শহিদুল ইসলাম, উখিয়া (কক্সবাজার)::কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফে বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে আসছে লাখ লাখ ইয়াবা। কোন অবস্থাতে ইয়াবা পাচার রোধ করা যাচ্ছে না। সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে আসা এসব ইয়াবা শহরের অভিজাত আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বাণিজ্যিক এলাকাসহ পাড়া মহল্লায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে এ ইয়াবা।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), আইন শৃংখলা বাহিনী চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব ইয়াবার চালান আসছে এ দেশে। উখিয়া উপজেলার আনাচে-কানাচে ইয়াবা পাচারে নিয়োজিত হয়ে পড়েছে নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও।
বিগত ২০০৮ সালে মহা জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত ৩ শতাধিক লোক ইয়াবা ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। এদের কারণে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ কারণে ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করা যাচ্ছে না। উখিয়া উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ২০ টি ইয়াবা সিন্ডিকেট তৎপর রয়েছে।
অভিযোগ উঠছে স্থানীয় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ম্যানেজের মাধ্যমে এসব সিন্ডিকেট বেপরোয়া ভাবে এ ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে। স্থানীয় আইন শৃংখলা বাহিনীর নিয়োজিত সোর্সের তথ্যের ভিক্তিতে গুটিকয়েক ইয়াবা উদ্ধারের ঘটলেও অধিকাংশরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে ইয়াবা সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে শহরের কলাতলী কালা পাহাড় নামক এলাকায় কথিত বন্ধুক যুদ্ধে শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী মোস্তাক আহমদ (৩২) নামের এক যুবক নিহত হন। তিনি কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ফজল করিমের ছেলে। নিহত মোস্তাকের সাথে টেকনাফের প্রভাবশালী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা মাঝে মধ্যে বাড়িতে যাতায়ত করতো বলে জন শ্রুতি রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উখিয়ার সীমান্তের বালুখালী, শিয়াল্লাপাড়া, বেতবুনিয়া, দরগাবিল, ডেইলপাড়া ডিগিলিয়া, বরইতলী, রহমতের বিল, ধামনখালী, আন্জুমান পাড়া সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ইয়াবার চালান এসে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রিত নির্ধারিত স্থানে জমা হয়। পরবর্তিতে সিন্ডিকেট সদস্যরা এসব ইয়াবা সড়ক পথে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বড় বড় পাইকারী ব্যবসায়ীদের হাতে পৌঁছে দেয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের আর্ন্তজাতিক চোরাচালান সিন্ডিকেট এখন অস্ত্র ব্যবসার পরিবর্তে ইয়াবা ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন উখিয়ার ফালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী গ্রামের এনামুল হক ও জাহাঙ্গীর নেতৃত্ব বালুখালী সিন্ডিকেট, বিডিআর দোভাসী সাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বে ঘুমধুম সিন্ডিকেট, ইমাম হোসেনের নেতৃত্বে জলপাইতলী সিন্ডিকেট, নুরুল আলম পুতিয়া, আবদুর রহমান ও আবদুর রহিমের নেতৃত্বে বালুখালী ঘোনারপাড়া সিন্ডিকেট, বাবুল, উত্তম ও ইসলামের নেতৃত্বে ঘিলাতলী সিন্ডিকেট, আতা উল্লা,মির আহামদ ও জালালের নেতৃত্বে সদর সিন্ডিকেট, বাবুলের নেতৃত্বে হিজলিয়া সিন্ডিকেট, আলী আহামদ, জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে ভালুকিয়া সিন্ডিকেট, আকতারের নেতৃত্বে সিকদার বিল সিন্ডিকেট, আবদুল্লা, হারুন, রহমান ও লালুর নেতৃত্বে ডিগিলিয়া সিন্ডিকেট, রত্নাপালং এর জাফল পল্লান পাড়ার মনুমিয়ার ছেলে মনজুর আলম, রাজাপালংয়ের তুতুরবিলের ডাইভার বশর, আমিন রাজার নেতৃত্বে সিন্ডিকেট অন্যতম ।
কুতুপালং এলাকার শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী বহিস্কৃত যুবলীগ নুর মোঃ মিজান ও আলী আকবরের সিন্ডিকেট। তারা দুই জনের নেতৃত্বে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের আশপাশে ইয়াবার চালান এনে মজুত করেন। রোহিঙ্গা নারীদের দিয়ে মজুতকৃত ইয়াবা গুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। এর বাইরেও সোনারপাড়া, থাইংখালী, জাদিমুরা, হলদিয়া পাতাবাড়ি, কোটবাজার, পাগলিরবিল, বৌ বাজার, সহ বিভিন্ন জায়গায় এলাকা ভিক্তিক সিন্ডিকেট করে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে চিন্থিত পাচারকারীচক্র জানা গেছে, এ ক্যাম্পসহ বহিরাগত বস্তির রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৫০০ জনের বেশি লোক মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ মাদক বেচাকেনার মধ্যে বেশিরভাগই নারী। মাদক অধিদফতরের কর্তা এবং কুতুপালং ক্যাম্প পুলিশ তাদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা পায় বলে নির্বিঘ্নেই চলে এ ব্যবসা। কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য বলেন এ ধরণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি মাঝে মধ্যে ক্যাম্প এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক দ্রব্য উদ্ধার করেন। কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ শাসমুদ্দোহা বলেন, পুলিশকে সাথে নিয়ে মাদক দ্রব্যসহ অপরাধীকে আটক করে থানায় সোপর্দ করি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) চাইলাউ মারমার বলেন, পুলিশ সমসময় তৎপর রয়েছে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে। কিন্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া ইয়াবা আটক করা কঠিন। এতে নিরপরাধ জনগনের হয়রানির আশংকা। তবুও পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন সম্প্রতি উখিয়া থানায় আয়োজিত আইন শৃংখলা সভায় বলেন, কক্সবাজারকে ইয়াবা মুক্ত করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।