সমাজসেবাই আমার রাজনীতি- আব্দুল মান্নান

0

জুবায়ের সিদ্দিকী : চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার খাগরিয়ার মাইজপাড়ার আলহাজ্ব হাফেজ আহাম্মদ সওদাগরের সুযোগ্য সন্তান আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান। ভাগ্যের অন্বেষনে জীবন ও জীবিকার তাগিদে ২০০০সালে পাড়ি জমিয়েছিলেন ওমানে। সমাজ সেবক, সংগঠক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল মান্ননের সাথে আলাপ হয় নগরীর বাকলিয়া কল্পলোক আবাসিক এলাকায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, প্রত্যয় প্রবাসী কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সংগঠক লায়ন শীফউল আলম। একান্ত আলাপ আলোচনায় আব্দুল মান্নান বলেন, ২০০১ সালে ওমানে আমর কর্মজীবন শুরু হয়।

অনেক কষ্টের বিনিময়ে এখন ওমানে আল্লাহর অশেষ রহমতে বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছি এবং বাংলাদেশী প্রায় ৩০০ মানুষের কর্মসংস্থান আমার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যদিও ওমানী, পাকিস্তানী, ভারতীয় থাকলেও আমাদের দেশের মানুষ বেশী আছে। ওমানের জালান বানি বুয়ালি শহরে “দি কিং অব জালান ট্রেডিং কোম্পানী” নামে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এই কোম্পানীর অধীনে গার্মন্টস ফ্যাক্টরী, লেডিস টেইলারিং, আবায়া টেইলারিং, টেইলারিং এক্সসোরিস, কম্পিউটার এমব্রয়ডারী ফ্যাক্টরী ও রেষ্টুরেন্ট সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমার রয়েছে। ওমানে তিনি একজন ইনভেষ্টর হিসেবে এল এল সি কোম্পানীর লাইসেন্স পেয়েছেন যার মাধ্যমে উনি এখন ওমানে ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যবসায়ী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছেন।

ওমানে তিনি ন্যাশনাল লেবেলে অনেক ফুটবল টুর্নামেন্টও স্পন্সর করেন এবং বাংলাদেশী কমিউনিটিতে একজন ক্রীড়ামোদি হিসেবে অনেক টুর্নামেন্ট সরাসরি আয়োজন করে থাকেন। প্রতি বছর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের আয়োজনও করেন। ওমানে তিনি বাংলাদেশী স্কুল মাদ্রাসার সাথে নিজেকে জড়িত করে সুনামের সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। এখন আমার ২০টির মতো শো-রুম ওমানে রয়েছে। সমাজসেবা ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে দেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। চট্টগ্রামে একটি স্কুলের পিরচালক। আমার নিজের এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, মাদ্রাসায় আমার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগীতা রয়েছে। বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান বলেন, সমাজসেবাই আমার জীবনের মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, আমরা প্রবাসীরা রেমিটেন্স দেশে পাঠানোর কারনে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকলেও সব সরকারের আমলে প্রবাসীরা অবহেলিত। আমি সরকারের বিধিবিধান অনুযায়ী সিআইপি মর্যাদা পাওয়ার কথা।

কিন্তু দূর্ভাগ্য আমার রাজনৈতিক কোন পদ-পদবী না থাকায় বা পরিচয় না থাকায় আমার আবেদন এখনও চুড়ান্ত হয়নি। আমি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ। দেশকে ভালবাসি, দেশের মানুষকে ভালবাসি। ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসে আমার সিআইপির অনেকের ফাইল জমা পড়েছে। তবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়েও যোগাযোগ রাখছি। দেখা যাক, আল্লাহর ইচ্ছা হলে অবশ্যই আমার প্রাপ্য আমি পাব। আমরা প্রবাসে থাকলেও দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি।

প্রবাসে যে ভাবে আমরা সম্মান বা মর্যাদা পেয়ে থাকি তার ছিঁটেফোটাও দেশে কোন প্রবাসী কোন সরকারের আমলে পাচ্ছেনা। প্রবাসীরা প্রবাসে কষ্ট করে টাকা রোজগার করে দেশে পাঠায়। ওমানে আমি দেশের পতাকা নিয়ে অনেক কর্মসূচী পালন করেছি। বর্তমানে সরকারের ও দলের অনেক শীর্ষ নেতা, এমপি, মন্ত্রী ওমান সফরের সময় আমার আতিতেয়তা করার সুযোগ হয়েছে। প্রবাসীদের কোন মূল্যায়ন দেশে নেই। প্রায় ৮ লক্ষ বাংলাদেশী ওমানে বসবাস করেন। আমার সব রেমিটেন্স ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে প্রেরণ করে থাকি।

বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান বলেন, দেশেও আয়কর সহ সকল প্রকার কর পরিশোধ করছি। বর্তমান সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করছেন। দেশ এগিয়ে চলছে। ইনশাল্লাহ দেশ আরো এগিয়ে যাবে। দেশ ও জাতির যে কোন ক্রান্তিলগ্নে আমি মানুষের পাশে আর্থিক সহযোগীতা দিয়েছি এখনও আপনি জানেন, গত সপ্তাহে প্রত্যয় প্রবাসী কল্যাণ সংস্থার ব্যানারে আমরা এবং আমার নিজের কোম্পানীর পক্ষ থেকে কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মাঝে আর্থিক সহযোগীতাসহ, মসজিদ, কোরান শরীফ, টিউবওয়েল, স্যানিটেশন সহ নান প্রকার সাহায্য সহযোগীতা প্রদান করছি।

আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান বলেন, দেশে প্রবাসীদের বিনিয়োগ বাড়াতে হলে সরকারকে উদ্যেগী ও সহায়তার পথ সুগম করতে হবে তবেই প্রবাসীরা বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। ওমানে বাংলাদেশীদের ভিসা চালু রয়েছে। ওমানে অনেক বাংলাদেশী ব্যবসা বাণিজ্যে প্রতিষ্ঠিত। প্রত্যয় প্রবাসী কল্যাণ সংস্থা চট্টগ্রামে প্রবাসীদের একটি বৃহৎ সংগঠন। এই সংগঠনে আমাকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই সংগঠন সরকার নিবন্ধিত ও দেশে প্রবাসীদের ঠিকানা বলা চলে। এই সঙগঠনকে আমরা আরো ব্যাপকভাবে কর্মকান্ডকে প্রসারিত করবো ইনশাল্লাহ।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান বলেন, দেশের মানুষের ভালবাসা ও স্নেহমমতায় সামাজিক ও ধর্মীয় অনেক সংগঠনের সাথে জড়িত হয়ে আল্লাহর অনেক রহমতে মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছি। আমার দেশকে ভালভাসতে হবে এবং দেশকে কিছু দিতে হবে। কি পাচ্ছি বড় কথা নয়, কি দিচ্ছি সেটা বড় কথা। এখানে নগরীর খুলশী ও কল্পলোকে আমর বাড়ী রয়েছে। কল্পলোক আবাসিক এলাকায় একটি স্কুল করার পরিকল্পনা রয়েছে। দোহাজারীতেও একটি বড় প্রজেক্ট করার চিন্তাভাবনা করছি।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রান সামগ্রি দিতে গিয়ে নিজেও আবেগঘন হয়েছি। তবে তাদের দেশে ফেরৎ পাঠানোর উদ্যেগ নিতে হবে। লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা আমি মনে করি একটি বিষফোঁড়া। আমরা অত্যন্ত মানবিক ও সরকার তাদের যথেষ্ট সহায়তা করছে এটা মানবতার একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আপনি জানেন, সেখানে দি কিং অব জালান ট্রেডিং কোম্পানী ও প্রত্যয় প্রবাসী কল্যাণ সংস্থার উদ্যেগে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। এই সমস্যাটা দেশের জন্য একটা মহামারি। তাদেরকে যেভাবে হোক মিয়ানমারে পাঠাতেই হবে। তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমার আবেদন হবে, পাসপোর্টের মেয়াদ যেন দশ বছর করা হয়, বিমান বন্দরে যেন উন্নত সেবা দেওয়া হয়। প্রবাসে চাকরী নিয়ে যেতেও বিমান বন্দরে ট্রাভেল ট্যাক্স নেওয়া হচ্ছে।

এটা বাতিল করা উচিত। সমাজসেবাই আমার রাজনীতি। প্রবাসীদের কল্যানে বর্তমান সরকার আগামীতে আরো বৃহত পরিকল্পনা গ্রহন করবেন বলে আমার বিশ্বাস। আমাদের কষ্টার্জিত অর্থে দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড যদি সোজা থাকে তাহলে আমরা দেশে অবহেলিত থাকবো কেন। সরকারের সুদৃষ্টি প্রবাসীদের উপর যদি থাকে তাহলে প্রবাসীরা আরো উৎসাহিত হবে এবং দেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। দেশের অর্থনীতি ও ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে রেমিটেন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই খাত কে প্রসার ঘটাতে হলে প্রবাসীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্য ইউরোপের সকল দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে উদ্যেগ নেয়া উচিৎ।

