সড়কে ঝরে গেল ৪৪ প্রাণ

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :  দেশের ১৫ জেলার সড়কে ঝরে গেল ৪৪ প্রাণ। এর মধ্যে শুধু গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলায় বাস উল্টে ১৮ জন এবং রংপুর সদরে বিআরটিসির বাসে ট্রাকের ধাক্কায় ৬ জন নিহত হয়েছেন।

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাস খাদে পড়ে দু’জন, সিরাজগঞ্জে ট্রাক ও বাসের সংঘর্ষে দু’জন, নাটোরে ট্রাকচাপায় দুই ইজিবাইক আরোহী, গোপালগঞ্জে বাসচাপায় তিনজন, সাভারের আমিনবাজারে বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে একজন, টাঙ্গাইলের সখীপুরে বাসের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী এবং চুয়াডাঙ্গায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় এক পথচারী নিহত হয়েছেন।

এছাড়া লক্ষ্মীপুরে দু’জন এবং রাজশাহী, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ ও নেত্রকোনায় ১ জন করে নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেই ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরছিলেন। এসব দুর্ঘটনায় আরও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। যুগান্তর রিপোর্ট, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

গাইবান্ধা : শনিবার ভোরে পলাশবাড়িতে একটি যাত্রীবাহী নৈশকোচ রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে গেলে ১৮ যাত্রী নিহত ও অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। পলাশবাড়ি সদরের মহেশপুরসংলগ্ন বাঁশকাটা গরুরহাট এলাকায় রংপুর-বগুড়া মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা উদ্ধার কাজ চালান।

আহতদের পলাশবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার এমদাদ আলী, গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের ইউনুস আলী, নীলফামারীর জলঢাকা মিনারুল খান, কুড়িগ্রামের চর রাজীবপুরের মাসুদ রানা, কুষ্টিয়ার মিরপুরের আবদুর রশিদ, দিনাজপুরের বীরগঞ্জের আখতারুল ইসলাম, টাঙ্গাইল সদরের রুবেল হোসেন ও শাহজাহান সিকদার, ঠাকুরগাঁও সদরের আবদুর রহিম, এনামুল হক ও মকবুল হোসেন, বালিয়াডাঙ্গির শফিকুল ইসলাম, হরিপুরের ইসমাইল হোসেন, রুবেল মিয়া ও বিশ্বনাথ চন্দ্র রায় এবং পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার জহিরুল ইসলাম। তাদের কেউ গরু ব্যবসায়ী কেউ পোশাক শ্রমিক ছিলেন।

আহত যাত্রীরা জানান, ঢাকা থেকে আলম এন্টারপ্রাইজের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৬৪২২) ওই বাসটি শুক্রবার সন্ধ্যায় অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের উদ্দেশে যাচ্ছিল। ঘটনাস্থলে একটি রেইনট্রি গাছের সঙ্গে প্রচণ্ড বেগে ধাক্কা খেয়ে বাসটি খাদে পড়ে যায়। এতে গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনার আগে চালক কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। এ নিয়ে তাকে সতর্ক হতেও বলেছিলেন যাত্রীরা।

পলাশবাড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল আলম জানান, দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ৯ জনের মৃত্যু হয়, পরে পলাশবাড়ি উপজেলা হাসপাতালে নেয়ার পথে ৭ জন মারা যান। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও দু’জনের।

জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল, পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া, হাইওয়ে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফ হোসেন, থানা অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল আলম, উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (পিআইও) শাহীনুর আলমসহ অন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক নিহতদের পরিবারকে নগদ ১০ হাজার টাকা করে প্রদানের ঘোষণা দেন।

রংপুর ও কাউনিয়া : শুক্রবার গভীর রাতে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের রংপুর সদর উপজেলার সলেয়াশাহ বাজার এলাকায় বালুবোঝাই ট্রাকের চাপায় যাত্রীবাহী বাসের ৬ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহত ও আহতদের সবাই পোশাক শ্রমিক। তারা ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদানের উদ্দেশে ঢাকা যাচ্ছিলেন।

তারাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ওসি আবদুল্লাহেল বাকী জানান, দিনাজপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বিআরটিসির একটি ডবলডেকার বাস রংপুর সদর উপজেলার সলেয়াশাহ্ বাজার এলাকায় পৌঁছলে বাসের পেছনের একটি চাকা পাংচার হয়। বাসটি মহাসড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে চাকা মেরাতম করার সময় পেছন থেকে একটি বালুবোঝাই ট্রাক বাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে বাসের পেছনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই দুই নারীসহ ৬ যাত্রী নিহত হন। আহত হন কমপক্ষে ১০ জন। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজ চালায়। নিহতদের মধ্যে সাজ্জাদ (১৯) ও নিশাত (২১) নামে দু’জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের বাড়ি দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ এলাকায়।

