিও একই পথে হাঁটবে।

সে ক্ষেত্রে সরকারের দুই মেয়াদের শাসনামলের ইমেজ যদি ক্লিন হয়ে থাকে তাহলে বিএনপি বেশীদূর এগুতে পারবে না। কিন্তু ভোটের আগে জনগনের সামনে যদি তথ্য প্রমান দিয়ে বিশ্বাসযোগ্য কোন অনিয়ম দুর্নীতি কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহারের নজির হাজির করতে পারে, তাহলে সরকারী দলকে কিছুটা বেগ পেতে হবে। এ ছাড়া সবচেয়ে যে বিষয়টি বেশী গুরুত্বপূর্ণ তা হল, সরকার যেভাবে সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন করতে চায়, শেষমেশ যদি সেভাবে না পারে সে ক্ষেত্রে আরও কিছু চ্যালেঞ্জ সামনে চলে আসবে।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে বর্তমান সরকারের আমলে প্রচুর কাজ হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের সরকারের সফলতা মানুষের কাছে তুলে দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। যার কারনে সরকারের সফলতা মানুষের কাছে পৌঁছছে না। এমপি-মন্ত্রীদের সাথে তৃনমূলের দূরত্ব এখন অনেক। সব নেতাই এখন আখের গুছানোর কাজে এতই ব্যস্ত যে, শেখ হাসিনার সফলতা ও সরকারের উন্নয়নের চিত্র মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ব্যর্থ অধিকাংশ শীর্ষ নেতা। এমনি পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও অন্যতম তুখোড় নেতা ফরিদ মাহমুদ এর ব্যতিক্রমী প্রয়াস উন্নয়নচিত্রে সরকারের সকল মেঘা প্রকল্পের খতিয়ান জনগনের কাছে প্রচারের মত গুরুদায়িত্ব পালন করছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র এক বছর বাকি। চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার কথা, এই সময়ে এমপিদের সঙ্গে তৃনমূলের নেতাদের দ্বন্দ্ব ও বিরোধে উদ্বিগ্ন আওয়ামী লীগ হাই কমান্ড। চট্টগ্রামে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতাও মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর থমকে পড়েছে। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিনকে করা হলেও মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা সন্তুষ্ট নয়। অন্যদিকে উৎফুল্ল আ.জ.ম নাছিরের অনুসারীরা। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে এই উদ্বেগ।

আওয়ামী লীগের সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে তৃনমূলের নেতাকর্মীদের দূরত্ব ভোটের ব্যবধান বড় করে দিয়েছে। এ বিষয়টি আমলে নিয়ে যে কোন মূল্যে দ্বন্দ্ব দুর করতে চায় আওয়ামী লীগ। দলের শীর্ষ নেতারা বারবার মন্ত্রী এমপিদের তৃনমূল নেতাদের বিরোধ ও দূরত্ব কমিয়ে আনার তাগিদ দিলেও কে শুনে কার কথা। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বিগ্ন শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। আগামী সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি গঠন করা না হলে নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে সরকারদলীয় সংগঠনের।

আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড সুত্রে জানা গেছে, দলের নীতি নির্ধারক ও হাইকমান্ড ইতিমধ্যে নেতাকর্মীদের জনগনের ঘরে ঘরে গিয়ে এ সরকারের আমলে কি কি কাজ হয়েছে তা তুলে ধরতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের বিদেশে সম্পদ থাকার তথ্য, খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলা, কালো টাকা সাদা করা, তারেক রহমানের মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় সাজা পাওয়া সহ এ ধরনের অন্য বিষয়গুলো জনগনের কাছে উপস্থাপন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ক্ষমতাসীন দল মনে করছে, জনগনকে এ দুটি বিষয় সঠিকভাবে বোঝাতে পারলে তারা আগামী নির্বাচনে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করবে। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ সরাকারে এসে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশকে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে। দেশব্যাপী ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে। জনগনের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। তাই তাদের বিশ্বাস, মানুষ আওয়ামী লীগকে বেছে নেবে। আওয়ামী লীগের একাধিক সুত্র জানায়, ইতিমধ্যে প্রচারনার কৌশল নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা মনে করছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেন্দ্র থেকে সম্মেলনের তারিখ ঘোষনা করা হতে পারে। তবে আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের ঘরানার পক্ষ মনে করছে, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে নগর কমিটির সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা কম। আপাতত নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী দায়িত্ব্ পালন করবেন। এমনই ধারনা নিয়ে নাছির উদ্দিন পক্ষের নেতাকর্মীরা উৎফুল্ল। নগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক চন্দন ধর বলেন, দলের সভানেত্রী জনত্রেনী শেখ হাসিনা মাহতাব ভাইকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। আশাকরি তিনি দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবেন, দলকে সংঘটিত করে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এই বিশ্বাস রয়েছে।

এম.ই.এস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক হাবিবুর রহমান তারেক বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। এখানে কিছু বলার নেই। নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন সিটিনিউজকে বলেন, মাহতাব ভাই রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। তিনি অসুস্থ হলেও দলীয় কর্মকান্ড চালাতে হবে বর্তমান সময়ের সংকটজনক এক ক্রান্তিলগ্নে। কারন: সামনে নির্বাচন। সে হিসেবে সাংগঠনিক কর্মকান্ড এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে তাকে। মহানগর আওয়ামী লীগের পরিবেশ ও বনবিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান সিটি নিউজকে বলেন, আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এ সময় প্রয়োজন গতিশীল নেতৃত্ব।

নগর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা মনে করেন, নগর আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ন কমিটি রেখে চট্টগ্রামে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। নির্বাচনের আগেই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের চেষ্টা ও প্রক্রিয়াতে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটি। এমন আভাস দিয়েছে দলীয় একাধিক সুত্র। ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ.জ.ম নাছির উদ্দিনকে সাধারন সম্পাদক করে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ তিন বছর।

গত বছরের নভেম্বরে শেষ হয় এই কমিটির মেয়াদ। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সম্মেলন করার পরিকল্পনা ছিল মহিউদ্দিন চৌধুরীর। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুতে এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী সিটিনিউজকে বলেন,মাহতাব উদ্দিন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আওয়ামী লীগের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ নির্বাচন। এই নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়া হচ্ছে কঠিন কাজ। তিনি সকলকে নিয়ে এগিয়ে যাবেন এই আশাবাদ রয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন বিচক্ষন মানুষ।

তিনি ভালমন্দ সবকিছু অবগত আছেন। এদিকে মহিউদ্দিন অনুসারীদের অনেকে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন এবং তাকে সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন। এখন দেখার বিষয়, সামনের দিনগুলো কিভাবে যাবে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ড। মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে দল কতটুকু শক্তিশালী হয়ে অগ্রসর হবে নাকি নতুন কমিটি না আসা পর্যন্ত মহিউদ্দিন চৌধুরীর অধিকাংশ অনুসারী পর্যবেক্ষনে রাখবেন চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তা সময়ে বলে দেবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.