যৌনকাজে রোহিঙ্গা শিশুরাই বিদেশিদের টার্গেট

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: যৌনকাজে ব্যবহারের জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অল্পবয়সী নারী বা শিশুরাই বিদেশিদের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদক দল ও ফাউন্ডেশন সেন্টিনেল নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অনুসন্ধান চালিয়ে এই তথ্য পায়। পুলিশকে জানিয়ে নিজেরাই খদ্দের সেজে অনুসন্ধান শুরু করেন তাঁরা।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রোহিঙ্গা নারীদের মধ্যে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুরাই বিদেশিদের মূল লক্ষ্য। এজন্য কক্সবাজার এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি দালাল চক্র।

এরা নারী এবং শিশুদের পাচার করছে। পাচার হওয়া শিশুদের ঢাকা, ভারতের কলকাতা ও নেপালের কাঠমান্ডুতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও তথ্য পাওয়া যায়।

অনুসন্ধান কাজের অংশ হিসেবে কয়েকজন দালালের সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলেন প্রতিবেদকরা। সমুদ্র সৈকত এলাকায় গিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বেশ কয়েকজন দালালের নম্বর পেয়ে যান তাঁরা। চাহিদামাফিক রোহিঙ্গা অল্পবয়সী মেয়েশিশুর কথা বলতেই দালালরা বলেন, তাদের কাছে কম বয়সী মেয়ে আছে অনেক। কিন্তু রোহিঙ্গা কেন? ওরা তো সবচেয়ে নোংরা।

এরপর দালালরা একের পর এক রোহিঙ্গা মেয়েশিশুদের ছবি পাঠাতে থাকে। এসব পছন্দ না হলে আরো মেয়ের ছবি দেওয়া যাবে বলেও জানায় এই দালালরা। এর পর দুজন মেয়ের কথা বলে তাদের শহরের একটি অভিজাত হোটেলে পাঠাতে বলা হয়। এদিকে বিষয়টি আগেই পুলিশকে জানিয়ে রাখা হয়েছিল। দালালদের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ডিংও পুলিশকে দেন প্রতিবেদকরা। এরপর সন্ধ্যায় প্রতিবেদকরা সেখানে গেলে পেছনে পুলিশের একটি ছোট্ট দলও যায়।

এক সময় একটি গাড়িতে করে দুজন মেয়েকে নিয়ে আসা হয়। তখন আরো মেয়ে আছে কি না চালককে জিজ্ঞেস করলে তিনি ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর দেন। তৎক্ষণাৎ চালককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মেয়ে দুটিকে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়।

স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এভাবে নারী ও শিশু পাচারে খুব শক্তিশালী নেটওয়ার্ক প্রয়োজন হয়। আর এ ক্ষেত্রে এই দালাল চক্র ইন্টারনেটকে ব্যবহার করছে। এমনকি এদের পাচারের জন্য ফেসবুকে পাতা, গোপন মেসেজ গ্রুপসহ ওয়েবসাইট পর্যন্ত খোলা হয়েছে। কিছু কিছু ওয়েবসাইটে কোন এলাকায় বেশি রোহিঙ্গা শিশু পাওয়া যায়, ধরা পড়ে গেলে কীভাবে পালাতে হবে এমন তথ্যও দেওয়া আছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনে জানা যায়, কলকাতার যৌনপল্লীতে পাচার হওয়া নারীদের ভারতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। পুরোপুরি এই পেশায় জড়িয়ে যাচ্ছে তারা। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের নিজেদের আসল পরিচয়।

মাত্র ১৪ বছর বয়সী মাসুদা বর্ণনা করছিল তার পাচার হওয়ার কাহিনী। মাসুদা বলে, ‘আমি ভালো করেই জানতাম, আমার সঙ্গে কী ঘটতে চলেছে। যে নারী আমাকে কাজ দেওয়ার কথা বলেছিল, সে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ দেয় বলেই সবাই জানত। সে-ও রোহিঙ্গা, তবে বহু আগে থেকেই বাংলাদেশে এসেছে। আমি তাকে চিনি। কিন্তু আমার কিছুই করার ছিল না। এখানে আমার জন্য কিছুই নেই।’

মাসুদা বলে,  ‘আমার পরিবার হারিয়ে গিয়েছিল। কোনো টাকা ছিল না আমার। মিয়ানমারেও আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। একসময় আমার ভাই-বোনের সঙ্গে বনে খেলতাম আমি। এখন খেলতে ভুলে গেছি।’

১৪ বছর বয়সী আনোয়ারার পরিবারকে মেরে ফেলা হয়েছিল। এরপর সে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আনোয়ারা বলে, ‘বাংলাদেশে আসার পর একজন নারী ভ্যান নিয়ে আমার কাছে আসে। জানতে চায়, আমি তাদের সঙ্গে যেতে চাই কি না। সাহায্যের আশায় আমিও রাজি হই। তারপর আমি ভ্যানে উঠে বসলাম। এর কিছুক্ষণ পর তারা দুজন কিশোরকে নিয়ে আসে। তারা আমাকে ছুড়ি দেখায়, আমার পেটে ঘুষি মারে। তারা আমাকে ধর্ষণ করে।’

রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশে নতুন করে যৌন ব্যবসা গড়ে উঠেনি। তবে রোহিঙ্গাদের সস্তায় পাওয়া যাওয়ায়, রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের পাচার বেড়েই চলেছে। আর সব সময়কার মতো যৌন ব্যবসার ক্রেতার সংখ্যাও বেশি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.