এদিকে কাউনিয়ার হারাগাছ পৌরসভার পোদ্দারপাড়া পল্লীবিদ্যুৎ সাব-স্টেশনের কাছে হারাগাছ-রংপুর সড়কে ট্রাক্টরের ধাক্কায় শনিবার দুপুরে মনির হোসেন (২৮) নামে এক রিকশাচালক ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন।

ফরিদপুর ও ভাঙ্গা : শনিবার সকাল ৯টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার পূর্ব সদরদীতে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই দু’জন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। তাদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। নিহতরা হলেন- নাটোরের হালশা এলাকার আহাদ প্রামাণিকের ছেলে ড্রাইভার ইব্রাহিম প্রামাণিক (৪০) ও নলডাঙ্গা উপজেলার কালীগঞ্জ এলাকার আকব্বারের ছেলে হেলপার হাবিবুর রহমান (৩৫)।

রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) : রায়গঞ্জে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের কালিকাপুর নামক স্থানে শনিবার সকাল সাড়ে ৫টার দিকে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন। আহতদের রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতরা হলেন- রায়গঞ্জ উপজেলার ঘুড়কা ইউনিয়নের শামনাই গ্রামের জসিম উদ্দিন ফকিরের ছেলে শরিফ উদ্দিন ফকির (৪০) ও মৃত দোহা সেখের ছেলে রফিকুল ইসলাম (২৫)।

নাটোর : শনিবার সকালে শহরের আলাইপুরে কমেলা সুপার মার্কেটের সামনে বালুবোঝাই ট্রাকের চাপায় নারীসহ ইজিবাইকের দুই আরোহী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ইজিবাইকের চালকসহ তিনজন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার সোনাপাতিল গ্রামের মঙ্গল দেবনাথের স্ত্রী সুলতা দেবনাথ (৩৫) ও একই গ্রামের মৃত কার্তিক চন্দ্রের ছেলে কানাই চন্দ্র (৩২)। আহতদের নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নাটোর ফায়ার স্টেশন কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান, যাত্রীবোঝাই ব্যাটারিচালিত একটি ইজিবাইক স্টেশনবাজার থেকে শহরের হরিশপুর এলাকায় যাচ্ছিল। ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পেছন থেকে একটি বালুবোঝাই ট্রাক অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ওই দু’জন নিহত হন।

গোপালগঞ্জ ও টেকেরহাট : শনিবার সকালে টুঙ্গিপাড়া থেকে ছেড়ে আসা গোপালগঞ্জগামী একটি লোকাল বাস ঘোনাপাড়া মোড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রথমে এক মোটরসাইকেল আরোহীকে ধাক্কা দেয়। এরপর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি রিকশাভ্যান ও মাহেন্দ্রকে ধাক্কা দিয়ে আইল্যান্ডে উঠে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই বাসচাপায় দু’জন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন কমপক্ষে ১২ জন। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এ দিন দুপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মুকসুদপুর উপজেলার দাসেরহাটে একটি যাত্রীবাহী বাসের চাপায় লোকমান শেখ (৫১) নামে এক ইঞ্জিনচালিত ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১০ জন বাসযাত্রী।

সাভার : শনিবার সকালে রংপুর থেকে ছেড়ে আসা দ্রুতি পরিবহনের একটি নৈশকোচ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজারের তুরাগ এলাকায় ইউর্টান নিতে যাওয়া একটি ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই একজন বাসযাত্রী নিহত হন। আহত হন অন্তত ২৩ জন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সখীপুর (টাঙ্গাইল) : সখীপুরে বাস ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে আবদুল বাছেদ (৩০) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। শনিবার সকালে সখীপুর-গোপীনপুর সড়কের তৈলধারা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত যুবক উপজেলার জিতেশ্বরী গ্রামের আবদুল জব্বারের ছেলে।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ইমন (২০) নামে এক চালকের সহকারীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার বেলা ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। গোয়ালন্দ ঘাট থানার এসআই সনাতন জানান, নিহত ব্যক্তির নাম ছাড়া আর কোনো তথ্য আমরা পাইনি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.