স্বামী হত্যার দায়ে প্রেমিকসহ স্ত্রী গ্রেফতার

0

এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই : প্রতিদিন দুপুর ১২ থেকে ২ টা পর্যন্ত হয়তো স্বশরীরে দেখা করা নয়তোবা মুঠোফোনে কথা বলে পরকীয়া প্রেমে মগ্ন হয়ে পড়েন এক স্ত্রী। তবে পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্বামী। পরকীয়া যত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছিল তত স্বামীকে দূরে বহুদূরে ঠেলে দিতে একপায়ে খাঁড়া হন স্ত্রী। যেই চিন্তা সেই কাজ। পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রী তাই স্বামীকে হত্যা করার জন্য কথিত প্রেমিককে অনুমতিও দেয়, যাতে নিশ্চিন্তে তারা ভবিষ্যতে যেন বিবাহ বন্ধনেও আবদ্ধ হতে পারেন।

মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের জোরারগঞ্জ থানাধীন করেরহাট-রামগড় সড়কের নয়টিলা মাজারের ৫ শত গজ পূর্ব পার্শ্বে সরকারী আগর বাগান এলাকায় পাহাড়ে মৃতদেহ আংশিক পচন ও পোকা ধরা ভ্যান চালক জয়নাল আবেদীন প্রকাশ জানুর লাশ গত ২৬ নভেম্বর উদ্ধার করে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। জানু ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার ছাগলনাইয়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল আলমের পুত্র। সে ২ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক ছিল।

জানুর অগোচরে তার স্ত্রী বিবি আয়েশা পাশ্ববর্তী উত্তর মনদিয়া গ্রামের মৃত শফি উল্ল্যাহর পুত্র সাহাব উদ্দিনের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। এরপর আয়েশার স্বামী যখন ভ্যান নিয়ে জীবিকার তাগিদে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ে এবং ছেলেমেয়েরা স্কুলে চলে যায় সেই সুযোগে সাহাব উদ্দিন আয়েশার বসতঘরে এসে পরকীয়া করতো নয়তো দীর্ঘ সময় নানা রসাত্মক কথা মুঠোফোনে বলে সময় কাটাতো। দিনের ওই নির্দিষ্ট সময় মুঠোফোনে কথা বললেও রাতে স্বামী ও ছেলেমেয়েরা বসতঘরে থাকার কারণে আয়েশা কথা বলতো না।

গত ২৩ নভেম্বর জানু রামগড় তার এক আত্মীয়ের বাড়ীতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতির খবরটি আয়েশা সাহাব উদ্দিনকে জানায়। পরে জানু যখন রামগড় যাওয়ার জন্য ছাগলনাইয়া বাজারে আসে। পূর্ব থেকে প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষায় থাকা সাহাব উদ্দিন কুশল বিনিময়েরপর জানু কোথায় যাচ্ছে জানতে চায়-তখন জানু জানায় রামগড়ে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছে।

সাহাব উদ্দিনও তার এক আত্মীয়ের বাড়ি যাবে বলে জানায় জানুকে। তখন দুইজন একসাথে করেরহাট এলাকার নয়টিলা মাজার পর্যন্ত আসে। এসময় সাহাব উদ্দিন জানুকে জানায় যে তার এক আত্মীয়ের বাড়ি রয়েছে পাহাড়ের উপর। তারপর মাজারের পাশের আগর বাগানে জানুকে নিয়ে যায় সাহাব উদ্দিন।

ইতিমধ্যে জানুর সাথে থাকা দা বহন করতে অসুবিধা হচ্ছে অযুহাতে সাহাব উদ্দিন দাটি নিয়ে নেয় এবং পাহাড়ে উঠারপর সেই দা দিয়েই সাহাব উদ্দিন জানুকে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর জানুর স্ত্রী আয়েশাকে মুঠোফোনে সাহাব উদ্দিন জানুকে হত্যা করেছে বলে নিশ্চিত করেন। স্বামীকে হত্যার সাথে আয়েশার এবং সাহাব উদ্দিনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তা যেন পুলিশ কোনভাবে সন্দেহ না করে সেজন্য তারা দুইজন জোরারগঞ্জ থানায় উপস্থিত হয়ে অজ্ঞাতদেরকে আসামী করে ধারাঃ ৩০২/২০১/৩৪ দন্ডবিধিতে মামলা (নম্বর-২৮) দায়ের করে।

এই ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে গত শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জানুর স্ত্রী আয়েশাকে এবং কথিত প্রেমিক সাহাব উদ্দিনকে ছাগলনাইয়া বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম আদালতে স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করে ৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে তারা।

জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল কবির জানান, গত ২৬ নভেম্বর জোরারগঞ্জ থানাধীন নয়টিলা মাজারের উপরের একটি সড়ক থেকে ভ্যান চালক জয়নাল আবেদীন জানুর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে নিহতের স্ত্রী বিবি আয়েশা অজ্ঞাত ব্যক্তিবর্গকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি অবলম্বন করে বিবি আয়েশার কথিত প্রেমিক সাহাব উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। পরে সাহাব উদ্দিনের জবানবন্দী অনুসারে জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী বিবি আয়েশাকে গ্রেফতার করে। শনিবার তাদের চট্টগ্রাম আদালতের প্রেরণ করা হলে হত্যার কথা স্বীকার করে তারা ৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.