চাকরি ও ব্যবসায় প্রবাসে অনেকে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়েন। সেক্ষেত্রে প্রবাসীদের সাহায্যে দূতাবাসকে এগিয়ে আসা উচিৎ। তিনি বলেন, দেশের বিমান বন্দর গুলোতে প্রবাসীদের হয়রানি কমছে না। অথচ প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরছে। আর দেশের বিমান বন্দর গুলোতে এই প্রবাসীদের পদে পদে ঘুরানো হয়। বিমান বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছ থেকে কোন ভাল ব্যবহারও পায় যায়না। প্রবাসীদের দেশে আসার পথে ব্যাগ স্কেনিং করার পরও অবৈধ জিনিষ রয়েছে বলে ব্যাগ কেটে চেক করা হয়।

অনেক সময় ব্যাগও লাপাত্তা হয়ে যায়। লাগিজ পাওয়া যায় কাটা ছেড়া অবস্থায়।তিনি বলেন, দেশের অনেক বিভ্রান্ত তরুনরা বিপদগামী হয়ে সমাজকে কলুষিত করছে । ফলে তারা সমাজকে আশার আলো দেখাতে পারছেনা। তাই নৈতিক অবক্ষয়রোধে অভিভাবকদের ভূমিকা রাখতে হবে। আমি মনে করি সামাজিক মূল্যবোধের উন্নয়ন ঘটলে দেশের অগ্রগতি সম্ভব হবে। সন্ত্রাস ও মাদক সমাজে ছড়িয়ে পড়ায় আমাদের সন্তানেরা বিপদগামী হচ্ছে। সামাজিক সচেতনতা সকলের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। তবেই সন্ত্রাস ও মাদকের আগ্রাসন বন্ধ হবে।

শিক্ষার মান বাড়াতে সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। শিক্ষার প্রকৃত অর্থ হচ্ছে নতুন জগত সৃষ্টি করা। তিনি বলেন, প্রতিভাধর শিক্ষার্থীরাই তাদের মেধা, মনন ও প্রজ্ঞা দিয়ে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোর পথ দেখায়। এই লক্ষ্যে মানবিক মূল্যবোধ সকলের মধ্যে জাগ্রত হওয়া উচিৎ। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। আত্মমানবতার সেবায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো যেমন পূণ্যের কাজ তেমনি সকলের নৈতিক দায়িত্বও।

তিনি আরো বলেন, দেশের টেকসই উন্নয়নে প্রয়োজন প্রবাসীদের সক্রিয় অংশ গ্রহন। শুধু স্বপ্ন বা পরিকল্পনায় নিমগ্ন থাকা নয় বরং স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে সমৃদ্ধ জাতি গঠনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রবাসীদের বিনিয়োগের কোন বিকল্প নেই। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধ ধারণ করে সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত করেছি।

আমি মনে করি মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন সুনাগরিক দেশের সম্পদ। প্রবাসে কষ্টার্জিত অর্থে আমাদের অভাব পূরণ হলেও মন পড়ে থাকে দেশে। এ কারনে দেশের মানুষের পাশে আপদে বিপদে সুখে দুঃখে পাশে থাকার প্রত্যয়ে ছুটে আসতে হয়। আপনি জানেন, আমার ক্ষুদ্র প্রয়াসে চট্টগ্রামে আমার এলাকায় সামাজিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত আছি। মানুষের ভালবাসা শ্রদ্ধা ও স্নেহমমতায় আমি পথ চলছি। রাজনৈতিক কোন অভিলাষ উচ্চাকাংখা আমার নেই।

আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান বলেন, দেশের মানুষের কর্মসংস্থান প্রবাসে যদি বাড়াতে পারি তাহলে আমার গর্ববোধ হবে এবং দেশও উপকৃত হবে। দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রবাসে আমরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি। দেশে জনকল্যাণ মূলক পদক্ষেপ গ্রহনের অনেক উদ্যেগ নেওয়ার ইচ্ছা আছে। আল্লাহ যদি সহায় হোন তবে ধীরে ধীরে সমাজসেবামূলক কাজে এগিয়ে যাবো ইনশাল্লাহ। আমি প্রবাসী ও দেশবাসীর দোয়া কামনা করছি।

পরিচিতি- আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান, ওমান প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ইনভেষ্টর।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.