উখিয়ায় পুলিশের আটক বাণিজ্য !

0

উখিয়া প্রতিনিধি :  উখিয়া থানা পুলিশের একটি সিন্ডিকেট জনস্বার্থের পরিপন্থি অবস্থান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বির্তকিত কর্মকান্ডে জড়িত থেকে বহাল তবিয়তে রয়েছে। পুলিশের এ সিন্ডিকেট ঘুষ বাণিজ্য থেকে শুরু করে বহু অপকর্ম করে চলছেন। যা লিখে শেষ করা যাবে না। থানা পুলিশের ১জন ওসি (তদন্ত), ৩ জন উপপরিদর্শক ও ৩ জন সহকারি উপপরিদর্শক নামের ৬/৭ জনের একটি সিন্ডিকেট গাটছাড়া বেধে একট্টা হয়েছে। ফলে দিনের পর দিন নিরীহ ও অসহায় লোকজন চরম ভাবে হয়বানির শিকার হচ্ছে।

এ সিন্ডিকেটের নেপথ্যে এলাকায় বেচা কেনা হচ্ছে ইয়াবাসহ হরেক রকম মাদক দ্রব্য। বিনিময়ে প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। বিভিন্ন অবৈধ স্পট থেকে তাদের লোকজন এ টাকা নিয়মিত উত্তোলন করে থাকে। শুধু ইয়াবা চোরা চালানের খাত থেকে নয় অন্যান্য খাতেও থানা পুলিশের এ সিন্ডিকেট প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ অবৈধ টাকা দিয়ে পুলিশ সদস্যরা অল্প দিনে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে গ্রামের বাড়িতে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। যা একজন সৎ পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে কোন মতেই সম্ভব নয়। থানায় কর্মরত অনেক সৎ ও নিষ্ঠাবান পুলিশ অফিসার অসাধু পুলিশ সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্রের মুখে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিকট মৌখিকভাবে নালিশ দেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশের বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় পুলিশ সচেতন লোকজনের মতে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তাগণ এসব অসাধু পলিশ কর্মকর্তাদের সম্পদ ও টাকা পয়সার খোঁজ খবর নিলে পুলিশের দুর্নীতির পরিমান হ্রাসের পাশাপাশি অসৎ কর্মকর্তাদের আসল মুখোশ উন্মোচন হবে। উখিয়া থানা পুলিশের এ সিন্ডিকেটের কারণে জেলা পুলিশের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্মের আশংকা রয়েছে। মূলত পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের জন্য উখিয়া থানায় গঠিত এ সিন্ডিকেটই যথেষ্ট বলে ধারণা করছেন অনেকেই।

বিশ্বস্থ সুত্রে জানা যায়, ইয়াবার তকমা দিয়ে পুলিশ ব্যাপক ঘুষবাণিজ্যে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। আগের চেয়ে বেশি হারে ধরপাকড়ের নামে থানায় নিরীহ লোকজন ধরে এনে বিভিন্ন মামলার হুমকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায়ের পর রাতের আধারে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। থানা পুলিশের একটি সুত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। উখিয়া থানার ওসি তদন্ত মোঃ কায়কিশলু এ কাজের জন্য অত্যান্ত পারদর্শী কর্মকর্তা হিসেবে এলাকায় যথেষ্ট খ্যাতি ইতিমধ্যে অর্জন করেছেন। তার সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়েছে এসআই রণতোষ, এএসআই বিষনু, এএসআই মাসুম, শাহপরী হাইওয়ে ক্রসিং ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজেশ বড়ুয়া (বহিরাগত) ও মুন্সি হোছনসহ অনেকেই ঘুষ বাণিজ্যের নেপথ্যে জড়িত রয়েছে। নিরীহ লোকজন থেকে আদায়কৃত টাকা হজম করতে দুর্নীতিতে পারদর্শী এসব অসাধু পুলিশ কর্মকর্তারা সরকারের দায়িত্বে নিয়োজিত জনৈক সচিবের নাম ব্যবহার করে দিব্যি এ অপরাধ জনক কাজটি করে বেড়াচ্ছেন।

এছাড়াও পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদক ও ইয়াবা ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ নতুন নয়। শাহপরী হাইওয়ে ক্রসিংফাঁড়ির ইনচার্জ রাজেশ বড়ুয়া রহস্য জনক কারণে পুলিশফাড়ি থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে উখিয়া সদরের মালভিটা পাড়ায় অবস্থান করে। শুধু তাই নয় পুলিশের এ ইনচার্জ অভিযান চালিয়ে যেসব মাদক ও ইয়াবা উদ্ধার করে তা পরদিনই ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের একটি সিন্ডিকেটের নিকট বিক্রি করতে চলে যায়। এছাড়াও ইয়াবাসহ যেসব চোরাচালানিদের আটক করা হয় মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের রাতের আধারে ছেড়ে দেওয়ার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে পুলিশের এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

