অবশেষে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া

দুর্নীতির মামলায় সাজামুক্ত হওয়ার আড়াই মাস পর উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাকে দেশের বাইরে নেয়া হতে পারে বলে আশা করছেন খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে লন্ডনে, পরে অন্য একটি দেশে নিয়ে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হবে খালেদা জিয়াকে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ দীর্ঘদিন নানা জটিলতায় ভুগছেন। দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ার পর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকার সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।

পরবর্তীতে ঢাকার দুটি বিশেষায়িত হাসপাতালে কখনও সিসিইউ আবার কখনও আইসিইউতে রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড তাকে চিকিৎসা দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অনেকবারই বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার অনুমতি চেয়েছে বিএনপি এবং তার পরিবার।

যদিও আইনের মারপ্যাঁচ দেখিয়ে পতিত শেখ হাসিনা সরকার তা আমলে নেয়নি। সবশেষ ডক্টর ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলে, রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর দণ্ড মওকুফ করেন।

সাময়িক মুক্তির পরও বেগম জিয়াকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। সবশেষ ১২ সেপ্টেম্বর রাতে খলেদা জিয়াকে হঠাৎ করেই এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে দফায় চিকিৎসা নিয়ে ছয়দিন পর বাসায় ফেরেন তিনি।

এরই ধারাবাহিকতায় বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমে জানান, শারীরিক সুস্থতার ওপর নির্ভর করে অতি দ্রুত বেগম জিয়াকে বিদেশে মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ম্যাডামের শারীরিক সুস্থতার ওপর নির্ভর করে আমরা যাতে অতি দ্রুত উনাকে বিদেশে মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছি।

জাহিদ হোসেন আরও বলেন, তার অংশ হিসেবে লং ডিসটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ভাড়া করার কাজ শুরু করেছি, যোগাযোগ চলছে। প্রথমে ম্যাডামকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে স্টেওভারের পরে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিকেল সেন্টার যে দেশে আছে, সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। আমরা আশা করছি, সব কাজ সম্পন্ন করে অতিদ্রুতই ম্যাডাম বিদেশে যেতে পারবেন।

তিনি জানান, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার বিষয়ে তার কার্যালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কারণ ম্যাডামের সাথে চিকিৎসক, নার্সসহ আত্মীয়-স্বজন কারা যাবেন, তা জানানো হয়েছে। তবে কবে নাগাদ বিএনপি চেয়ারপারসন বিদেশ যাবেন এবং কোন দেশে তার চিকিৎসা চলবে তা জানাননি জাহিদ হোসেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। ম্যাডাম গুলশানের বাসায় আগের মতোই মেডিকেল বোর্ডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে আছেন। বলতে পারেন উনার অবস্থা স্থিতিশীল।

এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়া চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। এই টিমে দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াও লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী কার্ডিওলজিস্ট জোবাইদা রহমান এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন চিকিৎসকও রয়েছেন।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img