চন্দনাইশে সরিষা চাষে আগ্রহী কৃষকেরা

0

মো. দেলোয়ার হোসেন,চন্দনাইশ : ফটোফ্রেমে বন্দী সরিষা ক্ষেতের গন্ধ হয়তো মন কাড়বে না কারো। কিন্তু চন্দনাইশের বিভিন্ন ক্ষেত-খামারের দিগন্ত জোড়া মাঠে সরিষা ক্ষেতের পাশে এলে মন কাড়বে সবার। সরিষার হলদে আভায় একাকার হয়ে যাওয়া বিমুগ্ধ মাঠ থেকে সরিষা আসতে আসতে বাড়ীতে নিয়ে যাবে কৃষকেরা।

শুধু মনো জাগতিক তৃপ্তি নয়, সরিষা দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। আর স্বপ্ন বিভোর চাষীরা চন্দনাইশের শঙ্খনদীর তীরবর্তী এলাকায় ঘটিয়েছেন আলুর পর সরিষা চাষের বিপ্লব। কিন্তু অর্থনৈতিক বিশাল সম্ভাবনার এ সরিষার চাষ চাষীপ্রিয় হয়ে উঠলেও কৃষি বিভাগের কোন কার্যকর উদ্যোগ ও তদারকি চোখে পড়ছে না।

সরিষা আবাদের মাধ্যমে দেশে ৬ লাখ টন ভোজ্য তেলের ঘাটতি মোকাবেলা করে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট বিনার বিজ্ঞানীদের ফরমূলা ফাইলবন্দী হয়ে আছে সরকার ও কৃষি বিভাগে। তবুও আলুর বিপ্লব হিসেবে চাষীরা সরিষা চাষের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গেল ৪ বছর থেকে কোমর বেঁধে মাঠে আছেন কৃষকেরা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন চন্দনাইশের শঙ্খনদীর তীরবর্তী কৃষকেরা।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি ইনষ্টিটিউট, কৃষি বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জরিপ, রিপোর্ট ও সূত্রে বলেছেন, গেল একযুগ ধরে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় কম-বেশি পৌনে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করেছেন কৃষকেরা, বাম্পার ফলনও হয়েছে। একইভাবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়ায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কৃষকেরা দাম না পাওয়ায় বর্গা, বন্ধকী, লীজি এবং আলু চাষী এবং ব্যবসায়ীরা ধরাশায়ী হয়ে পড়েন। এর আগের বছরগুলোর আলু চাষ করা লাভ ভাঙ্গিয়ে এ বছরের আলুর আবাদ ধরে রেখেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে আলুর আবাদ এবং দাম স্থিতিশীল রাখার উপায় নিয়ে ভাবনা হচ্ছিল সর্বত্রই। এ অবস্থায় তিন বছর আগে পরিমিত পরিমাণ জায়গায় আলু এবং বাকী জায়গায় সরিষা চাষ করে আলুর বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার একটি কার্যক্রম ফরমূলা দেন বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট এর একদল বিজ্ঞানী। সরিষার মাধ্যমে আলুর ক্ষতি পোষানোর গ্যারান্টিও দেন দিনার গবেষকেরা। ফলে কৃষকেরা সরিষা আবাদের দিকে ঝুকছেন। প্রথমে বিনাধন-৭, বিনা সরিষা-৭, সর্বশেষ বোরো ধান এ শস্য বিন্যাস অনুসরণের মাধ্যমে সরিষার চাষ করে খুব কম সময়ে ভালো ফলন পাওয়ায় আশাবাদী কৃষকেরা।

সরিষা কর্তন করে স্বাভাবিকভাবে বোরো ধানের চাষ করা যায়। এতে আমন এবং বোরো ধানের ফলনও ভালো হয়। বিনার, সরিষার একর প্রতি ফলন ২৮ মন, গড় ফলন ২২ মন। প্রতিমন সরিষা দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা হওয়ায় ৫০ হাজার টাকা আয় করতে পারেন কৃষকেরা। বিনার গবেষকদের মতে আমন-আলু-বোরোর পরিবর্তে আমন-সরিষা-বোরো শস্য বিন্যাসের মাধ্যমে উচ্চফলনশীল, স্বল্প জীবনকালের আমন ধানের জাত সঠিক সময়ে চাষ করে উন্নত সরিষার জাত আবাদ করা সম্ভব। এর পরে লাগাতে হয় বোরো। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্য্যকর শস্য বিন্যাস বিনা সরিষা-৭-বোরো। এ শস্য বিন্যাসকে জাতীয়ভাবে সম্প্রসারণের উদ্যোগের কথা বলেছেন উদ্ভাবকেরা।
শঙ্খনদীর তীরবর্তী দিগন্ত বিস্তৃত জমি থেকে সরিষা ক্ষেত এখন আসতে আসতে বাড়ীর দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় ঘনিয়েছে কৃষকদের। আজ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মাঠ থেকে সব সরিষা কৃষকের বাড়ীর উঠানে যাবে। শুরু হবে মাড়াই ও বিকিকিনির ধুম। তারপর সরিষার জমিতে বোরো লাগানো শুরু করবেন কৃষকেরা। সরিষার ভালো দাম পেয়ে কৃষকেরা খুশি। ফলে সরিষা চাষে বিপ্লব ঘটেছে চন্দনাইশের শঙ্খ তীরবর্তী এলাকা। কৃষকেরা আগ্রহ নিয়ে দিন দিন সরিষা আবাদে ঝুঁকছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকলে সরিষার দিকে কৃষকেরা আরও ঝুঁকবেন। ফলে সরিষা দিয়ে দেশের একটি ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ মহল। ফলন ভালো হওয়ায় আলুর বিকল্প হিসেবে কৃষকেরা সরিষা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট বিনা সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে তেলের চাহিদা ৬.২৮ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু দেশে তেল উৎপাদন মাত্র ১.৮৫ লাখ মেট্রিক টন। ঘাটতি থাকে ৪.৪৩ লাখ মেট্রিক টন। তেলের এ বিশাল ঘাটতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট উদ্ভাবন করেছে অগ্রগামী বিনা সরিষার জাত।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.