গত ১৩ জানুয়ারি উখিয়া সদরের হাজিরপাড়া গ্রামের বাবুলের ছেলে জসিমকে ৫শ পিছ ইয়াবাসহ রাত ৮টার দিকে আটক করা হলেও ঐদিন রাত আড়াইটার দিকে এক জামায়াত নেতার নির্দেশে ওসি তদন্ত ৭০ হাজার টাকা নগদ নারায়ন নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। পরদিন জব্দকৃত ৫শ পিছ ইয়াবা রাজেশ বড়ুয়া চট্টগ্রাম নিয়ে বিক্রি করে দেয় বলে পুলিশের বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে। গত ১৮ জানুয়ারি পশ্চিম রত্মা এলাকার মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে গিয়াস উদ্দিনকে কিছু ছাড়া গ্রেফতার করে ইয়াবা দিয়ে কোর্টে চালানের হুমকি দিয়ে ওসি তদন্ত কায়কিশলু ৬০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়।

গত ২৮ জানুয়ারি কক্সবাজার টেকনাফ সড়কের থাইংখালী পুটি বনিয়া এলাকা থেকে টেকনাফের নাইট্যংপাড়ার হাবিবুর রহমানের ছেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালযের তালিকাভূক্ত ইয়াবা পাচার হামিদ হোসেনকে ইনচার্জ রাজেস বড়ুয়া ৫ হাজার পিছ ইয়াবা ও ব্যবহৃত মোটর সাইকেলসহ আটক করে নগদ ২ লক্ষ টাকা নিয়ে ঐদিন রাতেই তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। গত ৬ ফেব্রুয়ারি উখিয়া থানা কমপাউন্ডের মুখের বেকারী থেকে মালভিটা পাড়া গ্রামের মেনুর ছেলে জোবায়ের হোসেন সবুজ নামের এক যুবককে ৭শ পিছ ইয়াবা নিয়ে আটকের পর ওই দিন রাত ১ টার দিকে ২ লক্ষ টাকা নিয়ে প্রবাসীর ছেলে সবুজকে ছেড়ে দেয় থানা পুলিশ।

এদিকে  ৬ ফেব্রুয়ারি উখিয়া থানা পুলিশের মতবিনিময় সভায় কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তাদের জোরালো অবস্থানের নির্দেশ দিলেও কার্যত জেলা পুলিশের এ কর্মকর্তার বাণী অন্ত:সার শূণ্য। যদিও জেলা পুলিশ সুপার কর্তৃক মাদক প্রতিরোধের অঙ্গিকার করলে পুলিশ কর্মকর্তারাসহ মত বিনিময় সভায় উপস্থিত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ব্যক্তিবর্গরা পুলিশকে সাধুবাদ জানান। কিন্তু উখিয়া থানা পুলিশকে দিয়ে মাদক ও ইয়াবা অধ্যুষিত অঞ্চলকে মাদকমুক্ত করা কোন মতে সম্ভব নয় বলে স্থানীয়রা দাবী করেন।

উখিয়া থানা পুলিশের অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বির্তকিত ভূমিকায় অবস্থান নেওয়ায় নিরীহ জনসাধারণ হয়রানির শিকারসহ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত পুলিশের অভিযোগ প্রমাণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এর মধ্যে ঘুষ লেনদেন অন্যতম। কারণ এ ক্ষেত্রে স্বাক্ষী এবং আনুষাঙ্গিক তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা যায় না। অভিযোগের ধরণ এবং গুরুত্ব বিবেচনা করে ঢাকার পুলিশ সদর দপ্তর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুজনের উখিয়া উপজেলার সাধারণ সম্পাদক রতন দে জানান, পুলিশের নিয়োগ, বদলী, পদোন্নতিতে অবৈধ অর্থ লেনদেন এবং অস্বচ্ছতার কারণে এটি ঘটছে। পুলিশের অপরাধ কমাতে হলে এসব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে হবে এবং সৎ কর্মকর্তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ কায়কিশলুর নিকট জানতে চাইলে তিনি ওসি (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের কথা বলেন।

উখিয়া থানার ওসি মোঃ আবুল খায়ের এর নিকট অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গত ১ মাসে ১৭টি ইয়াবা ও মাদক দ্রব্য আইনে মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি অবগত নয় এবং খোঁজ নিয়ে অপরাধের সাথে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন এর নিকট এ বিষয়ে জানতে তার ব্যক্তিগত মোবাইল (০১৭১২১৬০১২৪) নাম্বারে যোগাযোগের জন্য একাধিক বার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.