চাঁদপুর ইউপি নির্বাচন: প্রার্থী বাছাইয়ে বিপাকে আ.লীগ-বিএনপি

0

চাঁদপুর: জেলার ৮টি উপজেলায় ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থীরা দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছে। সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে শীর্ষ নেতাদের কাছে ছুটাছুটি করছে। অনেকে তৃণমূলের নেতাদের খুশি করতে ব্যস্ত রয়েছে। সবার প্রত্যাশা দলীয় টিকেট নিশ্চিত করা।

চাঁদপুর জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, ৮৯টি ইউনিয়নের মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে চাঁদপুর ও হাইমচর উপজেলার ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী দু’এক সপ্তাহের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।

এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ব্যানারে জাতীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা অংশ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন। তবে রাজনৈতিক পদ-পদবী থাকলে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ হারাবে বলে জানা গেছে।

এদিকে দলীয় ভিত্তিতে প্রথমবারের মতো নির্বাচন হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে আ’লীগ-বিএনপির জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতারা। তাদের কাছে সব ইউনিয়নের দলীয় ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা প্রার্থিতা দাবি করছেন।

ফলে প্রার্থী বাছাই করতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। উভয় দলই জনপ্রিয় ও সাংগঠনিক দক্ষ নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে তৃণমূল নেতাদের মতামত যাচাই-বাছাই করছেন। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেও তারা হিমশিম খাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ তৃণমূলে বর্ধিত সভা করে তাদের মতামত কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠানোর কাজ এগিয়ে নিতে চেষ্টা করছে। জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি নাছির উদ্দিন আহম্মেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল তৃণমূল থেকে উঠে আসা দক্ষ ও ঝানু রাজনীতিবিদ হওয়ায় তারা প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে কোথাও-কোথাও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ উঠছে।

অপরদিকে, জেলা বিএনপি তাদের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা এখনো চূড়ান্ত না করলেও দলীয় প্রার্থী কারা হবেন তা নির্ধারণে স্ব-স্ব ইউনিটকে দায়িত্ব দিয়েছেন। বিএনপি তাদের মাঠ পর্যায়ের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে অভিজ্ঞ ও তারুণ্যনির্ভর নেতাদের প্রার্থী দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। দলটির জেলা নেতাদের সুপারিশকৃত প্রার্থীরাই চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় প্রতিটি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিপাকে পড়তে যাচ্ছে। প্রত্যেক ইউনিয়নে বিএনপি-আওয়ামী লীগের দক্ষ সাংগঠনিক শক্তি থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দলের বিপরীতে প্রার্থী হয়ে জয়ের মুখ দেখবে কি-না তা নিয়ে বেকায়দায় রয়েছে। আবার অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও কোনো না কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের হওয়ায় তারাও সরাসরি এলাকায় প্রার্থী ঘোষণা করে বিড়ম্বনায় পড়েছে।

এ কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অনেকেই শেষ চেষ্টা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি হয়ে প্রার্থীতা নিশ্চিত করতে। কেবল দলীয় টিকেট না পেলে পরবর্তীতে তারা চিন্তা-ভাবনা করবে নির্বাচনে অংশ নেবে কি, নেবে না।

জেলার নির্বাচনী মাঠ পর্যায়ের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলে কমসংখ্যক প্রার্থীই নির্বাচনে অংশ নেবে। বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে জামায়াত স্বতন্ত্র প্রার্থী দিতে পারে বলে দলটির নীতি নির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে।

জাতীয় পার্টির দু’একটি ইউনিয়নে প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি চাঁদপুরে মহাজোট হিসেবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের সমর্থন দিতে পারে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে সাধারণ ভোটাররা ভাবছেন, দলীয় নির্বাচন হওয়ায় তারা ভোটাধিকার হারাবেন। তাদের ভোটের মূল্যায়নে শেষ পর্যন্ত চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে ব্যর্থ হবেন তারা। এছাড়া সরকারি দলের প্রার্থীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করলে গ্রাম্য আদালতে অনেক নিরীহ পরিবার ন্যায়বিচার  থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। আবার দরিদ্র জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়ে বয়স্কভাতা, ভিজিএফ কার্ডসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে বলে ধারণা করছে অনেকে।

জেলার সাধারণ ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি যে প্রার্থী’ই জয়লাভ করুক তাতে তাদের তেমন কিছু যায় আসে না। তবে তাদের ভোটাধিকার হরণ করে যেন নির্বাচন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

নতুন প্রজন্মের অনেক ভোটার জানিয়েছেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একটি গণতান্ত্রিক দেশে তাদের জীবনের প্রথম ভোটটি যদি প্রয়োগ করতে না পারে তাহলে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আক্ষেপ থেকে যাবে। এমনকি আগামী দিনে তাদের দেশপ্রেম জাগ্রত করতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে স্বাধীন চিন্তা-ভাবনায়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.