চার বন্ধু, একসঙ্গে আড্ডা, হাসি, গান, ঘুরে বেড়ানো—বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকে সবই হয়েছে। কিন্তু প্রতিযোগিতার মঞ্চে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে লড়াই করা—সেটা এবারেই প্রথম। আর প্রথমবারেই বাঘা বাঘা দলগুলোকে পেছনে ফেলে তাঁরা করেছেন বাজিমাত, জিতে নিয়েছেন বিজয়মুকুট। এইচএসবিসি বিজনেস কেস কম্পিটিশন ২০১৫-এ বাংলাদেশ পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাঁদের দল স্ট্রাটাজেম।
জয়ী দল হিসেবে তাঁরা পেয়েছেন ৭৫ হাজার টাকার দলগত পুরস্কার এবং সেই সঙ্গে হংকংয়ে অনুষ্ঠিত এইচএসবিসি এশিয়া প্যাসিফিক বিজনেস কেস কম্পিটিশনে অংশ নেওয়ার সুযোগ। দলের চার সদস্য অবন্তী শ্রেয়া সাহা, পরাশর সাহা, সাবিরা মেহেরিন, মুস্তাফা সিয়ান হোসেন, সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
পড়ালেখার ব্যস্ততার মধ্যেই তাঁদের সঙ্গে কথা হলো আইবিএ প্রাঙ্গণে। শুরুটা শোনা হলো অবন্তির কাছ থেকে, এইচএসবিসি এবারেই প্রথম আইবিএর সঙ্গে মিলিত হয়ে এই বিজনেস কেস কম্পিটিশনটির আয়োজন করেছে। এর আগে অনেকগুলো প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হলেও এটাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন। বিশেষ করে আপনি যখন জানবেন ফাইনালের ছয়টি দলের পাঁচটিই আইবিএর, তখন সেটিতে জয়ী হওয়া নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু—অবন্তির উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে গেল আমাদেরও। ক্লাস শেষে আমাদের মধ্যে এসে বসলেন পরাশর ও সাবিরা। তাঁরা দুজনে আগেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ীও হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রে ডেল আয়োজিত সোশ্যাল ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ-২০১৪ সালের প্রথম রানার আপ হওয়ার সম্মান। কিন্তু তাঁরাও মানছেন, এবারের জয়টা অন্য রকম।
সাবিরার কথায় উঠে এল, জয়ের পথে তাঁদের যাত্রার নানা চিত্র। প্রথম রাউন্ডে অংশগ্রহণের জন্য সারা দেশের মোট ৩৩০টি দল আবেদন করেছিল। তাদের দুই দিন সময় দেওয়া হয় একটি বাণিজ্যিক সমস্যার সমাধান বের করে জমা দেওয়ার জন্য। সমাধানের যৌক্তিকতা বিবেচনা করে ৩০টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয় দ্বিতীয় রাউন্ডে অংশ নিতে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাউন্ড অনুষ্ঠিত হয় আইবিএ ক্যাম্পাসে। কিন্তু বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন স্বনামধন্য বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ম্যানেজাররা। ফাইনাল রাউন্ডে প্রতিযোগিতার জন্য মোট ছয়টি দলকে তাঁরা নির্বাচিত করেন। এর মধ্যে পাঁচটি দলই আইবিএর। অন্য দলটি বাংলাদেশ ইউনিভার্সটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি)।
ফাইনালের কথা আসতেই পরাশর মুখ খুললেন, ফাইনাল নিয়ে তাঁর উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ১৭ এপ্রিল বসেছিল ফাইনালের আসর। ফাইনালে আমাদের একটি শিপিং কন্টেইনার কোম্পানির বিভিন্ন বাণিজ্যিক সমস্যার উপর ভিত্তি করে বানানো কেস–এর সমাধান এবং এর উপরে একটি প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে হয়। বিচারকের আসনে ছিলেন এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইওফ্রাসোয়া ডি মারিকোর্ট, ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্র্যান্ড বিল্ডিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার, ওভারসিস কনটেইনার লাইন বাংলাদেশের রিজিওনাল জেনারেল ম্যানেজার ড্যানিয়েল কউক এবং কেপিএমজি বাংলাদেশের সিনিয়র পার্টনার আদীব এইচ খানের মতো ব্যক্তিত্ব।
একটি ব্যবসায়িক সমস্যার সমাধান আমাদের করতে হয়, কিন্তু এর জন্য সময় দেওয়া হয় মাত্র আড়াই ঘন্টা। উপরন্তু ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ ছিল না, সমাধান তৈরির জন্য খাতা কলম ও ল্যাপটপও সরবরাহ করেন আয়োজকেরা। সিয়ান এর মাঝে যোগ করেন, বিচারকেরা আমাদের কেস সমাধান করার পদ্ধতির প্রশংসা করেছেন। আমরা ছিলাম ফাইনালের সর্বকনিষ্ঠ দল। কিন্তু একজন বিচারক আমাদের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘তোমাদের কেস সমাধান করার পদ্ধতিতে পেশাদারিত্বের ছাপ আছে। সমস্যার স্তরগুলো তোমরা খুব ভালো বুঝতে পারো। আশা করি তোমরা ভবিষ্যতে অনেক ভালো কনসালটেন্ট হবে।’
বাংলাদেশ পর্বের প্রতিযোগিতা তো শেষ, এবার অবন্তি, পরাশর, সাবিরা ও সিয়ান যাচ্ছেন হংকং। আগামী ৩-৫ জুন হংকং ইউনিভার্সিটি আয়োজিত এশিয়া প্যাসিফিক বিজনেস কেস কম্পিটিশনে তাঁরা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাঁরা চান এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করতে।
সুত্রঃ প্রথম আলো
Comments are closed.