অবৈধ আয়ের কোটিপতিরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সমাজে

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ অবৈধ আয়ের মাধ্যমে ও ব্যবসার সাইনবোর্ডের আড়ালে অবৈধ কর্মকান্ডের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে বিত্তশালী বনে যাওয়া কয়েক হাজার মানুষ দেশের জন্য বিপদ ও জনগণের জন্য আপদ হয়ে উঠেছে। এদের ফ্রীস্টাইল কার্যকলাপ দেশ ও সমাজের সকল স্তরের মধ্যে এমন পরিস্থিতিরি সৃষ্টি করছে। সমাজে সংঘাত, সহিংসতা, ভূমিদস্যু, দখলবাজি, আধিপত্য, কিশোর গ্যাং লালন, মাস্তান ও বখাটের দলীয় লেবেল দেওয়াসহ নানা অপরাধের পর্দার আড়ালে এরাই নাটের গুরু। দলীয় নেতৃত্ব দখলে নেওয়া, জনপ্রতিনিধির চেয়ার ছিনিয়ে নেওয়া ও শাসন-শোষনের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা, সমাজে অস্থিরতা ছড়ানোসহ টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, তদবীরবাজীসহ সকল অনৈতিক কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হচ্ছে পাগলা ঘোড়া ছুটে চলার মত।

গত এক দশকে মাদক, টেন্ডারবাজী, দলীয় প্রভাব, দালালী, দুই নম্বরী ব্যবসার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটিপতির জন্ম হয়েছে। এদের বেশীরভাগের কোন বৈধ আয় নেই অথবা বৈধ আয়ের আড়ালে রয়েছে অবৈধ আয়ের ভান্ডার। দুর্নীতি দমন কমিশনে এই ধরনের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়লেও কোন উদ্যোগ নেই তাদের। অভিজ্ঞজনেরা মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, বেশুমার টাকার গরমে এরা শুধু আচরনই পরিবর্তিত নয়, সমাজ, দল ও রাষ্ট্রের নানা স্তরে অস্বাভাবিক কর্মকান্ড ঘটিয়ে নিজেদের ক্ষমতার দাপটকে জানান দেয়।

ক্ষমতাসীনদলের লেবাস লাগিয়ে নানা ধূর্ততা, কুট কৌশল, প্রতারণা, প্রভাব ও বাণিজ্যকে কাজে লাগিয়ে কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে একটি চিহ্নিত মহল। কোটিপতির লাইনে সবচেয়ে এগিয়ে আছে তদবির বাণিজ্য। ধোপদরস্ত পোষাক, পদ-পদবীর ভার, এমপি-মন্ত্রীর দোহাই দেওয়া, ওভার স্মার্ট তদবীরবাজরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সরকারী দফতরে। কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এ্রই তদবির বাণিজ্যে ব্যবহার হচ্ছে, মুজিব কোট, জনসভা, মিছিলে অংশ নেওয়ার অথবা নেতার সঙ্গে ছবি। বারবার তা মো্বাইল স্ক্রিনে প্রদর্শণ করেই তদবিরের আসল বাণিজ্যে নেমে পড়ে এই সমাজের চিহ্নিত ধান্ধাবাজ। সরকারী দল বা সহযোগী সংগঠনে পদপদবী থাকুক না থাকুক সমস্যা নেই। যাদের পদপদবী আছে তাদের কোন কথাই নেই। এরা যখন দামী গাড়ীতে চড়ে তখন তাদের গায়ে এত চর্বি জমে যে, রাস্তার মানুষকে মানুষ বলেই মনে করেনা।

চট্টগ্রামের গর্ব, সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছিলেন, “অডা কাক্কু ফইন্নির পোয়া ট্যায়া পাইলে ইথার আচরণ, কথাবার্তা, চালচলন পরিবর্তন হইব। ইথারা সমাজরলাই বিষফোড়া, তারারে বাঁদরওলা লাগাই দিস”।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জামায়াত-বিএনপির নেতা যারা মামলা হামলায় জর্জরিত হয়ে বছরের পর বছর পালিয়ে বেড়াচ্ছে তাদের সরাসরি ক্ষমতাসীন দল-উপদলের পদপদবীধারী নেতা বানানোর তদবিরও করা হচ্ছে। আবার দলের অচেনা-অজানা সাধারণ কর্মী-সমর্থককে ওয়ার্ড, থানা জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা ও বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন এনে দেওয়ার তদবীর বাণিজ্যেও ব্যস্ত থাকে এই মহল।

এসব কাজে সফল হোক বা না হোক লাখ লাখ টাকা পকেটস্থ করে দিব্যি আলিশান জীবন যাপন করে চলে এসব তদবিরবাজ। তদবির বাণিজ্য এখন সবিচালয়, মন্ত্রি-এমপিদের বাসভবন, সিটি কর্পোরেশন, সরকারী-আধা সরকারী দফতরে অবাধে চলছে। বৈধ আয়ের আড়ালে অবৈধ আয় করার ব্যবসায় কৌশলে কোটিপতি বনে যাওয়াদের অনেকেই এখন সমাজে জনপ্রতিনিধি, নেতা, পাতি নেতা, সমাজ সেবক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বা বিশিষ্ট সমাজসেবক। ক্ষমতার দোর্দন্ড প্রতাপে নষ্ট রাজনীতির বেড়াজালে ও পদপদবীর সাইনবোর্ড এরা সমাজকে কলুষিত করছে। দলীয় ভাবমূর্তিকে জলাঞ্জলী দিয়ে সমাজকে ও রাষ্ট্রকে তার স্বাভাবিক কর্মকান্ডকে ব্যহত করছে। সাধারণ মানুষকে ও দারিদ্রতাকে যেন এরা উপহাস করছে।
সিটি নিউজ/জস

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.