হাইটেক পার্ক হবে চট্টগ্রামের সর্বপ্রথম ও সর্বাধুনিক আইটি পার্ক

0

নিজস্ব প্রতিবেদক :: চট্টগ্রামে সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের লক্ষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ হাই টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের মধ্যে এক সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। 

আজ বুধবার (১৮ জুলাই) দুপুরে হোটেল রেডিসন ব্লু’র বে -ভিউ-তে  এই স্মারক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি পত্রে  বাংলাদেশ হাই টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম এনডিসি এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা স্বাক্ষর করেন।

চট্টগ্রাম ওয়াসা ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হানিফ সিদ্দিকি, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক প্রকল্প পরিচালক আজিজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন,  হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সুখী ও সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গঠনের। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় লিপ্ত। সেই প্রচেষ্টার অন্যতম অনুসঙ্গ “রূপকল্প ২০২১” যেখানে স্থান পেয়েছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়।

বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটি এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে যে চুক্তি সম্পাদিত হতে যাচ্ছে তা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের অংশ মাত্র।   ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটি একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি বন্দরনগরী চট্টগ্রামের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এ নগরীতে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীন আগ্রাবাদস্থ সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেট এর ৬ হতে ১১ তলা পর্যন্ত সম্প্রসারনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৩০ (ত্রিশ) কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্প্রসারিত ৫টি ফ্লোরে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা হবে। আজকের চুক্তি বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটি কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তির প্রচার ও প্রসার এর ধারাবাহিক প্রচেষ্টারই ফসল। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম তথ্য ও প্রযুক্তির অনন্য যুগে প্রবেশ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এই প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন এটিই হবে চট্টগ্রাম শহরের মধ্যে সর্ব প্রথম এবং সর্বাধুনিক হাইটেক পার্ক। এই পার্কটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট কর্মী বাহিনীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত  রপ্তানী নীতি ২০১৫-১৮ এর একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো ২০২১ সাল নাগাদ আইসিটি সেক্টরে রপ্তানী প্রায় ৬০ বিলিয়ন ইউএস ডলারে উন্নীত করা। এ লক্ষ্য অর্জনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১২টি  সেক্টরকে অধিকতর অগ্রাধিকার সেক্টর হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে। যেখানে ২য় অধিকতর অগ্রাধিকার সেক্টর হিসেবে সফটওয়্যার এবং আইটি এনাবেল সার্ভিস ও আইসিটি প্রোডাক্ট এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এই হাইটেক পার্ক সফটওয়্যার ডেভেলবমেন্ট ও আইসিটি পণ্য উদ্ভাবনের মাধ্যমে  আমাদের কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। চট্টগ্রাম নগরীতে হাইটেক পার্ক সফটওয়্যার পল্লী’র নির্মাণের কথা উল্লেখ করে মেয়র বলেন এই প্রকল্পের আওতায় চান্দগাঁও বিএফআইডিসি রোডস্থ বড়–য়া পাড়া এলাকায় চসিক’র নিজস্ব ১১ একর জায়গা রয়েছে। এই জায়গাতেই বঙ্গবন্ধুর পুত্র ‘শেখ কামাল আ্ইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দেন। 

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে হাই টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, চট্টগ্রামকে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ অতীতে যেমন গুরুত্ব দিয়েছে,বর্তমানেও দিচ্ছে। আগামীতেও তা সমান গুরুত্ব দিয়ে যাবে। ্আইসিটি’র জন্য চট্টগ্রাম একটি উত্তম জায়গা। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে আইসিটি ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই সত্য অনুধাবন করে বর্তমান সরকার ধারাবাহিক ভাবে ৬৪ জেলায় আইটি পার্ক,সফটওয়্যার টেকনোলজি সেন্টার,ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

তিনি বলেন দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ যুব সমাজ। এই যুব সমাজকে আইসিটি খাতে সঠিক ভাবে প্রশিক্ষিত করা গেলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে দেশের রপ্তানি আয় বহুগুণ বেড়ে যাবে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রা ৬০ বিলিয়ন ডলার। সেই পরিকল্পনা নিয়েই সরকার দেশ জুড়ে হাই টেক পার্ক স্থাপনের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

পরে   সিটি মেয়র, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এবং চসিক শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ চান্দগাঁও বড়–য়া পাড়াস্থ চসিক’র নিজস্ব জায়গাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে মেয়র হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষকে সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রামে  ৩টি সহ সারা দেশে মোট ২৮টি হাইটেক পার্ক স্থাপন করার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। ‘কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক (এবং অন্যান্য হাই টেক পার্ক)-র উন্নয়ন প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পের অর্থায়নে দেশ জুড়ে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে গাজীপুর,যশোর,ঢাকার কাওরান বাজার হাইটেক পার্কের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আগ্রাবাদস্থ সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটের ৬ষ্ঠ থেকে দশম তলা পর্যন্ত ৫টি ফ্লোর জুড়ে নির্মাণ করা হবে ‘চট্টগ্রাম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে অতি শিঘ্রই প্রকল্প কাজ বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র আহবান করা হবে।  বাংলাদেশ হাই টেক পার্ক কর্র্র্র্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ ও বিস্তার ঘটানো, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধি অর্জন, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ এবং শিল্প উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাই-টেক পার্ক, আইট পার্ক ও সফট্ওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে গাজীপুর কালিয়াকৈর এলাকায় ৩৫৫ একর জমির উপর ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি’ স্থাপন প্রকল্পের অফসাইড ইনফ্রাস্ট্রাকচার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে।

যশোরে শেখ হাসিনা সফট্ওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ও ঢাকার কাওরান বাজারে জনতা টাওয়ার সফট্ওয়্যার টেকনোলজি পার্কের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এ দুটি সফট্ওয়্যার টেকনোলজি পার্কে বর্তমানে ৫৪টি আইটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ১ হাজার জনবল কাজ করছে। রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক, খুলনা হাই-টেক পার্কসহ ২৮টি হাই-টেক পার্ক, সফট্ওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণ কার্যক্রম পুরোদমে এগিয়ে চলছে।  অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. হানিফ সিদ্দিকি, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক প্রকল্প পরিচালক আজিজুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে   পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ত্রিমাত্রিক’র সিইও প্রকৌশলী সাইদ মোশাররফ আলী নিশাদ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে   উপস্থাপন করেন  ।  

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.