চট্টগ্রামে এমপি লীগ-ভাই লীগের রাজত্ব

0

জুবায়ের সিদ্দিকী,সিটি নিউজ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তৃনমুলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে মাঠে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনী বছরে ধারাবাহিক জেলা সফর করছেন তিনি। দলীয় সভানেত্রীর সফর রয়েছে ২১ মার্চ চট্টগ্রামে। এই দিন তিনি পটিয়ায় এক বিশাল জনসভায় ভাষন দেবেন।

এই খবরে সাংগঠনিক গতি বেড়েছে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের। চট্টগ্রামের নেতারা জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিনত করতে দিনরাত প্রানান্তকর চেষ্টা চালাচ্ছেন। লোক সমাগমের লক্ষে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণের উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়েও ধারাবাহিক সভা, গনসংযোগ, মিছিল, পথসভা, মাইকিং, লিফলেট বিতরন করছে আওয়ামী লীগ। একটানা ৯ বছরের বিভিন্ন খাতের অভাবনীয় উন্নয়ন প্রচার ও নিজের পরিকল্পনায় দেশের তৃনমুল পর্যায়ে বাস্তবায়িত নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড ঘুরে দেখছেন এবং দেখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে পুনরায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে নৌকা মার্কায় ভোট চাইবেন পটিয়ার জনসভায়। জানা যায়, তৃনমুলকে চাঙ্গা করতে এসব জনসভায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে তৃনমুলের নেতাকর্মীরা মনে করেন, পরপর ২ বারের এমপিদের বাদ দিয়ে নতুন মুখ ও তারুণ্যের প্রাধান্য দেওয়া জরুরী। চট্টগ্রামের কোন কোন এলাকায় রয়েছে এমপি লীগ।

এসব এমপি লীগ নিয়ন্ত্রন করছে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। এমপি লীগ ও তৃনমুলের ক্ষোভ যদি প্রশমিত করতে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নেতাকর্মীগন। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের সদস্য সংগ্রহ এবং সরকারের উন্নয়নগুলো জনগনের সামনে তুলে ধরতে ব্যাপকভাবে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিলেও চট্টগ্রামের একজন ফরিদ মাহমুদ ছাড়া অন্যরা নিজেরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। সরকারের সফলতা ও অর্জন মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার বড় অভাব এখন আওয়ামী লীগে। দলকে চাঙ্গা রাখতে তিনি চেষ্টা করছেন।

অন্যদিকে বড় নেতা বা ছোট-মাঝারী নেতরা পোষ্টার ও ব্যানারে নিজের ছবি ঢাউস করে দিয়ে নিজেদের জন্য ভোট চাইছেন। দল নয়, ব্যক্তি স্বার্থকে দিচ্ছে প্রাধান্য। নিজেদের আখের গুছাতেই ব্যস্ত ক্ষমতাধরগন ক্ষমতার দাপটে। চট্টগ্রামে প্রায় নির্বাচনী এলাকায় এমপিদের সাথে তৃনমুলের দুরত্ব, গ্রুপিং, কোন্দল, বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বিরোধী প্রার্থীদের।

প্রত্যেক আসনে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। মাঝে মধ্যে বিরোধ থেকে সংঘর্ষ হচ্ছে। কোন এলাকায় আবার এমপি লীগ একচেটিয়া রাজত্ব চালাচ্ছে। প্রতিপক্ষ এলাকাছাড়া। অধিকাংশ নেতাকর্মী অমুক তমুক নেতার অনুসারী হওয়াতে সংঘাতে জড়িয়ে রক্তক্ষয়ী ঘটনারও জন্ম দিচ্ছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে এসেছে, বর্তমান এমপিদের পাশাপাশি আসনগুলোতে এবার একাধিক নেতা দলের মনোনয়ন চাইছেন। ফলে চট্টগ্রামের সবগুলো আসনেই এবার বিদ্রোহীর মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপিরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকবর্গ মনে করেন, দেশের রাজনীতি এখন আর রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। রাজনীতি চলে গেছে ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ীদের হাতে। বর্তমান এমপিদের বেশিরভাগ ২ মেয়াদে থাকায় কাজের প্রতি আগ্রহ ভাটা, নেতাকর্মীদের পাশ কাটিয়ে নিজের পছন্দের লোকজনকে প্রাধান্য দেওয়া সহ নানা অনিয়ম, বিলাসিতায়, স্বজনপ্রীতি সহ নয়ছয় গ্যারাকলে জড়িয়ে পড়ায় প্রায় এমপির গ্রহনযোগ্যতা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এসব এমপিদের খায়েশ ষোলকলা পুর্ন কোন কোন আসনে না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের এমন এমপিও রয়েছেন নিজের দলের লোকজনকে চেনার জন্য বাড়ির ফটকে ভাড়াটিয়া লোক নিয়োগ করেছেন। এমপি লীগের পাশাপাশি রয়েছে ভাই লীগ। এই ভাই লীগের খাই খাই রাজনীতিতে অতীষ্ট নগরবাসী। কোন কোন এলাকায় এসব ভাইলীগের কর্মী ও ক্যাডাররা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি সহ অপরাধের নেতৃত্ব দিচ্ছে।

পাড়া মহল্লা থেকে গ্রাম গঞ্জে সর্বত্র ভাইলীগ এখন সক্রিয়। সুদুর আমেরিকার ক্যালিফোনিয়ার যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক সৈয়দ মো: ইকরামুল হক বাবু ফেসবুকে একটি মন্তব্যে লিখেছেন,’ ভাইলীগ এখন সর্বত্র। দাপটের সাথে রাজত্ব করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমুর্তি বিনষ্টের কারন ভাইলীগ।

ব্যক্তিগত কারনে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার সহ স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির প্ররোচনায় মিথ্যাচার সহ অভ্যন্তরীন কোন্দল সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগের বর্নাঢ্য ইতিহাসকে কোনভাবে কলঙ্খিত করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছি’। দল ও সরকারের অগ্রযাত্রা সমুন্নত রাখতে অবিলম্বে এসব এমপি লীগ ও ভাই লীগের কবল থেকে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.