১৭ বছর পর পটিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা: জেলা ঘোষণা দাবি উপজেলাবাসীর

0

সুজিত দত্ত, পটিয়া প্রতিনিধি : দীর্ঘ ১৭ বছর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা বুধবার দুপুর ২ টায় পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে পটিয়া সহ সারা চট্টগ্রামে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এতে করে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির মনোনায়ন প্রত্যাশীরা যে যত বেশী লোক আনার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এছাড়াও পটিয়ার এমপি আলহাজ¦ সামশুল হক চৌধুরী গত ২ সপ্তাহ ধরে পটিয়া উপজেলা ও পৌর সদরে একাধিক প্রস্তুতি সমাবেশ সম্পন্ন করে। এদিকে পটিয়াকে জেলা ঘোষণার দাবিতে জেলা বাস্তবায়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ গতকাল পটিয়া ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত পটিয়াকে জেলা ঘোষণা করার জন্য দাবি জানিয়েছেন বাস্তবায়ন কমিটির নেতা প্রবীন রাজনীতিবিদ আহমদ নুর ও হাবিবুর রহমান ইদ্রিস সহ অনেকে। ইতিমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে পটিয়া থানার ওসি শেখ নেয়ামত উল্লাহ, ওসি তদন্ত রেজাউল করিম মজুমদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর আগমনে পটিয়ার আপামর জনসাধারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় পটিয়াকে জেলা বাস্তবায়নের দাবিতে ঝড় উঠেছে। এমনকি পটিয়া পৌর সদরে বিভিন্ন চায়ের দোকান ও রেস্তোরায় সর্ব সাধারণের একটিই বাক্য পটিয়াকে জেলা বাস্তবায়ন করা হোক। পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরীও অবকাঠামোগত উন্নয়নে পটিয়াকে জেলা ঘোষণা করার পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। নানান সমীকরণে এমপি সামশুল হক চৌধুরী যদি পটিয়াকে জেলা বাস্তবায়ন করতে পারে তাহলে তিনিই হবেন অবিসাংবাদিত নেতা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ সহ এর আশে পাশে উপস্থিত প্রায় ৫ লক্ষাধিক জনগণের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করছেন। এর পূর্বে তিনি দক্ষিণ চট্টগ্রাম সহ চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। জাতির পিতা ৭৫ সালে পটিয়াকে জেলা ঘোষণা করে গর্ভনর নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধী চক্র একই বছরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্ব-পরিবারে হত্যা করায় ৭৫’র ১ সেপ্টেম্বর উদ্বোধনের জন্য থাকা পটিয়া জেলার কার্যক্রম ফাইল লাল ফিতায় বন্দি হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে অনেক সরকার ক্ষমতায় আসলেও কেউ কথা রাখেনি। সবাই শুধু নির্বাচন আসলে কথার ফুলজুড়ি ছিটিয়েই পটিয়া ছাড়েন। এবার পটিয়াবাসী শেষ বারের মত জাতির পিতার ঘোষণার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে বঙ্গবন্ধুর কন্যার কাছ থেকে কী ঘোষণা আসে সেই প্রতিক্ষার প্রহর গুনছে। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে কর্ণফুলীর ৩য় সেতু থেকে চন্দনাইশ পর্যন্ত নবরূপে সেজেছে।
জানা যায়, ২১ মার্চ বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন। একই সঙ্গে তিনি চট্টগ্রামের অর্ধশত উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করবেন। থাকতে পারে পটিয়া তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর কাঙ্খিত জেলা বাস্তবায়নের ঘোষণাও। পটিয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নিতে দুই সপ্তাহ ধরে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতারা সার্বক্ষণিকভাবে কাজের অগ্রগতি তদারকি করছেন। এমনকি এসএসএফ থেকে শুরু করে সরকারি সকল গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও পটিয়ায় বেশ চোখে পড়ছে। বর্তমানে মাঠ জুড়ে ১৬৮টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পটিয়ার সাংসদ আলহাজ¦ সামশুল হক চৌধুরী পুলিশ প্রশাসনকে এব্যাপার সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা স্মরণ কালের রেকর্ড ভঙ্গ করবে। সর্বত্র লোকে লোকারণ্য হবে। যার যোগ ফল ৫ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গতকাল সোমবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার খরনা ইউনিয়নের জলুয়ারদিঘি পাড় এলাকায় হেলিপ্যাড নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে। এতে তিনশ শ্রমিক কাজ করছেন বলে জানা যায়। বিশাল এ বিলটির মাঝখানে পাশাপাশি দুটি হেলিপ্যাড বানানো হচ্ছে। নির্মাণ করা হচ্ছে আলাদা সড়ক ও গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান। হেলিপ্যাড দুটির মধ্যে একটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবং অন্যটি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের হেলিকপ্টার নামানোর জন্য। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে তা নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু থেকে পটিয়া পর্যন্ত সড়কের উভয়পাশে বিশাল বিশাল পোস্টার, ব্যানার টাঙানো হয়েছে। সভার জন্য মাঠের উত্তর পাশে নির্মাণ করা হয়েছে নৌকার আদলে বিশাল মঞ্চ। মাঠের আশেপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও রঙে রঙে রঙিন হয়ে ওঠেছে।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই প্রথম ভাষণ দেবেন। গতকাল পটিয়া ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার নানা লোকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনে পটিয়া তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসী আনন্দে উৎফুল্ল। কর্ণফুলী নদীতে ট্যানেল নির্মাণ, অর্থনৈতিক জোন, বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ উন্নয়নের রোলমডেলে পরিণত করা হয়েছে। এদিকে জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। ফলে ঢাকা থেকে অত্যাধুনিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রায় ১৬৮টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা এনে জনসভাস্থলে বসানো হচ্ছে। সে লক্ষ্যে সবার গতিবিধি নজরদারী করতে জেলা পুলিশ এ উদ্যোগ নিয়েছে।
পটিয়ার সাংসদ আলহাজ¦ সামশুল হক চৌধুরী জানান, বর্তমান সরকারের আমলে পটিয়ায় ১৬শ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। যা অতীতের কোনো সরকারের আমলে হয়নি। তিনি আশা প্রকা করেন আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে পটিয়াবাসী।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পটিয়াবাসী দাবি, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পটিয়াকে জেলা ঘোষণা করে বাঁশখালীর জাকেরুল হক চৌধুরীকে গর্ভনর নিযুক্ত করেছিলেন। ৭৫’র ১৫ আগস্টের কারণে যা বাস্তব রূপ লাভ করেনি। পরবর্তী স্বৈর সরকার এক অধ্যাদেশে দেশের সব মহকুমাকে জেলা রূপান্তর করলেও পটিয়ার প্রতি বিমাতাসূলভ আচরণ করেছেন। তাই আজ দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণার প্রতি তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা যথাযথ সম্মান প্রদর্শণ করবেন। এদিকে পটিয়া জেলা বাস্তবায়ন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এবং পটিয়ার মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কিবরিয়া বাবুল সহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা গতকাল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পটিয়া জেলা বাস্তবায়নের জন্য স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। এছাড়াও পটিযার সুশীল ও পেশাজীবীরা গতকাল এক সভায় অবিলম্বে পটিয়াকে সদর দপ্তর করে জাতির পিতার ঘোষিত জেলা পটিয়ার কার্যক্রম অবিলম্বে শুরু করার তারিখ ঘোষণা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.